November 21, 2024, 12:29 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রোববার (৯ জুন) রাষ্ট্রপতির আদেশে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আইন, ১৯৯৫ (১৯৯৫ সনের ১৫ নম্বর আইন)-এর ১১(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক পদে বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে তার যোগদানের তারিখ থেকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি উক্ত পদে কর্মরত থাকাকালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির প্রাপ্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্ত হবেন।
দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যান।
এর আগে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শপথ নেন।
১/ জন্ম ও পারিবারিক জীবন:
মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি। ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলায় রমানাথপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মলাভ করেন। তাঁর পিতা আব্দুল গফুর মোল্লা এবং মাতা নূরজাহান বেগম। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং তাঁর সহধর্মিনী মিসেস ডালিয়া ফয়েজ এর ঘর আলোকিত করে আছে দুই সুযোগ্যা কন্যা ফারিয়া ফয়েজ এবং ফারহা ফয়েজ। অত্যন্ত মেধাবি দুই কন্যার মধ্যে প্রথম কন্যা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং দ্বিতীয় কন্যা এলএলবি (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁর বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি
ছিলেন।
২. শিক্ষা/
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট উ”চ বিদ্যালয়, খোকসা, কুষ্টিয়া থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে সরকারি পি.সি. কলেজ, বাগেরহাট থেকে আইএসসি. পাস করেন। তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে ¯œাতক পাস করেন। অতঃপর তিনি ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৯ সালে ধানমন্ডি ল কলেজ থেকে তিনি এলএলবি পাশ করেন।
৩./ আইন পেশায় আত্মনিয়োগ:
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী (বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হতে সনদ প্রাপ্তির পর ঢাকা জেলা জজ আদালতে) এডভোকেট হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে যথাক্রমে ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবি হিসেবে অনুমতি প্রাপ্ত হন। একজন দক্ষ আইনজীবী হিসাবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, কুষ্টিয়া পৌরসভা এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আইন উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান আইন উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন
সফলতার সঙ্গেঁ।
৪./ সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক:
২০০১ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাইকোর্ট ডিভিশনের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ একই ডিভিশনের বিচারক নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে
নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
৫/. জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান:
৩০ এপ্রিল ২০১৫ সাল থেকে মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ অলংকৃত করে আসছেন। এই দায়িত্ব পালনকালে তাঁর নেতৃত্বে ৯ম থেকে ১৫তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৮৫৫ জন সহকারী জজ নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। পাশাপাশি ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে আরো ১০০টি সহকারী জজ পদ পূরণের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের প্রতিনিধি দলের থাইল্যান্ড ভ্রমণে মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন।
৬/ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্তি:
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদে আসীন হন। তিনি দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাংলাদেশের বিচার সংক্রান্ত কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি দূর্নীতিমুক্ত, শক্তিশালী ও গতিশীল বিচার ব্যব¯’া গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সময়োপযোগী সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
৭/ প্রধান বিচারপতির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত:
অসাধারণ যোগ্যতার একজন বিচারক মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগে বেশ কিছু যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তেমনি কিছু যুগান্তকারী রায়ের কথা আমরা এখানে উল্লেখ করছি, যেখানে তাঁর সূ²দর্শী বিচার সক্ষমতার প্রমাণক। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের উপর তাঁর ব্যাখ্যা, মতামত ও পর্যবেক্ষণে তাঁর এই সূ²দর্শীতা প্রতিভাত হয়েছে। যেমন-
ক্স যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ব্যাখ্যা
ক্স অন্তবর্তীকালীন জামিনের নীতিমালা
ক্স টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন প্যারেড (সর্বশেষ সূত্র)
ক্স চাকুরিতে আত্মীকরণ সংক্রান্ত
ক্স চেক ডিজঅনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
ক্স চাকরি থেকে স্বে”ছায় অবসর গ্রহণ এবং
ক্স ওয়াকফ সম্পত্তির মৌলিক নীতিমালা/নিয়ম কানুন
৮. ভ্রমণ ও আর্ন্তজাতিক সম্মেলণে অংশগ্রহণ:
২০১১ সালে শ্রীলঙ্কায় সাউথ এশিয়ান জাজেস রিজিওনাল ফোরাম (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক বিচারক ফোরাম) আয়োজিত ইকোনোমিক এন্ড ফাইনান্সিয়েল ক্রাইম বিষয়ক আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে যোগ দেন মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ ছাড়া ২০১২ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস কনফারেন্স, ২০১৫ সালে ভারতের নতুন দিল্লীতে অনুষ্ঠিত পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দেন। এসব সম্মেলনে তিনি বিভিন্ন দেশের বিচার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও আইনজ্ঞের সাথে সাক্ষাত করেন। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার প্রধান বিচারপতি, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি, থাইল্যান্ড সুপ্রিম কোর্টের সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক আদালতের গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তিবর্গ অন্যতম। ২০১৬ সালে ভারতের লাখনৌতে অনুষ্ঠিত ১৭তম আন্তর্জাতিক প্রধান বিচারপতি সম্মেলনে যোগ দেন মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ২০১৭ সালে চিনে অনুষ্ঠিত ২য় আসিয়ান জাস্টিস ফোরামেও যোগ দেন তিনি। এছাড়া ২০২২ সালে তিনি তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের ৬০তম বর্ষ পূর্তিতে আয়োজিত সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখানে তিনি তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. জটু আরসলান এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি
রেসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
Leave a Reply