July 16, 2025, 7:11 pm
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় মৃদু থেকে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ভবদহা এলাকায় আবারও জলাবদ্ধতার সমস্যার মুখে পড়েছে স্থানীয়রা। চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শতাধিক পরিবার বাড়িতে আটকা পড়েছে, ফসলি জমি ডুবে গেছে, পাশাপাশি মাছের খামারগুলো ভেসে গেছে।
জলাবদ্ধ এলাকা হচ্ছে: প্রেমবাগ, সুন্দলী, চালিস্তিয়া, পাইরা ইউনিয়ন ও নোয়াপাড়া পৌরসভা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে অভয়নগর উপজেলায় ১২৯ হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৫ হেক্টর আউস ধান, ৪৫ হেক্টর আমন ধান, ৫৮ হেক্টর সবজি এবং ১ হেক্টর মরিচের চাষ। এছাড়াও পাইরা, চালিস্তিয়া, শ্রীধরপুর, সিদ্ধিপাশা ও প্রেমবাগ ইউনিয়নের ২৮৪টি মাছের পোনা খামার ভেসে গেছে।
কোটা গ্রামের মাছ চাষী কামরুজ্জামান তোড়ফদার জানান, তার দুইটি খামার প্রায় ৩০০ বিঘা এলাকায় বিস্তৃত রয়েছে যা সম্পূর্ণ ডুবেছে।
“খামারে ছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ,” তিনি দুঃখভরে জানান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ভবদহায় জলাবদ্ধতা বারবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান নেই।
সমস্যার মূল কারণ হিসেবে drainage ব্যবস্থার অভাব এবং নদী ও জলাধারগুলো জমির সমতলেই অবস্থিত হওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে, যার কারণে স্বাভাবিকভাবে পানি নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না।
এইবার সংকট আরও বাড়িয়েছে মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার মাঝামাঝি বিল কেদারিয়ায় স্থাপিত এক অপরিকল্পিত চার ভেন্টের স্লুইসগেট।
এই স্লুইসগেটটি ২০০২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) টাইডেল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্পের আওতায় তৈরি হয়। এটি টেকা নদীর ওপর নির্মিত, যেখানে মুক্তেশ্বরী নদী, মশিয়াহাটী সীমানা খাল ও বেদভিটা খালের সংযোগস্থল রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় মূলত মুক্তেশ্বরী নদীর দুই পাড়ে, ভবদহা থেকে সুতিঘাটা-কামালপুর ব্রিজ পর্যন্ত ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন স্লুইসগেট ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও, একমাত্র চার ভেন্টের স্লুইসগেটটি টেকা নদীর মুখে নির্মিত হয়, যা এখন পানির প্রবাহে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানা যায়, সংকট মোকাবিলায় ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি জরুরি ভিত্তিতে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকায় চারটি ৩৫ কিউসেকের পাম্প বসানো হয়। এছাড়া ২১ ভেন্টের স্লুইসগেটে ১৪টি পাম্প এবং শ্রী নদীর একটি শাখায় ৯ ভেন্টের স্লুইসগেটে ৫টি বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যদিও পাম্পগুলো নিয়মিত চালানো হচ্ছে, স্থানীয়রা তাদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
স্থানীয়রা জানান, নদীর উত্তরা অংশ সংকুচিত ও গভীরতা কমে গেছে, আর অকেজো স্লুইসগেটের কারণে পানি পাম্পগুলোর কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, “সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধানে ৮১.৫ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ১৪০ কোটি টাকার প্রকল্প শুরু হবে, যা সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমবে।”
অপর দিকে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুফতিকুর রহমান ফোনে জানান, শতাধিক পরিবার এখনও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগে রয়েছে। বিষয়টি উচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং অনুমোদন মিললে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হবে।
সরকারি দায়িত্বশীলরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও অকেজো চার ভেন্টের স্লুইসগেটটি মেরামত বা অপসারণে এখনও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা চলমান সেচ প্রকল্পের বড় বাধা হয়ে আছে।
গত বছর ২২ এপ্রিল এবং ১০ নভেম্বর পদস্থ সরকারি পানি সম্পদ উপদেষ্টা সায়েদা রিজওয়ানা হাসান ভবদহা স্লুইসগেট পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পার্থ প্রতিম শীল বলেন, “প্রভাবিত পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণ দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। নদী, খাল ও জলাভূমিতে অবৈধ ফিশিং নেট, বেড়া বা ফাঁদ বসানোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।” তিনি আরও জানান, “পাউবো ইতোমধ্যে আমডাঙ্গা খালের পুনরুদ্ধারের কাজ সম্পন্ন করেছে।”
আমান/
Leave a Reply