March 12, 2025, 10:41 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ/প্রধান আসামি হিটু শেখ ৭ দিনের রিমান্ডে হত্যা চেষ্টাসহ দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো ইনুকে, কুষ্টিয়া কারাগারে প্রেরণ বাংলাদেশে সরকার বদলালে সম্পর্কে পরিবর্তন আসতে পারে: ভারতীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশে ভ্রমণে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরার সেই শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক, মেডিকেল বোর্ড গঠন বাংলাদেশে সকল সমস্যার সমাধানে গণতান্ত্রিক উপায়ে জোর ভারতের আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ/একটি জাতি যেভাবে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি পায় জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা মনিটরিং-এ নতুন টাস্কফোর্সের কমিটি পুনর্গঠন আবরার ফাহাদ ছিলেন ভারতীয় আগ্রাসনবাদী এদেশীয় স্বৈরাচার উৎখাত আন্দোলনের প্রথম শহীদ : আসিফ মাহমুদ ২৬ বছর পরও উদীচী হত্যাকান্ডের বিচার অধরা, যশোর ও কুষ্টিয়ায় নিহতদের পরিবারের আহাজারি

নির্মাণের চেয়ে উন্নয়নেই খরচ বেশি/ ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক : প্রতি কিলোমিটারে খরচ ৮৬ কোটি

দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
দেশে এখন মহাসড়ক নির্মাণের চেয়ে উন্নয়ন ও লেন বাড়াতে উন্নয়ন খরচ বেশি হচ্ছে। যে ব্যয় বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় বহুগুণ বেশী। কেন এমন হচ্ছে এর সদুত্তর তেমন জোড়ালো নয়।
একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটারে সার্বিক খরচ ৮৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী, ভারতে প্রতি কিলোমিটারে এই ব্যয় ১০ কোটি টাকা। আর চীনে তা গড়ে ১৩ কোটি টাকা।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, উইকেয়ার ফেজ-১ : ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন খরচের ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে। ঝিনাইদহ-যশোর সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার বিদ্যমান মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণে সার্বিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অনুমোদন পেলে চলতি বছর অক্টোবর থেকে আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৩ মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)।
এ দিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র বলছে, ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট (উইকেয়ার) প্রোগ্রামের আওতায় ২০২০ সালের ২৭ মে ৫০ কোটি ডলার ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংক ও সরকারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। ওই ঋণ ৩১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে এবং ১৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার এলজিইডির সড়ক উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোরের ঝিনাইদহ-যশোর অংশের ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করে এই করিডোরটির সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করা।
এ ছাড়া দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে বেনাপোল, ভোমরা ¯’লবন্দর ও মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়ে করিডোর, বিমসটেক রোড করিডোর ও সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) রোড করিডোরের সাথে যোগাযোগব্যব¯’ার উন্নয়ন করা। ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্য পৃথক লেন, ব্যস্ততম ¯’ানে ফ্লাইওভার নির্মাণ, স্মার্ট হাইওয়ে নির্মাণের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল (ওএফসি) এবং সড়ক ব্যব¯’াপনার জন্য ইনটেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম ¯’াপন করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।

প্রকল্পের মূল কাজ হ”েছ, ১৫১ দশমিক ৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, ১.৬৪৭২৯ কিলোমিটার ফ্লাইওভার একটি, ১৯৮ দশমিক ১২ মিটারের চারটি ব্রিজ, ১৯৮ দশমিক ১০ মিটারের ৫৫টি কালভার্ট নির্মাণ, ১২টি পথচারী ওভারব্রিজ, একটি ১০ মিটারের আন্ডারপাস। এ দিকে নির্মাণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন সুপারভিশনের জন্য ১ হাজার ৭৮৭ জনমাস পরামর্শক সেবা, ইনটেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেস এবং অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সিস্টেম ডিজাইনের জন্য ৯৩ জনমাস পরামর্শক সেবা, প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিট (পিআইইউ) সাপোর্টের জন্য ৩৬৬ জনমাস পরামর্শক সেবা, পুনর্বাসন কাজ বাস্তবায়নের জন্য ৫০৩ জনমাস এনজিও সেবা, ফেইজ-১ এর ডিজাইন রিভিউ এবং ফেইজ-৩ এর ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ডিটেইলড ডিজাইন প্রণয়নের জন্য ৪৩১ জনমাস পরামর্শক সেবা, পরিবেশগত ও সামাজিক ব্যব¯’াপনার জন্য ২৭৩ জনমাস পরামর্শক সেবা এবং অভ্যন্তরীণ অডিটের জন্য ৭২ জনমাস পরামর্শক সেবার প্রয়োজন হবে।
মন্ত্রণালয় প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলছে, ভোমরা-সাতক্ষীরা-নাভারন-যশোর-ঝিনাইদহ-বনপাড়া-হাটিকুমরুল অ্যালাইনমেন্টটি ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোরের গুর“ত্বপূর্ণ র“ট। যার দৈর্ঘ্য ২৬০ কিলোমিটার। ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণসহায়তায় ২৬০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ করিডোর উন্নয়ন করা হবে। করিডোরটিকে চারটি অংশে আলাদা করা হয়েছে। যার মধ্যে ভোমরা-সাতক্ষীরা-নাভারণ ৫৮ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া ৬৬ কিলোমিটার ও কুষ্টিয়া-বনপাড়া-হাটিকুমরুল ৮৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার।
চারটি অংশের মধ্যে ভোমড়া-সাতক্ষীরা-নাভারণ ও যশোর-ঝিনাইদহ অংশ উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক এবং ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া ও কুষ্টিয়া-বনপাড়া-হাটিকুমর“ল অংশ উন্নয়নে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণসহায়তা দেবে।
জানা গেছে, ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোরের মাধ্যমে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে বেনাপোল, ভোমরা ¯’লবন্দর ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের যোগাযোগ ¯’াপিত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালের কার্গো র“ট হিসেবে এই করিডোরটির অনেক গুর“ত্ব রয়েছে।
এ ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ সমাপ্ত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭ জেলার জনগণ এই করিডোরটির মাধ্যমে উপকৃত হবে। এ করিডোর ব্যবহার করে পরবর্তী সময়ে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত ও নেপাল এবং বুড়িমারি দিয়ে ভারত ও ভুটানের সাথে উপ-আঞ্চলিক সড়ক সংযোগ সহজতর হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তায় ঝিনাইদহ-যশোর পর্যন্ত সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার সড়ক সার্ভিসলেনসহ ছয় লেনে উন্নয়নের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রস্তাব করেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোরের ২৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ঝিনাইদহ-যশোর অংশের ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করা একটি অংশ। পরে বাকি তিনটি অংশ ধাপে ধাপে উন্নয়ন সহজ হবে। এ ছাড়া দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে বেনাপোল, ভোমরা ¯’লবন্দর ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়ে করিডোর, বিমসটেক রোড করিডোর ও সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) রোড করিডোরের সাথে যোগাযোগ সহজ হবে।
এ দিকে দেশের ভেতরে এর আগে ১৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে খরচ পড়েছে কিলোমিটারে ২১ কোটি টাকা। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে কিলোমিটারে ২১ কোটি টাকা। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আট লেন প্রকল্পে খরচ হয়েছে ২২ কোটি টাকা। রংপুর থেকে হাটিকুমর“ল চার লেনে খরচ পড়েছে ৫৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট চার লেন সড়কটির কিলোমিটারপ্রতি খরচ ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা। সেখানে ঝিনাইদহ-যশোর সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণে ব্যয় ৮৬ কোটি টাকার বেশি।
ভারতের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণ ব্যয় যুক্ত করে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারে ব্যয় গড়ে ৮ থেকে ৯ কোটি র“পি; যা বাংলাদেশের মুদ্রায় সাড়ে ৯ থেকে সাড়ে ১০ কোটি টাকা।
আর চীনের (২০১০-১৫) ১২তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট এক সমীক্ষা অনুযায়ী, সেখানে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে গড়ে ব্যয় ১৬ থেকে ১৭ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। তবে দুই লেনের মহাসড়ক চার লেন করতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয় ১০ কোটি টাকার কম।বিশ্বব্যাংক ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেছিল, বাংলাদেশে প্রকল্প প্রণয়নের সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ব্যয় ধরা হয়, পরবর্তী সময়ে সেই ব্যয় আর ঠিক থাকে না। সেটা বাড়ানো হয়। এর মধ্য দিয়ে শুর“ হয় দুর্নীতি। আর এভাবেই বাড়ে প্রকল্পের ব্যয়। এ কারণে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হয় বাংলাদেশে।
অবিযোগ উঠছে বাংলাদেশে যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা বড় সমস্যা। জমি অধিগ্রহণ ও মূল্য পরিশোধে দুর্নীতি হয়। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণকাজও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রথম দুর্নীতি হয় জমি অধিগ্রহণে। সেখানে জমির মালিককে কম মূল্য দিয়ে বেশি মূল্য সরকারকে দেখানো হয়। তার মতে, টেন্ডারে প্রতিযোগিতা না থাকা সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের জন্য মালামাল কেনার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়। এ ছাড়া এ দেশে কোনো প্রকল্পই সময়মতো শেষ হয় না। ফলে সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যয়ও পাল্লা দিয়ে বাড়ে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net