দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
রাজবাড়ীতে বেড়েছে পদ্মার পানি। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে ভাঙন। এরই মধ্যে নদীর তীরবর্তী বেশকিছু ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বহু স্থাপনা।
দৌলতদিয়া পয়েন্টে ৮ দশমিক ২০ মিটার পার হলে বিপৎসীমার ওপরে ধরা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পানি বৃদ্ধির মাত্রা একটু বেশি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সরজমিনে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া ও মুন্সিপাড়া বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে একটু পর পরই নদীপাড়ের মাটি ভেঙে পড়ছে। পাশেই পাট ও পটোলের খেত রয়েছে। সেগুলো ভেঙে যাচ্ছে।
পাউবো বলছে, এই ভাঙন স্বাভাবিক। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্রোত তীব্র হওয়ার কারনে কিছু এলাকায় আলড়া মাটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তারা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে ও সাথে রয়েছে উজানের ঢল।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, এক সপ্তাহের ভাঙনে গোয়ালন্দ উপজেলার কাওয়াজানি ও মুন্সিবাজার এলাকার কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা। অন্যদিকে ভাঙনের কারণে নদীর তীরবর্তী দেবগ্রাম ইউনিয়নটি কয়েক বছর ধরে ভাঙছে। ইতোমধ্যে ৪টি গ্রাম নদীতে মিশে গেছে। ইউনিয়নটি ছোট হয়ে এখন সাত গ্রামে পরিণত হয়েছে।
তারা জানাচ্ছেন, যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে এখনই পদক্ষেপ না নিলে হারাতে হবে শত শত ঘরবাড়ি, মুন্সিপাড়া মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেতু, কালভার্টসহ গ্রামীণ সড়ক।
গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের আব্দুল মালেক শেখের বসতভিটা এবার দিয়ে পাঁচবার ভেঙেছে। তিনি জানান, তিনি এখন ভুমিহীন। কাওয়াজানি গ্রামে সরকারি রাস্তার পাশে কুঁড়েঘর তৈরি করে বাস করছেন।
মনে চাপা ক্ষোভ আর ঘর হারানোর বেদনা নিয়ে পদ্মার পাড়ে মাঝেমধ্যেই বসে থাকেন আব্দুল মালেক। শুধু তিনি নন, একই অবস্থা হারুন মন্ডল, খলিলুর রহমান, হবিবুল্লাহসহ নদীপারের কয়েকশ বাসিন্দার।
্কই এলাকার হারুন মণ্ডল বলেন গত বছর তার পাঁচ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর বাকি তিন বিঘাও বিলীন। এখন বাকি আছে বসতভিটা। তাও মনে হয় রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’
পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গেইজ রিডার সালমা খাতুন জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধির পরিমাণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন রেইন গেইজ, ওয়াটার লেভেল গেইজ ও প্রেশার গেইজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পানির লেভেল রয়েছে ৬ দশমিক ৯৯ মিটার। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর পানি বৃদ্ধির মাত্রা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে।
পাউবো রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল আমীন জানান নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির অতিরিক্ত চাপের কারনে পদ্মাতে এবার প্রচুর বাঁক দেখা দিচ্ছে। যে পাশে বাঁক বেশী সে পাশেই ভাঙন দেখা দিচ্ছে।
তিনি জানান, এরই মধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই শুরু হবে কাজ।
সম্প্রতি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুই দফায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা উদ্যোগ নিচ্ছে। তিনি আশা করেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি