
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
খুলনা বিভাগের ৩৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ২৪৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়েছে নড়াইল-১ আসনে—১৪টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২টি করে মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়েছে মেহেরপুর-১ ও খুলনা-৩ আসনে। আর সবচেয়ে কম দুটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়েছে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, তফসিল ঘোষণার পর ১৪ ডিসেম্বর থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয় এবং ২৫ ডিসেম্বর বিকাল পর্যন্ত বিভাগের ৩৬টি আসনে মোট ২৪৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
আসনভিত্তিক হিসাবে মেহেরপুর-১ আসনে ১২ জন, মেহেরপুর-২ এ চার জন, কুষ্টিয়া-১ এ আট জন, কুষ্টিয়া-২ এ সাত জন, কুষ্টিয়া-৩ ও ৪ আসনে আট জন করে, চুয়াডাঙ্গা-১ এ চার জন ও চুয়াডাঙ্গা-২ এ দুই জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ঝিনাইদহের চারটি আসনে যথাক্রমে ছয়, চার, তিন ও নয় জন প্রার্থী মনোনয়ন নেন। যশোরের ছয়টি আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন ছয় থেকে ১১ জন পর্যন্ত প্রার্থী। মাগুরার দুই আসনে নয় ও সাত জন, নড়াইল-১ এ ১৪ জন ও নড়াইল-২ এ সাত জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বাগেরহাটের চারটি আসনে ছয় থেকে নয় জন এবং খুলনার ছয়টি আসনে চার থেকে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। সাতক্ষীরার চারটি আসনে তিন থেকে ছয় জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় উঠান বৈঠক, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ চলছে মিছিল-মিটিং। তবে এই চারটি আসনের প্রতিটিতেই বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াতের কোনো কোন্দল নেই, সব আসনেই একক প্রার্থী নেমেছে প্রচারণায়। জামায়াত নেতাকর্মীরাও মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছেন।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর): জেলার সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-১ সংসদীয় আসন। ১৪টি ইউনিয়নের এই সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৬ জন। স্বাধীনতার পর এই আসনে পালাক্রমে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল।
পরবর্তী সময় ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা আহসানুল হক মোল্লা পর পর তিন বার এই আসনে এমপি নির্বাচিত ও সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে এমপি হন তার ছেলে রেজা আহমেদ ওরফে বাচ্চু মোল্লা। ২০০৮ সালে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে যায়। আগামী নির্বাচনে এই আসনে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী দৌলতপুর শাখার আমির উপাধ্যক্ষ মাওলানা বেলাল উদ্দিন।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা): জেলার মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা মিলে কুষ্টিয়া-২ সংসদীয় আসন গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৮ জন। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। বাবার রেখে যাওয়া পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন এই তরুণ নেতা।
এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক কুষ্টিয়া জেলা শাখার নায়েবে আমির আলহাজ মো. আব্দুল গফুর। তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর): কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন ১৫টি ইউনিয়ন মিলে গঠিত। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৬ জন। এক সময় এই আসন ছিল বিএনপির দুর্গ। স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ন্যাপ ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ফের সরব হয়ে উঠেছে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সব দলের নেতাকর্মীর মধ্যে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। তিনি ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ আমলে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিলেন। মনে করা হচ্ছে, তিনি ভাল করবেন।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর চূড়ান্ত একক প্রার্থী হিসেবে শক্তভাবে মাঠে নেমেছেন ইসলামী বক্তা মাওলানা আমির হামজা।
কুষ্টিয়া-৪ (খাকসা-কুমারখালী): কুমারখালী ও খোকসা উপজেলা মিলে কুষ্টিয়া-৪ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৮ হাজার ৭০৪ জন। এককালে এই আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। এই আসনে তিন বারের নির্বাচিত এমপি ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে তিনিই পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন।
এই আসনে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থী হয়েছেন নায়েবে আমির মো. আফজাল হোসাইন।
খুলনা বিভাগের অন্যান্য আসনেও বিএনপি, জামায়াত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কার্যালয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত যাচাই–বাছাই চলবে। আপিল গ্রহণ করা হবে ১১ জানুয়ারি এবং নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে নির্বাচনি প্রচার, যা শেষ হবে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে—১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায়। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের ৩০০ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি