July 16, 2025, 7:17 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
হাসিনার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তির সুরই প্রবল ভবদহ আবার প্লাবিত, শতাধিক পরিবার জলাবদ্ধ , ফসলি জমি ডুবে গেছে, মাছ ভেসে গেছে রাজবাড়ী, পাবনা, যশোরসহ ১৩ জেলায় এখনও শেষ হয়নি সারের বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্প বিষয়: জুলাই অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন নির্দেশনা দিয়ে মাউশির চিঠি কাদা–গর্তে নাজুক যশোর–খুলনা মহাসড়ক/দুর্ভোগে যাত্রী ও পরিবহন খাত, বেড়ে যাচ্ছে ট্রিপের সময় ২০৫০ সালের মধ্যেই বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হবে ভারত: পিউ রিসার্চ সেনা সদরের চিঠির অপব্যাখ্যা করা হয়েছে: আইএসপিআর প্রাথমিক থেকেই দুর্বল ভিত্তি/ অদক্ষ শিক্ষকতার দায়ে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়ায় অটোচালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা করে অটো ছিনতাই জনতা ব্যাংক সংক্রান্ত দুদকের মামলায় অধ্যাপক আবুল বারাকাত গ্রেপ্তার

হাসিনার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তির সুরই প্রবল

ডয়চে ভেলে অবলম্বনে । এপি প্রতিবেদন অনুসরণে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর এক বছর পার হলেও বাংলাদেশে বহুল প্রতীক্ষিত ঐক্যের পরিবর্তে রাজনৈতিক বিভক্তিই আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সংগঠিত গণআন্দোলনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদচ্যুত হন এবং পরে ভারতে পালিয়ে যান। অনেকেই তখন আশাবাদী ছিলেন যে, দেশে এক নতুন রাজনৈতিক সূচনা ঘটবে।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও শান্তি ফেরাতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্র্বতী সরকারের নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, সাংবিধানিক সংস্কার ও আইনের শাসনের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু এক বছর পর পরিস্থিতি দেখাচ্ছে ভিন্ন চিত্র— রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে, ধর্মীয় মেরুকরণ তীব্র হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে।
রাজনৈতিক বিভক্তি ও বিভ্রান্তি/
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্য সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে বিভাজনই গভীর হয়েছে। শেখ হাসিনাকে উৎখাতে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের একাংশ ‘ন্যাশনাল সিভিক পার্টি’ (এনসিপি) গঠন করে বিদ্যমান দুই বৃহৎ দল— বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাব বলয় ভাঙার অঙ্গীকার করে। তবে এনসিপিকে ঘিরে বিরোধীদের অভিযোগ, তারা ড. ইউনূসের প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে।
এদিকে, দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় থাকার পর জামায়াতে ইসলামি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে এসেছে। একসময় দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটি এখন নির্বাচনী মাঠে ফের সক্রিয় হয়ে পড়ায় রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও জটিল হয়েছে।
শেখ হাসিনা বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি এবং মে মাসে তার দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এই শূন্যস্থান দখলের লড়াইয়ে রয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি এবং অন্যান্য দল। বিএনপি ও জামায়াত আবারও বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনিক স্তরে প্রভাব বিস্তারে একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে।
নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে মতভেদ/
নির্বাচনের সময় ও সাংবিধানিক সংস্কারের মাত্রা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য বাড়ছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ‘ঐকমত্য কমিশন’ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি বাদে অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে। প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালু এবং বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতির সংস্কার।
বিএনপি ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন চায়, জামায়াত সংস্কারের জন্য আরও সময় চায়। এনসিপি কিছু ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থানের সাথেই সঙ্গতিপূর্ণ।
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, “যেখানে সংস্কার ইস্যু একটি ঐক্য গড়ে তোলার সুযোগ হতে পারত, সেখানে এটি এখন নতুন করে বিভাজনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
মানবাধিকার উদ্বেগ ও ধর্মীয় উত্থান/
অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়েছে এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ব্যর্থ বলে অভিযোগ উঠেছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে শত শত হামলার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘুরা।
অন্যদিকে, ইসলামপন্থী দলগুলো নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশ নিতে নারীর অধিকার হ্রাস এবং শরিয়া আইন বাস্তবায়নের প্রস্তাব তুলে ধরেছে। কেউ কেউ বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়ারও চিন্তা করছে।
কূটনৈতিক টানাপোড়েন ও বৈশ্বিক ভারসাম্য/
ড. ইউনূসের সরকার ভারতের চেয়ে চীনের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছে। ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর ছিল চীনে, যেখানে তিনি বিনিয়োগ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। অন্যদিকে, ভারত শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন হারানোর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কার্যত বন্ধ করে দেয় এবং হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঢাকা সরকারের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
পশ্চিমা বিশ্ব এবং জাতিসংঘ এখনও ইউনূসের সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ইউএসএআইডির তহবিল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্লেষক কুগেলম্যান বলেন, “বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে ‘ট্রাম্প ফ্যাক্টর’। এই প্রশাসন বাংলাদেশকে মূলত একটি বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখবে।”
উপসংহার/
সামনে জাতীয় নির্বাচন, তার আগে দরকার সর্বদলীয় ঐক্য ও জনগণের আস্থা। কিন্তু আপাতত বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে একটি অনিশ্চিত, বিভক্ত এবং সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণে মুখ্য হয়ে উঠছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net