দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে গড়াই নদীর উপর ২০২৪ সালে নির্মিত সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতুতে টোল আদায় স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে রোববার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে স্থানীয় শত শত শিক্ষার্থী, নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা।
সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে টোলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর ফলে সেতুর দুই পাশে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
অফিসগামী মানুষ, রোগী, শিক্ষার্থীসহ হাজারো সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেক যাত্রী যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তারা দুদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ তুলে নেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
জানা যায়, ২০০৪ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় গড়াই নদীর ওপর ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতু নির্মাণ করে সওজ। ২০০৫ সাল থেকে সেতুটি চালু হলে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় শুরু হয়। ২০২৪ সালের জুন মাসে সর্বশেষ ইজারা মেয়াদ শেষ হলে সওজ বিভাগ নিজেই ‘খাস আদায়’ পদ্ধতিতে দৈনিক প্রায় চার লাখ টাকা রাজস্ব তুলছিল। তবে সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা টোল আদায়ের প্রতিবাদে টোলপ্লাজায় আগুন দেয়। আদায়কারীরা পালিয়ে গেলে তখন থেকে টোল আদায় বন্ধ হয়ে যায়। ১৩ আগস্ট সওজ পুনরায় টোল আদায় করতে গেলে জনতার বাধার মুখে পড়ে এবং একাধিকবার হামলার শিকার হয়। নিরাপত্তার অভাবে কর্মকর্তারা সরে গেলে টোল আদায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। সওজ সূত্রে জানা যায়, আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
স্থানীয় নেতারা যা বলছেন/
কুমারখালী নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য কে এম আর শাহীন বলেন, ‘সেতুর নির্মাণ ব্যয় বহু আগেই উঠে গেছে। এরপরও টোল আদায় চাঁদাবাজির শামিল।’
উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন বলেন, ‘আর পকেট কাটতে দেওয়া হবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
আন্দোলনের আয়োজক, গণতন্ত্র ছাত্র সংসদের জ্যেষ্ঠ সংগঠক আলামিন হোসেন আকাশ বলেন, ‘আমরা টোল বন্ধের প্রজ্ঞাপন চাই। প্রশাসন দুদিন সময় নিয়েছে। সময়মতো সিদ্ধান্ত না এলে ডিসি অফিস ঘেরাও করা হবে।’
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া/
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, আন্দোলনকারীদের দাবি ঊর্ধ্বতন দপ্তরে জানানো হয়েছে। দুদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘জনগণের দাবির বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও সওজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, ‘দুই ঘণ্টার সড়ক অবরোধে দীর্ঘ যানজট হয়েছিল। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
এদিকে, প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী দুদিনের মধ্যে টোল আদায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না এলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা।
আমান/
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি