দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার খোকসাতে প্রথাগত পাঠাবলির মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে ছয়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা। এ উপলক্ষ্যে শুরু হয়েছে ১৫ দিনের মেলা। মেলার উদ্ধোধন করেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ।
মেলায় ইতোমধ্যে ভীঁড় করেছে দর্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দ। নিরাপত্তার সকল ব্যবস্থা গ্রহন করেছে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ।
কালী পূজার ইতিহাস খোকসার ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা কোন সুদুর অতীতে শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস নেই। তবে সপ্তদশ ঊর্ধ্বতন পুরুষ রামাদেব তর্কলংকার এ পূজার প্রথম পূজারী ছিলেন। আর এ থেকে অনুমান করা হয় খোকসার কালীপূজার বয়স ছয়’শ বছর।
পূজারী শ্রী প্রবোধ কুমার ভট্রাচার্যের মতে, নানা ইতিহাস ও লোক কাহিনী শোনা গেলেও পুজার ইতিহাস ছয়শ’ বছরের বেশী হবে।
জানা যায়, এক তান্ত্রিক সাধু গড়াই নদীর তীরে খোকসা নামক এক জাতীয় গাছে বেষ্টিত জন মনুষ্যহীন জঙ্গলাকীর্ণ একটি স্থানে কালীপূজা আরম্ভ করেন। জমিদার নলডাঙ্গার রাজা ইন্দু ভুষণ দেব রায়ের জমিদার পুত্রকে সর্প দংশন করলে চিকিৎসার জন্য এই সাধকের কাছে নেওয়া হয়। রোগীকে কালীর পদতলে শুইয়ে দিয়ে সাধনার মাধ্যমে তাকে সুস্থ্য করে তোলেন সাধু। জমিদার কালীর প্রতি ভক্তি আল্পুত করে ও তান্ত্রিক সাধুর নির্দেশে সাড়ে সাত হাত দীর্ঘ কালী মূর্তি নির্মাণ করে মাঘি অমাবশ্যার তিথিতে এখানে প্রথম কালীপূজা আরম্ভ করেন। আর সেই থেকে খোকসার কালীপূজার সূত্রপাত।
বিশাল এক জোড়া বট ও পাকুর গাছ বেষ্টিত পূজা মন্দির। এখানে রাখা আছে নলডাঙ্গার রাজা ইন্দু ভুষণ দেব রায় কর্তৃক গড়াই নদী থেকে প্রাপ্ত কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ড। এটি বৌদ্ধ আমলের নিদর্শন। এ প্রস্তর খন্ডের গঠন অনেকটা চৌকির মতো। কৃষ্ণবর্ণের প্রস্তর খন্ডটিকে সারা বছরই পূজা করা হয়। ২৭ ইঞ্চি লম্বা, ৪ ফুট চওড়া পিতলের পাত দিয়ে তৈরী শিব ঠাকুর পূজার পাট আসন উলেখযোগ্য। আগের পূজা মন্দিরটি প্রমত্তা গড়াই নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া ১৩৪১ বাংলা সালে পূজা মন্দিরটি বর্তমান স্থানে সরিয়ে আনা হয়। বার্ষিক পূজা মন্দিরে প্রতি বছর মাঘী অমাবশ্যার তিথিতে সাড়ে সাত হাত লম্বা কালী মূর্তিসহ সাড়ে বার হাত দীর্ঘ মাটি ও খড় দিয়ে তৈরী কালীমূর্তি পূজান্তে বিসর্জন দেয়া হয়। এখানে নির্মান করা হচ্ছে নাট মন্দির। বার্ষিক পূজা ও মেলায় আগত পূজার্থী এবং দর্শনার্থীদের সাময়িক বিশ্রামাগার ও পূজা কমিটির কার্যালয়।
মন্দিরের সম্মুখে ভাগে রাস্তা এবং পশ্চিমে গড়াই নদী পর্যন্ত বিস্তৃত মাঠ। এটাই মেলাঙ্গন। প্রতি বছর একই তিথিতে প্রচলিত নিয়মে এ পূজা হয়ে আসছে। মাঘী আমাবশ্যার এক মাস আগে কদম কঠের কাঠমো তৈরী করা হয়। এ কাঠামোই খড় ও মাটি দিয়ে তৈরী মূর্তিতে বার্ষিক পূজা হয়ে থাকে। জমিদার আমলে এখানে এক মাসেরও অধিক সময় মেলা চলতো।
কালীপূজা শুরুতেই ক্রোধের প্রতীক মহিষ ও পাঠা বলির প্রথা চালু হয়। বার্ষিক পূজার দিনে প্রথম প্রহরে চন্ডী পাঠান্তে একটি পাঠা বলি দেয়া হতো। দিনের শেষ প্রহরে দেবিকে আসনে তোলার পর নড়াইলের জমিদার রতন বাবুদের পাঁচ শরিকের জন্য পাঁচটা পাঠা বলি অতঃপর নলডাঙ্গার রাজা প্রেরিত মহিষ বলি হত। এরপর শিলাইদহের জমিদারী ষ্ট্রেট এর সন্মানে জোড়া পাঠা বলি হত। মাঘী সপ্তমীর পূজা ও মেলা পর্যন্ত চলতো ভক্তদের মানসার জন্য আনা পাঠা বলি। ক্রোধের পথিক মহিষ ও পাঠা বলীর এ প্রথা সেই রাজা জমিদারী আমলের আদলেই আজও প্রচলিত রয়েছে।
এ বছর পূজা উপলক্ষ্যে মেলা প্রাঙ্গনে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। মেলার আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে উপজেলা প্রশাসন ও থানার পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দি লায়ন সার্কাস । কালিবাড়ি পূজা কমিটি জানিয়েছেন এই মেলা চলবে আজ থেকে আগামী ১৫ দিন ।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি