March 18, 2025, 6:59 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দক্ষিণ-পশ্চিমের দুটি বন্দর বেনাপোল ও ভোমরা দিয়ে শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ২৫ দিনে ভারত থেকে চাল আমদানি হয়েছে সাকুল্যে ৩৯ হাজার ৩২০ টন। সরকারি ঘোষণার এসময়ে আমদানির অনুমোদন ছিল ৩ লাখ ৯২ হাজার টন। ইতোমধ্যে গত ১২ ডিসেম্বর শুল্কমুক্ত চাল আমদানির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
দীর্ঘ দুই বছর পর এ বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে এ চাল আমদানি শুরু হয়। আমদানিকৃত এ সব চাউলের মধ্যে রয়েছে চিকন বাসমতি, মিনিকেট, মোটা স্বর্না, নুরজাহান এবং জামাইবাবু জাতের চাউল।
খাদ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারিভাবে ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে এ চাল আমদানির অনুমতি দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানে অনুকলে দুই লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং এক লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। চাল আমদানির সময়সীমা বেধে দেয়া হয় ২৫ দিন। এই সময়ের মধ্যে আমদানিকৃত চাল বাজারজাত করার জন্য বলে দেয়া হয়।
বেনাপোল চেকপোস্টের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদন প্রাপ্ত ৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মোট ৮টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেঁধে দেয়া সময় সীমার মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৩৩২০ টন চাল আমদানি করে। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান কোন চাল আমদানি করেনি।
অন্যদিকে, ভোমরা বন্দর দিয়ে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৬ হাজার টন চাউল আমদানি হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থল বন্দর হয়ে চাউলের প্রথম চালান আসে ভোমরা স্থল বন্দরে। সমুদয় চালের আমদানি মূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা।
বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, গত ১২ ডিসেম্বর রাত ১০ টা পর্যন্ত সর্বশেষ ১০৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। শুল্ক সুবিধার আরও কিছু চাল কয়েকদিনের মধ্যেই আসবে।
বন্দরের একটি সূত্র জানায়, শুল্ক সুবিধায় বাংলাদেশের অনেক আমদানিকারক ভারতে চাল আমদানির মৌখিক চুক্তি করে রেখেছে। তবে সরকার যদি পূনরায় শুল্ক সুবিধা দেয় তাহলে এসব চাল দেশে আসতে পারে। শুল্ক সুবিধা না পেলে আমদানিকারকরা এ চাল আমদানি করবে বলে মনে হয় না বলে জানায় সূত্রটি।
উত্তরবঙ্গের চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনালী এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, অন্যান্য বন্দরের পাশাপাশি ভোমরা বন্দর দিয়ে চাল আমদানি করছে তার প্রতিষ্ঠানটি। সরকারের নির্দ্দিষ্ট করা সময়ের মধ্যে সমুদয় চাল আমদানি করে নিয়ে আসা একেবারেই অবাস্তব ছিল।
এমন মত প্রকাশ করেছে দুটি বন্দরের একাধিক আমদানিকারক।
এদিকে, শুল্কমুক্ত চাল বাজারে আসলেও দামে কোনো প্রভাব পড়েনি বলে বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন। কুষ্টিয়া, যশোর ও সাতক্ষিরা সহ বিভাগের কয়েকটি জেলায় খোজ নিয়েঢ জানান যায়, বর্তমানে মোটা চাল ৫২, হীরা চাল ৪৮, উনপঞ্চাশ চাল ৫৬, আঠাশ চাল ৫৮-৬০, মিনিকেট ৬৪-৬৮, তেষট্টি চাল ৬৮-৭০, বাসমতি ৮০-৮৬ ও নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে সব ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে দু’ তিন টাকা বেশিতে। আমন ধানের অর্ধেকের বেশি কাটা হয়ে গেলেও দাম কমেনি বললেই চলে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি করা মোটা চাল বন্দর থেকে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকায়। ওই চাল পাইকাররা ৫৪ টাকায় বিক্রি করছেন। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। আর ভারতীয় টেন চাল ৫৮ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদরের ধান ও চাউলের সবচেয়ে বড় মোকাম ঝাউডাঙ্গা বাজারের ধান ও চাউল ব্যবসায়ী ফিরোজ হোসেন জানান, আমরা সারা বছর এখন থেকে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মোকাম গুলোতে চাহিদা অনুযায়ী দেশি জাতের চাউল সরবরাহ করে থাকি। তবে ভারত থেকে চাউল আমদানি শুরু হওয়ায় আমাদের বেচাকেনা কিছুটা কম। আশা করছি বোরো ধানের মৌসুমে বেচাকেনা বাড়বে।
ভোমরা স্থল শুল্ক স্টেশন রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বসর জানান, ভারত থেকে আনা চালের দাম সাতক্ষীরার বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব লুৎফর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, শুল্কমুক্ত চাল আমদানির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহন করবে।
Leave a Reply