November 22, 2024, 12:49 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে অধিকতর গতি দিতে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অঞ্চলের অবদান আরো বাড়াতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-বনপাড়া মহাসড়কের ৯৯.৪২ কিলোমিটার অংশকে চার লেনে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্প চুড়ান্ত হলে বাস্তবায়নে ব্যয হবে ৯,৮৯৯ কোটি টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও পরিবহন খাতের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করবে, বাণিজ্য সম্প্রসারণ করবে এবং সংযোগ উন্নত করবে।
প্রকল্পটিতে মহাসড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা ভারী যানবাহন ও সাধারণ পরিবহনকে পৃথক নিরাপদ পরিসেবা প্রদানে সহায়তা করবে। একই সাথে যানজট ও দুর্ঘটনা কমানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনকে সহজ করবে এবং যাতায়াতের আরাম ও দক্ষতা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই “হাটিকুমরুল-বনপাড়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প: বনপাড়া-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ অংশ (প্রথম পর্যায়)” নামে প্রকল্প প্রস্তাব কমিশনে জমা দিয়েছে।
গত ১৫ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সুলেমান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।
সূত্রটি জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং সড়ক নির্মাণ ব্যয় সম্পর্কিত বিবেচনাগুলি বৈঠকে মূল্যায়ন করা হয়। কমিশন কিছু সংশোধনের সুপারিশ করেছে এবং এই সংশোধনীগুলি অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পটি পুনরায় জমা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০২৪ সালে প্রকল্প শুরু করার পরিকল্পনা করেছে, যার আনুমানিক বাজেট ৯,৮৯৯.৫৬ কোটি টাকা।
এই অর্থের মধ্যে, ৩,৪৭৩.৪২ কোটি টাকা সরকার থেকে, ৬,৪০৮.৫ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ থেকে এবং ১৭.৬৪ কোটি টাকা অনুদান হিসাবে আসবে। প্রকল্পটি ডিসেম্বর ২০২৯-এর মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, এটি দেশের উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ উন্নত করবে এবং প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিকে সংযুক্ত করবে। বনপাড়া-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর, যা বেনাপোল স্থলবন্দর, ভোমরা স্থলবন্দর, মংলা সমুদ্রবন্দর, সুন্দরবন এবং দর্শনা আইসিডি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিকে সংযুক্ত করে, ফলে নিরবিচ্ছিন্ন বাণিজ্য এবং দেশব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি চঊঈ বৈঠকে বিশদ আলোচনা করা হয়, বিশেষ করে যে অঞ্চলগুলি সর্বাধিক উপকৃত হবে সে বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়।
বর্তমান দ্বি-লেন সড়কটি দৈনিক গড়ে ১২,৪০৭টি যানবাহন বহন করে যা ভবিষ্যতের যানবাহনের চাহিদা মেটাতে অপ্রতুল, এজন্য চার লেনের সড়কের সুপারিশ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তাও প্রকল্পের বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, যা সড়ক থেকে ২০ থেকে ৩০ মিটার দূরে অবস্থিত।
বিস্তারের পরিকল্পনাগুলি রেল মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে যাতে কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, একজন কর্মকর্তা বলেন।
এই প্রকল্পের প্রথম বৈঠকটি ১৯ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ৬৬.৮২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য ৫,৫১৩.৯৮ কোটি টাকা এবং সময়সীমা জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে বনপাড়া থেকে লালন শাহ সেতু পর্যন্ত আরও ৩২.৬০ কিলোমিটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়, ফলে ব্যয় ১০,৬৫৯.০৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয় এবং সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৮ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে, সর্বশেষ চঊঈ বৈঠকে প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে ৯,৮৯৯ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এশীয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক তহবিলও প্রকল্পের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রস্তাবটিতে একটি আইটি এবং সিস্টেম স্থাপনের জন্য ৬৯.৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা কার্যকরী ডিজাইন এবং ব্যয় মূল্যায়নে সহায়তা করবে। কর্মকর্তারা প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং অর্থ বরাদ্দের বিস্তারিত বিবরণসহ আইটেম ভিত্তিক ক্রয় প্রক্রিয়ার সুপারিশ করেছেন। পরিকল্পনা কমিশন বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাজেট শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর জোর দিয়ে প্রকল্পের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের পরামর্শ দিয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন এবং অন্যান্য খরচের সঠিক মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থ মন্ত্রণালয় তুলনামূলক উচ্চ খরচ উল্লেখ করে ব্যয়ের পর্যালোচনার প্রস্তাব করেছে।
প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে উন্নততর মহাসড়ক দেশের প্রধান স্থল ও সমুদ্রবন্দরগুলির সাথে সংযোগ শক্তিশালী করবে, দ্রুত এবং কম খরচে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে সহায়তা করবে।
এই উন্নয়ন দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে বৃদ্ধি করবে এবং জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে বলে কর্মকর্তারা জানান।
Leave a Reply