
শুভব্রত আমান/
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সাম্প্রতিক অর্থবছরে সামান্য কমে যাওয়া আমদানি সত্ত্বেও রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই বৃদ্ধি প্রমাণ করছে যে বন্দরের বাণিজ্যিক মূল্য ও রাজস্ব কার্যকারিতা উন্নত হয়েছে। তবে স্টেকহোল্ডারদের মতে, পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউসে উন্নীত হওয়ার পরও কমিশনারের অনুপস্থিতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম এখনও সম্পূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত দেশে ২৩ ধরনের দেশীয় পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সুতা, জুট ইয়ার্ন, রেডিমেড গার্মেন্টস, ফার্নিচার, মাছ ধরার জাল, মশারির নেট, তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, ট্রাভেল ব্যাগ, জুস, চিপস ও লিচু। বিপরীতে বাংলাদেশ ভারত থেকে খাদ্যপণ্য, নির্মাণসামগ্রী, পোশাক এবং কসমেটিকস আমদানি করে।
ভোমরা ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি পরিমাণ কমলেও বন্দর থেকে সরকার ঞশ ৯৭৮.৭৮ কোটি রাজস্ব আয় করেছে। আগের অর্থবছরে এই আয় ছিল ঞশ ৯০৭.৫৯ কোটি। এতে ৭.৮৪ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে, যা উচ্চমূল্যের আমদানি ও শক্তিশালী শুল্ক আদায়ের ইঙ্গিত বহন করছে।
রপ্তানির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ২২,৯৩৭টি গাড়িতে ২,৮৬,১৩০ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মূল্য দাঁড়িয়েছে ঞশ ৩,৪০৬.৯৫ কোটি। আগের অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ঞশ ৩,০৯০.৬৩ কোটি। এ হিসেবে রপ্তানি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১০.২৩ শতাংশ, যা বন্দরের ক্রস-বর্ডার বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা বলেন, কলকাতার নিকটবর্তী অবস্থান ভোমরাকে অন্যান্য স্থলবন্দরের তুলনায় লজিস্টিক সুবিধা দিচ্ছে। “এখানে রপ্তানি-আমদানি উভয়ই ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাথে সরকারের রাজস্বও বাড়ছে,” তিনি জানান।
তবে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উন্নতি সত্ত্বেও কাঠামোগত সমস্যা এখনও বিদ্যমান। অর্থ মন্ত্রণালয় ১৪ অক্টোবর ভোমরাকে পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউসে উন্নীত করলেও দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কমিশনার নিয়োগ হয়নি। ফলে বন্দরের কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও আমদানির বৈচিত্র্য অর্জন বাধাগ্রস্ত রয়েছে।
এদিকে, চাল আমদানি স্থগিত ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের হ্রাস বন্দরের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছে। দৈনিক ট্রাক চলাচল ২৫০–৩০০টি থেকে কমে প্রায় ১৫০টিতে দাঁড়িয়েছে, যার ফলে শত শত শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ হারিয়ে অর্থনৈতিক অসুবিধার মুখে পড়েছেন।
ভোমরা স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান খান জানান, ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে কিছুটা হ্রাস ঘটেছে। “বছরের বাকি সময়ে ঘাটতি পূরণ হবে বলে আশা করছি,” তিনি বলেন।
এদিকে, সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু হাসান কমিশনার নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেছেন। পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউস কার্যকর হলে আমদানির সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, বন্দর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান পুনঃস্থাপন হবে।
ভোমরা কাস্টমস হাউসের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম জানান, কাস্টমস হাউস উন্নীত হওয়ার পর আধুনিক ওয়্যারহাউস, ওপেন ইয়ার্ড এবং বাংলাদেশ-ভারত ট্রাক টার্মিনালসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, কমিশনারের সময়মতো নিয়োগ ও কার্যকরীকরণ বন্দরের পূর্ণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উন্মোচন করবে এবং ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি