দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বসন্ত উৎসব (বাংলা নববর্ষ), ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যশোরের গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা অঞ্চলের ফুলচাষিরা—যা দেশজুড়ে ‘ফুলের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত—চাহিদার বাড়তি চাপ সামলাতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একই সপ্তাহে পড়া এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত, যেখানে ফুল উদযাপনের অপরিহার্য অংশ।
বাংলাদেশ ফুল চাষি সমিতির প্রতিবেদন অনুসারে, যশোরে প্রায় ৭,০০০ ফুলচাষি ৭০০ হেক্টরের বেশি জমিতে ফুল চাষ করেন। গদখালী ও আশপাশের এলাকা দেশটির মোট ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০% সরবরাহ করে। এখানে সারা বছর ধরে ফুল চাষ করা হয়।
এলাকাটিতে অন্তত ১৩টি জাতের ফুলের চাষ হয়। জনপ্রিয় ফুলগুলোর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, গারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা ও গাঁদা।
চাষিরা জানিয়েছেন, চলতি বছর উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ফুলের দাম কিছুটা বেশি।
উৎসব সামনে রেখে ফুল বিক্রি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং চাষিরা ও বিক্রেতারা আশা করছেন, এই মৌসুমে ফুল বিক্রির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকায় পৌঁছাবে।
গোলাপ বরাবরের মতোই সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন ফুল। কয়েক দিন আগেও দেশীয় গোলাপ প্রতিটি ৫ থেকে ৬.৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল, তবে শনিবার থেকে দাম বেড়ে ৭ থেকে ১০ টাকায় পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয় চীনা গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ২৫ টাকা দরে।
চাষিরা অনুমান করছেন, ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসের কারণে দেশীয় লাল গোলাপের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। গত বছর এই ফুলের দাম ২২ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল।
গদখালী ইউনিয়নের কোঠাপাড়া গ্রামের চাষি গোলাম হোসেন এই বছর ২৫ কাঠা জমিতে গোলাপ ও এক বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, হলুদ গাঁদা প্রতি হাজার ৪০০ টাকা এবং লালচে-বাদামি গাঁদা প্রতি হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
পানিসারা ইউনিয়নের নারংগালি গ্রামের চাষি কিতাব আলী ১.৫ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। শনিবার তিনি ৭০০টি গোলাপ বাজারে নিয়ে গিয়ে প্রতিটি ৯ টাকা দরে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, “মাসের শুরুর দিকে গোলাপের দাম বেশ কম ছিল, তবে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়তে শুরু করেছে।”
গদখালী এলাকার টাওরা গ্রামের আবু বকর আলী ২৫ কাঠা জমিতে চীনা গোলাপ চাষ করেছেন এবং প্রতিটি ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
গদখালীর চাষি পিয়াস আহমেদ গ্ল্যাডিওলাস ফুল চাষ করছেন। তিনি প্রতিটি ৩ থেকে ৪ টাকা দরে বিক্রি করছেন এবং আশা করছেন, ভালোবাসা দিবসের আগে দাম ৮ থেকে ৯ টাকায় উঠবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কৃষি বিভাগ এই বছর চাষিদের জন্য জৈব কীটনাশক ব্যবহার ও ছায়া দেওয়ার মতো সহায়তা প্রদান করেছে।
এছাড়াও, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ফুলের বিকল্প ব্যবহারের উদ্যোগ নিচ্ছে, যেমন সুগন্ধি ও অন্যান্য ফুলভিত্তিক পণ্য তৈরির কাজ।
গদখালী ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর জানান, চাষিরা আসন্ন উৎসবের জন্য প্রস্তুত এবং তিনি আশাবাদী যে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
বাংলাদেশ ফুল চাষি সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অঞ্চলের ফুল শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। বিগত দুই বছর চাষিরা ফুল বিক্রি করতে হিমশিম খেয়েছেন, তবে এখন তারা ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন।
গত বছর বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল, আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিক্রির পরিমাণ ছিল ২০ কোটি টাকা।
এ বছর অনুকূল আবহাওয়া ও চাষের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ভালো হয়েছে। রহিম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “চলতি বছর বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ছাড়িয়ে যাবে এবং ৮০ কোটি টাকা ছুঁতে পারে।”
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি