November 22, 2024, 7:31 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ভারতের কলকাতার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমিয়ে দিচ্ছে পদ্ম সেতু। এটি ঘটবে ভোমরা স্থলবন্দর হয়ে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। বাসন্তী হাইওয়ে হয়ে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা থেকে ভোমরায় পৌঁছে পণ্যবাহী ট্রাক। অপরদিকে, ঢাকার সঙ্গে ভোমরার দূরত্ব ৩০৫ কিলোমিটার। হিসাবে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৭৫ কিলোমিটার। খুলনা মহাসড়ক হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। মাঝে মধ্যে এর চেয়ে বেশি সময় লাগে। দুর্যোগকালীন ফেরি না পাওয়ায় নদীর পাড়ে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে আমদানি পণ্য নষ্ট হয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা।
পদ্মা সেতু চালুর পর কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দর হয়ে মাওয়া দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার দূরত্ব হবে ৩৩০ কিলোমিটার। খুলনা-গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে গেলে দূরত্ব কমবে ৪৫ কিলোমিটার। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে আগে যেখানে লাগতো ১০-১২ ঘণ্টা এখন লাগবে ছয় ঘণ্টা। সড়কপথে সময় বাঁচবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। ফেরিঘাটের দুর্ভোগ আর থাকবে না। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ ও পণ্যবাহী যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে সহজে ঢাকায় পৌঁছাবে।
এটা ভোমরা স্থলবন্দরকেও পাল্টে দিতে যাচ্ছে। সেখানে নতুনভাবে তৈরি হবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান। অবকাঠামোর উন্নয়ন হবে দ্বিগুণ। আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছে গেলে উৎপাদন খরচ কমে যাবে। বাজারে পণ্যের দাম কমবে। এ জন্য আশায় বুক বেঁধেছেন ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক এবং আমদানি-রফতানিকারকরা। বর্তমানে বন্দরে আমদানি-রফতানি কাজে জড়িত পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। প্রতিদিন বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায় দাঁড়ায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, দূরত্ব কমায় ছয় ঘণ্টায় কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছাবে পণ্যবাহী ট্রাক। সাতক্ষীরার সবজি, ফল ও মাছ দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। ফলে অর্থনীতির চাকা পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।’
ভোমরা স্থলবন্দরের ট্রাকচালক শফিকুল ইসলাম জানান ্একটি পরিবর্তন আসছে এই লাইনেও। তার মতে পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ।’
একই মত ভোমরা স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা তরিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর এই দুর্ভোগ লাঘব হবে। আমদানিকৃত পণ্য ঢাকায় পৌঁছে যাবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টায়। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমদানি-রফতানিতে খরচ কমে আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।’
ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, ‘কলকাতা থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে রয়েছে ভোমরা স্থলবন্দর। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিতে আগ্রহ কম ছিল ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিন ভারত থেকে ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে আসে। পদ্মা সেতু চালু হলে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য পাঁচ-ছয় ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাবে।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে গতি আসবে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে। বন্দরের কিছু উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। এখানে কাস্টমস হাউস প্রয়োজন। সেটি হলে সব পণ্য আমদানি-রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে।’
ভোমরা স্থলবন্দরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দরে আমদানি-রফতানি বাড়বে। রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে। সময় বাঁচবে, গড়ে উঠবে শিল্পায়ন ও উৎপাদনমুখী ব্যবসাকেন্দ্র। পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থ বাঁচবে। বদলে যাবে স্থলবন্দরের দৃশ্যপট। কমবে পণ্যজট।’
Leave a Reply