November 21, 2024, 12:28 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়াতে মোহিনী মিল বেঁচে থাকলে এ অঞ্চল উন্নতির চমে শিখরে পৌঁছে যেত। কারন অবিভক্ত ভারতের বস্ত্র শিল্পের ইতিহাসে এক বিশেষ অগ্রদূতের ভূমিকা রেখেছে তত্কালীন পূর্ব বাংলার নদীয়া জেলার কুষ্টিয়ায় স্থাপিত মোহিনী মিলস। ব্রিটিশ শাসনামলে উপমহাদেশের ইতিহাসে যে ক’টি বস্ত্রকলের নাম পাওয়া যায় মোহিনী মিলস তার অন্যতম। অন্যদিকে পূর্ব বাংলায় এ মিলের স্থানটি ছিল অনন্য উচ্চতায়। কারণ বঙ্গের পুরো ভূভাগে এই একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানই সে সময় গড়ে উঠেছিল। যদিও ইউরোপে ঘটে যাওয়া শিল্প বিপ্লবের ছোঁয়া থেকে দূরে ও অনেক পরে মিলটি স্থাপিত হয় তথাপি শুধু অর্থনৈতিক বিচারেই নয়, মিলটি পুরো বাংলা ভূখণ্ডের মর্যাদাকেই বৃদ্ধি করেছিল। এ মর্যাদা অখণ্ড ও আরো শক্তিশালী হয়ে দেখা দিয়েছিল যখন এ মিলেরই উৎপাদিত সুতা দিয়ে তৈরি ধুতি, শাড়ি, মার্কিন ও শালু কাপড়ের সুখ্যাতি ছড়িয়ে যায় ভারতজুড়ে।
আর এসবের পেছনে যার অবিস্মরণীয় ভ‚মিকা ছিল কিনি হলেন দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তী কানুবাবু। মোহিনী মিলের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় মোহিনী মোহন চক্রবর্তীর মৃত্যুর তার নাতি কানুবাবুর হাত ধরেই এটি চরম উন্নতি লাভ করে।
কানুবাবু ৫৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তী কানুবাবু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, কুষ্টিয়া এর আয়োজনে গতকাল (বুধবার) কুষ্টিয়া মহাশ্মশান মন্দিরে কানুবাবু স্মৃতি বেদীতে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
তারা বলেন ১৯২২ সালে মোহিনী মোহন চক্রবর্ত্তীর মৃত্যুর পর বড় ছেলের ছেলে (পৌত্র) দেবীপ্রসাদ চক্রবর্ত্তী (কানু বাবু) মোহিনী মিলসের দায়িত্ব নেন। তিনি মোহিনী মিলসকে কেন্দ্র করে মিলের শ্রমিকদের জন্য আধুনিক হাসপাতাল, খেলার মাঠ, নাট্যমঞ্চ নির্মাণ করেন।
তারা বলেন এ সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকাল হওয়া সত্ত্বেও মিলটি ৩৫.৬২ লাখ টাকা মুনাফা করে এবং ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ১৯৩৮-১৯৫৫ পর্যন্ত মিলটির গড় মুনাফা ছিল কমপক্ষে ১৩ শতাংশ। মিলটি এই সময়ে ছিল তার যাত্রার শীর্ষে। এ সময়ে মিলের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৬০ লাখ টাকা এবং সাবস্ক্রাইবড মূলধন ছিল ৫৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮১৮ টাকা। মিলের ছিল ৪৮ হাজার ৪৬০ স্পিন্ডল (সুতা কাটার টাকু) ও ৯৭৫টি তাঁত। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত লাভজনকভাবেই চালু ছিল। কিন্তু ১৯৬৫’র ভারত পাকিস্থান যুদ্ধকে কেন্দ করে পাকিস্থান সরকার মিলটি ধ্বংস করে দেন। যা আজও চালু না হওয়া দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন বক্তারা।
সকাল ১০ ঘটিকায় ঐশ্বর্য সরকারের পরিচালনায় ও অরুন বাগচী বাপ্পী পৌরহিত্যের ১৮জন গীতা পাঠক একত্রে সমবেতভাবে গীতাপাঠ, দুপুর ১২ ঘটিকায় দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তী কানুবাবু স্মৃতি বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়, ১২-৩০ ঘটিকায় দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তী কানুবাবু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক নিলয় কুমার সরকারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও গুনীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক লালিম হক,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও কুষ্টিয়া জজ কোর্টের এ্যাডঃ অনুপ কুমার নন্দী,কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার ঘোষ, বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক . ড. আমানূর আমান, কুষ্টিয়া মহাশ্মশান কমিটির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বপন কুমার নাগ, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া মহাশ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার দে।
বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিন্দ্র নাথ সেন প্রমূখ। আলোচনা সভা শেষে কুষ্টিয়ার ৪ জন গুনীজন কে কানুবাবু পদক প্রদান করা হয়।
Leave a Reply