দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশে প্রতি চারজন নাগরিকের মধ্যে একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার—অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪ দশমিক ০৫ শতাংশ, যা সংখ্যায় প্রায় ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ। সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে প্রথমবারের মতো প্রণীত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
বহুমাত্রিক দারিদ্র্য কী?
এই দারিদ্র্য সূচক শুধু আয় নয়, বরং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমান–এই তিনটি প্রধান মাত্রায় নাগরিকদের বঞ্চনার নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যারা প্রয়োজনীয় শিক্ষা পাচ্ছে না, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অক্ষম, কিংবা মৌলিক জীবনধারণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত—তাদেরই এই দারিদ্র্যের আওতায় ধরা হয়েছে।
গ্রাম-শহরের বৈষম্য প্রকট
২০১৯ সালের তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত এই প্রতিবেদনে গ্রাম ও শহরের মধ্যে দারিদ্র্যের বড় ফারাক দেখা গেছে।
গ্রামীণ এলাকায় বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ,
শহরাঞ্চলে তা মাত্র ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
অঞ্চলভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশের পাঁচটি জেলায়—বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙ্গামাটি ও ভোলা—এই হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিভাগীয় পর্যায়ে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা সিলেট বিভাগে, যেখানে প্রায় ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ এই দারিদ্র্যে আক্রান্ত।
শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপদে
প্রতিবেদনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো শিশুদের অবস্থা।
২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হচ্ছে,
যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই হার ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
প্রতিবেদন উন্মোচন ও মতবিনিময়
ঢাকায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এমপিআই প্রতিবেদনটি উন্মোচন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জিইডি সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন।
আলোচনায় অংশ নেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক।
এই সূচক প্রণয়নে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউনিসেফ, অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই) এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
প্রয়োজন লক্ষ্যনির্দিষ্ট উদ্যোগের
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, এমপিআই কাঠামো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ১ বাস্তবায়নে আরও কার্যকর ও নিখুঁত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এমপিআই সূচক থেকে পাওয়া তথ্য জাতীয় নীতিমালা ও পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। পাশাপাশি আঞ্চলিক বৈষম্য চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট গবেষণা ও নীতিগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি