April 23, 2025, 2:55 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে রুপা পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি, ৪ মাসে উদ্ধার ১০২ কেজি রোববার পর্যন্ত আবহওয়ার খবর/চুয়াডাঙ্গাসহ চার অঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ছড়াবে অন্য জেলাতেও সরকারের প্রচেষ্টায় ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের পথ শীঘ্রই উন্মুক্ত হবে : রিজওয়ানা হাসান বেনাপোল কাস্টমসে ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৮ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় কুষ্টিয়ায় বিদ্যালয় থেকে নৈশপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার, হত্যা নাকি আত্মহত্যা নিশ্চিত নয় পুলিশ জানা গেল তত্ত্বাবধায়কের বিয়ে তাই কাঙাল হরিনাথের প্রয়াণ দিবসে ছিল না কোনো আয়োজন ! একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে ক্ষমতায় বসাতে গণঅভ্যুত্থান হয়নি : নাহিদ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৫ জেলায় এক কেজি ধানও পায়নি খাদ্য বিভাগ ! সীমান্তে মাদক সরবরাহ করতে এসে ৩ ভারতীয় আটক দর্শনায় পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ, দাফন হবে নিজ বাড়ি কুষ্টিয়ায়

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস/একটি বুদ্ধিবৃত্তিক বাংলাদেশ গঠন কতদুর

ড. আমানুর আমান, লেখক, গবেষক/ সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া/

দেশের মহান বুদ্বিধজীবীদের হত্যা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযদ্ধের ইতিহাসে  চরম মুল্যদানের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে ছিল আরেকটি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিসমাপ্তির খুব কাছাকাছি গিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ছিল দখলদার পাকিস্থানী বাহিনীর শেষ আঘাত।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড বলতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জুড়েই পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করাকে বুঝানো হয়ে থাকে। ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে পেরে যায় যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা আর সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অর্থাৎ সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে পেছনে ঠেলে দিতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। তবে ইতিহাসের নানা জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে দেখা যায় যে জুন মস থেকেইে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৪ ’র মধ্যে সবথেকে বেশী সংখ্যক এ মানুষদের হত্যা করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে চিলেণ লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, সকল পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, চলচ্চিত্র ও নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবী।
প্রেক্ষাপট/
পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র সৃষ্টিই ছিল অগণতান্ত্রিক এবং অবৈজ্ঞানিক। একটি সভ্য জাতির সাথে একটি অসভ্য জাতির মিলন। বাঙালীর এই ভূ-খন্ড যেখানে ছিল হাজার বছরের কৃষ্টি-সভ্যতার পাদপীঠ সেখানে পাকিস্তান ছিল একটি চরম অসভ্য জাতিসত্তার অধিকারী একটি অর্নুবর ভুমি। রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই বাঙালিদের বা পূর্ব-পাকিস্তানিদের সাথে পশ্চিম-পাকিস্তানের রাষ্ট্র-যন্ত্র বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। তারা বাঙালিদের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আঘাত হানতে আরম্ভ করে। ঘটনার পরিক্রমণে বাঙালির মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে এবং বাঙালিরা এই অবিচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করে। এ সকল আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতেন সমাজের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবীরা। তারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক-ভাবে বাঙালিদের বাঙালি জাতীয়তা-বোধে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফলেই জনগণ ধীরে ধীরে নিজেদের দাবি ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে থাকে যা পরবর্তীতে তাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত এই বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রেখেছিলেন রাখেন জাতির বিবেক। লেখকরা তাদেও লেখনির মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, শিল্পীরা গানের সুরে, শিক্ষকরা শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে এসে এই বুদ্ধিজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে জাতিকে জাগিয়ে রেখেছিলেন। আর এজন্যই একেবাওে প্রথম থেকেই এদেশের বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন।
হিসাব বলছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশে প্রায় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২২২ জনের একটি তালিকা করেছে সরকার।
বুদ্ধিজীবী হত্যায় ব্যক্তিবর্গ/
পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। আর তাকে তালিকা তৈরিকে সহযোগিতা ও হত্যাকান্ড বাস্তবায়নের পেছনে ছিল মূলত জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক গঠিত কুখ্যাত আল বদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক ছিল বদর বাহিনীর চৌধুরী মঈনুদ্দীন (অপারেশন ইন-চার্জ) ও আশরাফুজ্জামান খান (প্রধান জল্লাদ)। ১৬ ডিসেম্বরের পর আশরাফুজ্জামান খানের নাখালপাড়া বাড়ি থেকে তার একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করা হয়, যার দুটি পৃষ্ঠায় প্রায় ২০ জন বুদ্ধিজীবীর নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোয়াার্টার নম্বরসহ লেখা ছিল। এছাড়া আরো ছিলো এ বি এম খালেক মজুমদার (শহীদুল্লাহ কায়সারের হত্যাকারী), মাওলানা আবদুল মান্নান (ডাঃ আলীম চৌধুরীর হত্যাকারী), আবদুল কাদের মোল্লা (কবি মেহেরুন্নেসার হত্যাকারী) প্রমুখ। চট্টগ্রামে প্রধান হত্যাকারী ছিলো ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার দুই ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং গিয়াস কাদের চৌধুরী।
এদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডকে স্বাধীনতার ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমরা অনেকভাবে, অনেক ত্যাগ শিকার করে সেই অধ্যায় থেকে উতরাতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যে একাত্তরের সেই যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে। মানবতাবিরোধী হত্যা মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। জামায়াতের অপর নেতা মো. কামারুজ্জামান এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর হয়েছে।
২০১৬ সালের ১১ মে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দন্ড কার্যকর হয়। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের বিচার এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। চৌধুরী মইনুদ্দীন যুক্তরাজ্য এবং আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছে। তাদের ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
একটি বুদ্ধিবৃত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন কতদুর ?/
জাতি স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালনের দ্বারে। একই সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষ। আমরা দিন বদলের বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছি। সেদিন বাংলাদেশ নামক এই দেশ গঠনের পেছনে স্বপ্ন ছিল একটি শোষণমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, বৈষম্যহীন শ্রেণী শাসন কায়েম। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা সেই স্বপ্ন নিয়েই জাতিকে স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই জাতির সূর্য সন্তানদের সেই স্বপ্ন কতদুর ?
আমরা যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনের উপর রয়েছি তখন তাঁরই ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা হচ্ছে এ ভূমিতে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার সংগ্রামের কথা ভিন্নভাবে জাতির সামনে তুলে ধরার ঘৃণ্য কাজ করা হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জন্ম দেয়া হচ্ছে। একটি গোষ্ঠী সুযোগ পেলেই দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। খুন-হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন চালাচ্ছে। মুক্তমনা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
এ অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে ? শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে ন্যায়ভিত্তিক, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল, শোষণমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করেছিলেন। আত্মত্যাগ করেছিলেন তাদের আত্মত্যাগ তখনই স্বার্থক হবে, যখন আমরা তাঁদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারব।
দেশ এগিয়ে চলছে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আমরা প্রত্যাশা করি শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনার হাত দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net