July 16, 2025, 6:37 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বর্ষাকালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যশোর–খুলনা মহাসড়কের দুরবস্থা। সড়কের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত ও কাদা-পানি। এতে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং বাণিজ্যিক পরিবহন কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে মারাত্মক ব্যাঘাত। যদিও মহাসড়কের সংস্কারকাজ চলমান, কিন্তু অগ্রগতি খুবই ধীর।
যশোর-–খুলনা মহাসড়ক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্যিক রুট। এর এমন বেহাল দশা শুধু সাধারণ মানুষের যাতায়াতকেই নয়, পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকেই চরম ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত, টেকসই ও জবাবদিহিমূলক সংস্কার নিশ্চিত করা, যেন জনগণের কষ্ট লাঘব হয় এবং বাণিজ্যের গতিপথ আবার সচল হয়।
যানজটে নাকাল পরিবহন/
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলোকে ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। অনেক সময় একটি ট্রিপ শেষ করতেই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২–৩ দিন বেশি লাগছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘমেয়াদি এ দুরবস্থার প্রভাব পড়ছে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বাণিজ্যে। এসব জেলার স্থল ও নদীবন্দর ব্যবহার করে যে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন হয়, তার সিংহভাগই এই মহাসড়কের ওপর নির্ভরশীল। ফলে পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সরেজমিন চিত্র/
সম্প্রতি বসুন্দিয়া থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কে দেখা গেছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। টানা বর্ষণে সড়কের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য গর্ত ও কাদার স্তর জমে গেছে, যেখানে যান চলাচল কার্যত অচল। দুই প্রান্তেই প্রায় প্রতিদিনই লেগে থাকছে দীর্ঘ যানজট।
স্থানীয়দের ক্ষোভ/
স্থানীয়রা এই সড়ককে এখন ‘মরণফাঁদ’ বলে আখ্যায়িত করছেন। কৃষিজ মৌসুমে সার পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদনও হুমকির মুখে পড়েছে। প্রেমবাগ এলাকার বাসিন্দা আবদুস সবুর বলেন, “চার বছর ধরে উন্নয়নকাজ চললেও টেকসই কিছু হয়নি। একটি অংশ মেরামত হতেই আরেক অংশ ভেঙে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।”
ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “রূপদিয়া থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তায় শুধু গর্ত আর কাদা। এক্সেল ভেঙে গাড়ি উল্টে যাচ্ছে।”
আরেক চালক আনিসুজ্জামান পিযূস জানান, “একবার স্প্রিং ভেঙে ট্রাক কাদায় আটকে গিয়েছিল। পরদিন দুপুর পর্যন্ত তা সরানো যায়নি।”
বাণিজ্যিক ক্ষতি মারাত্মক/
নওয়াপাড়া গ্রুপের ম্যানেজার রাজু আহমেদ বলেন, “নওয়াপাড়া নদীবন্দর দিয়ে দেশের প্রায় ৭০% সার আমদানি হয়। কিন্তু রাস্তাঘাটের দুরবস্থায় ট্রাক মাল নিতে চাইছে না। এতে আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।”
নওয়াপাড়া সার, সিমেন্ট ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নূরে আলম বাবু বলেন, “সড়ক সংস্কার দ্রুত না হলে সার ও খাদ্যশস্য সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটবে। সময়মতো সার না পেলে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে, যা থেকে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
নির্মাণে বিলম্ব, প্রশ্ন মান নিয়েও/
২০১৭ সালে যশোর–খুলনা মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও পুনর্র্নিমাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যার কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালে। তবে নির্মাণের অল্পদিনের মধ্যেই বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ে, এবং পুনরায় সংস্কারকাজ শুরু হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কাজের মান ভালো হয়নি।
রাজীব হোসেন নামে এক বাসিন্দা বলেন, “২০২২ সাল থেকে সংস্কারকাজ চললেও কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও সড়ক ব্যবহারে কোনো স্বস্তি নেই।”
প্রকৌশলীদের ব্যাখ্যা ও প্রতিশ্রুতি/
সড়ক ও জনপথ বিভাগের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, “সড়কের মাটির গুণগত মান খারাপ এবং অতিরিক্ত ওজনের গাড়ির চাপের কারণে সমস্যা হচ্ছে। বুয়েটের পরামর্শে ঢালাই সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।” তিনি জানান, ৪ কিলোমিটার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, ২.৩ কিলোমিটারে কাজ চলমান এবং আরও আট কিলোমিটার ঢালাই হবে। পুরো প্রকল্প শেষ হতে দেড় বছর সময় লাগবে।
তিনি আরও জানান, যশোরের পালবাড়ি মোড় থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণে এরই মধ্যে ৩২১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এবং আরও ১৭২ কোটি টাকার কাজ চলমান।
Leave a Reply