December 3, 2025, 7:55 am

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা আজও স্থগিত রয়েছে। গতকাল (১ ডিসেম্বর) থেকে কর্মবিরতি চালানো হচ্ছে, যার কারণে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, গার্লস স্কুল এবং জেলা সদরের বাইরে কোনো বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাথমিক শিক্ষক জানান, সমিতির কেন্দ্রীয় নিদের্শ মেনে তারা কর্মবিরতী অব্যাহত রেখেছেন।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণে সরকারের কোনো কার্যকর অগ্রগতি না থাকায় তারা টানা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষা দ্বিতীয় দিনও বন্ধ রয়েছে, আর মাধ্যমিক স্তরে বার্ষিক ও নির্বাচনী উভয় পরীক্ষার কার্যক্রমও ব্যাহত হয়েছে। পরীক্ষাবর্জন, খাতা মূল্যায়ন স্থগিত এবং কর্মবিরতি অব্যাহত রাখায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
কিছু স্থানে প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করলেও সহকারী শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। অনেক কেন্দ্রেই পরীক্ষা দেরিতে শুরু হয়েছে, শিক্ষার্থীরা একে অপরের খাতা টানছিঁড় করছে। এর ফলে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দেশে বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সহকারী শিক্ষক অভিভাবকদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
অনেক বিদ্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, চার দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এখনও কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা হাতে পেয়েছে।
পরিসংখ্যান:
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৬৫,৫৬৯টি
মোট শিক্ষক: ৩,৮৪,৯৮১ জন (প্রধান শিক্ষক প্রায় ৩৫,০০০; বাকিরা সহকারী)
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী: ১,০৯,৮৫,৮১৫ জন (মোট শিক্ষার্থীর ৫৫.৭৩%)
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ৭২১টি
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী: ৫,৭১,৬৮১ জন
দুই স্তরের শিক্ষকদের দাবির কারণে সারাদেশের পরীক্ষার সূচি ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘমেয়াদি এই অবস্থায় শিক্ষাপঞ্জি কার্যক্রমও বিপর্যস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সব সরকারি ও বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্কুল-অ্যান্ড-কলেজের বার্ষিক, নির্বাচনী এবং জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে।
মাউশির অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং বিদ্যালয়ের প্রধানদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মকর্তার শৈথিল্য বা অনিয়ম ধরা পড়লে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের তিন দফা দাবি:
১. সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা
২. ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা দূর করা
৩. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা
মাধ্যমিক শিক্ষকেরা চার দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা, এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা এবং খাতা মূল্যায়নেও শিক্ষকরা অংশ নিচ্ছেন না।
প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল কাসেম মোহাম্মদ শামছুদ্দীন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর)ও পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে। তিনি বলেন, টানা তৃতীয় দিনের মতো সারাদেশে কর্মবিরতি চলছে। সহকর্মী শহীদ ফাতেমা আক্তারের আত্মত্যাগ এবং দুই শতাধিক শিক্ষকের রক্ত বৃথা যাবে না—এমন নীতি নিয়ে আন্দোলন চালানো হচ্ছে।