
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন
দেশের সাতটি জেলার ওপর দিয়ে চলতি শীত মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারীতে এই শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি অন্তত আরও ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং শনিবার পর্যন্ত শীতের তীব্রতা বজায় থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় শীতের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কনকনে এই শীতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ ও ছিন্নমূলরা। জীবিকার তাগিদে ভোরের ঠান্ডা উপেক্ষা করেই ঘর ছাড়তে হচ্ছে তাদের। তবে কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে লোকসমাগম কম থাকায় অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, বর্তমানে জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা আরও কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি আরও বেড়েছে।
শীতের প্রভাবে স্বাস্থ্যখাতেও চাপ বাড়ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মাহাবুবুর রহমান মিলন জানান, শীতজনিত রোটাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি সবাইকে শীতকালে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন। শীতজনিত রোগ বাড়ায় হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে রোগীর চাপও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ঠান্ডার প্রভাবে জনসমাগম কমে গেছে। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষজন সড়কের পাশে খড়কুটো ও কাঠ জ্বালিয়ে নিজেদের উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইতোমধ্যে প্রায় আট হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এসব কম্বল প্রধানত ছিন্নমূল, দুস্থ, দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়। তবে শীতের তীব্রতা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় এবং শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কায় এই সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও ছয় হাজারের বেশি কম্বল বিতরণের জন্য বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা দ্রুত বিতরণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। তবে গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাগুলোতে এখনও অনেক শীতার্ত মানুষ পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের বাইরে রয়ে গেছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি ও খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী মানুষদের দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও বিত্তবান ব্যক্তিদের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করা হলে শীতার্ত মানুষের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব হবে এবং মানবিক বিপর্যয় এড়ানো যাবে।
এদিকে শুক্রবার সকালে আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, উল্লিখিত সাত জেলায় যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, সেটিই চলতি মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। এই পরিস্থিতি অন্তত ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে—৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীর বাঘাবাড়ি ও নীলফামারীর ডিমলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়।
শুক্রবার সকালে প্রকাশিত ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সারাদেশে আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে এবং আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এই সময়ে উল্লিখিত সাত জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকতে পারে। এতে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অনেক এলাকায় ঠান্ডার অনুভূতি অব্যাহত থাকবে। শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি