December 22, 2025, 5:57 pm

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নে সামাজিক দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সহিংস বিরোধের অবসান ঘটেছে। র্যাব-১২ সিপিসি-১, কুষ্টিয়ার সক্রিয় তৎপরতা ও কঠোর অবস্থানের ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজানগ্রাম ইউনিয়নে সামাজিক প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে গ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে দুইটি বিরোধী গ্রুপে বিভক্ত ছিল। স্থানীয় বদরুল আলম আন্টু, মোজাম্মেল হক, ইলিয়াস জাবেদ ও একলাস উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং চয়েন মন্ডল, শরিফুল ইসলাম, আব্দুল হালিম ও ইয়ার আলীর নেতৃত্বে অপর একটি গ্রুপ গড়ে ওঠে। এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত কয়েক বছর আগে হলেও গত অক্টোবর মাস থেকে তা চরম আকার ধারণ করে এবং বারবার সংঘর্ষে রূপ নেয়।
দোকান বেচাকেনা, খেলাধুলা কিংবা তুচ্ছ সামাজিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে একে অপরের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো গুরুতর ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, সংঘর্ষকে আরও উসকে দিতে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে ভাড়ায় লোকজন এনে হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনায় বহু নিরীহ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়; কেউ সরাসরি হামলার শিকার হয়, আবার কেউ মিথ্যা মামলার বেড়াজালে পড়ে হয়রানির শিকার হয়।
ধারাবাহিক সহিংসতার প্রেক্ষিতে গত দুই মাসে উজানগ্রামের পক্ষে-বিপক্ষে ইবি থানায় জিআর নং ১৩৯/২৫, ১৪২/২৫, ১৫১/২৫, ১৫৪/২৫ ও ১৬৫/২৫—মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় এজাহারনামীয় ১৬৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়। এলাকার কিছু সুযোগসন্ধানী ও স্বার্থান্বেষী মহলের উসকানিতে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভুক্তভোগী হয়। এর ফলে পুরো ইউনিয়নে আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা ও সামাজিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল।
দিনের পর দিন চলতে থাকা এই বিরোধ ক্রমান্বয়ে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটায়। হামলা ও মামলার চাপে পড়তে থাকে এলাকার তরুণ প্রজন্ম; অনেকের শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে। নিরীহ মানুষজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকায় স্বাভাবিক সামাজিক জীবন কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে নিরীহ পরিবারগুলোকে নিরাপত্তা প্রদান, সামাজিক দলাদলি নিরসন এবং সহিংসতা দমনের লক্ষ্যে র্যাব-১২ সিপিসি-১, কুষ্টিয়া উজানগ্রাম এলাকায় তৎপরতা জোরদার করে। সহিংসতায় ইন্ধনদাতা ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে র্যাব স্পষ্ট হুঁশিয়ারি প্রদান করলে উভয় পক্ষের সামাজিক নেতৃবৃন্দ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেন।
পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষ আপোষ-মীমাংসায় পৌঁছায়। আপোষনামায় তারা অতীতের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া, সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তি বজায় রাখতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
দীর্ঘদিনের সহিংস বিরোধের অবসানে উজানগ্রাম ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এলাকাবাসী আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে আর কোনো প্রকার দলাদলি বা সহিংসতায় না জড়িয়ে সবাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলবেন।