March 15, 2025, 4:07 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
যুগেরও বেশী সময়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবারও ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন মাগুরায় আছিয়ার পরিবারকে ‘পাকা বাড়ি’ করে দিবে জামায়াত বড়দের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়া যাবে না, ইউক্রেনকে ট্রাম্প মধ্য মৌসুমেই পড়তে থাকে দাম/ উৎপাদিত সবজির দামে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ উঠছে না প্রান্তিক কৃষকদের প্রফেসর আরেফিন সিদ্দিক আর নেই নির্মম ধর্ষণের শিকার মাগুরার সেই শিশুটি না ফেরার দেশে সামরিক কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়ল আরও ৬০ দিন জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল: মাহফুজ আলম যশোরে আলুর ফলন বেড়েছে, কৃষকরা ভাল করেছেন আলু বীজেও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত

৪৪ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়/ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার পরপরই দেশের প্রথম পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় এই ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর মহান সংসদে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় আইন ১৯৮০ পাস হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে সেই সময়টিতে কোন উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। একটি বৃহৎ এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চশিক্ষায় একটি সাধারণ বিশ^বিদ্যালয়ের দাবি করে আসছিল। দাবিটি পূরণ হয়। দুটি জেলার (কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ) মধ্যবর্তী স্থানে এই বিশ^বিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন হয়। তবে এখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকার অদুরে গাজীপুরে।
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুষ্টিয়ার মাটিতে ফিরে আসে। কুষ্টিয়াতে কার্যক্রম শুরু হয়। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টি ফিরে আসে ১৯৯২ সালে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি আজকের এই দিনে ৪৩ বছর পূর্ণ করে ৪৪ বছরে পা রাখলো।
কথা উঠতেই পারে এই সময়ে আসলে এই বিশ^বিদ্যালয় থেকে আমরা কি পেলাম, কি পাওয়া উচিত ছিল এবং একই সাথে কি প্রতাশা আমাদের সামনে রয়েছে। এটুকু বলতে পারি এই পথ চলার মধ্যে উচ্চ শিক্ষায় আমাদের অবদান রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা-গবেষণা, সংস্কৃতি-ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অর্জন এই পথচলাকে গৌরবান্বিত করেছে।
একটি অপেক্ষাকৃত গ্রামীণ পরিমন্ডলে অবস্থিত হবার কারনে আমাদের প্রতিমুহুর্তেই নানা প্রতিকুলতা মোকবেলা করে চলতে হয়। বলতে চাই সমস্ত প্রতিকূলতা মোকাবেলার মাধ্যমে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করে এগিয়ে চলেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ^বিদ্যালয়টির ৮টি অনুষদের ৩৬টি বিভাগে ১৩ হাজার ৪৬৮ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র ৮ হাজার ৭৬৩ এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৭০৫ জন। বর্তমানে ৪০৪ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৯৪ জন কর্মকর্তা, ১৩২ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৫৮ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ^বিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন।
এই বিশ^বিদ্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ২৬ হাজারের মতো শিক্ষার্থী শিক্ষা শেষ করে বের হয়ে গেছেন। প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম শেষ বিদায় নিচ্ছেন। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশে-বিদেশে তারা নানা কর্মকান্ডে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছে।
বিশ^বিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৫৯৯ জনকে পিএইচ.ডি এবং ৭৫৮ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। বর্তমানে ২৫০ জন পিএইচ.ডি এবং ৯৫ জন এম.ফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।
শিক্ষা -গবেষণা প্রসারে আমাদের শিক্ষকগণ নিরলসভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের ১৭ জন শিক্ষক স্থান পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২জন শিক্ষক ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়ে বিশেষ গবেষণা প্রকল্প অনুদানের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাঁরা ৬টি প্রজেক্টের আওতায় কাজ করবেন।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে।
এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ৪র্থ সমাবর্তন ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি ক্রীড়াক্ষেত্রেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভারোত্তোলন, ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী ইসরাত জাহান ইভা দুইবার দেশের দ্রæততম মানবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল প্রতিযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয় নয়বার, ফুটবল প্রতিযোগিতায় তিনবার ও অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়াও ভলিবল প্রতিযোগিতায় তিনবার রানার্স আপ এবং ক্রিকেটে তিনবার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ-এর ৩য় আসরের হ্যান্ডবল ফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩১-২২ গোলে এবং বাস্কেটবল ইভেন্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ৭৪-৬২ পয়েন্টে পরাজিত করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞের অংশ হিসাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। ৫৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় নয়টি দশ তলা ভবনের সবগুলোর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি ছাত্র ও দুটি ছাত্রী হল, একটি একাডেমিক ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য একটি, কর্মচারীদের জন্য একটি, নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের দ্বিতীয় বøক এবং নতুন প্রশাসন ভবন নির্মাণ।
দশতলা বিশিষ্ট আবাসিক হলগুলো নির্মাণ শেষ হলে একটি বৃহৎ অংশের শিক্সার্থীদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হবে। আশা করা হচ্ছে পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর হবে এবং নতুন-নতুন বিভাগ খোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া প্রশাসন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে অফিসসমূহ উন্নত হবে, শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানের মান বাড়বে এবং স্থান সংকট অনেকটাই নিরসন হবে।
প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টির মধ্যে ৫টি ভবনের উর্দ্ধমুখী স¤প্রসারণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে গাড়ি রয়েছে ৪৯টি। এর মধ্যে ৭টি এসি কোস্টার গাড়ি, নিজস্ব ডাবল ডেকার বাস ১টি, বড়বাস ১৩টি, নন-এসি মিনিবাস ৫টি। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স, পিক-আপসহ অন্যান্য ছোট গাড়ি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পরিবহন পুলে সর্বশেষ সংযোজিত নতুন ৩ টি বড় বাস ও ২ টি হায়েছে এসি মাইক্রোবাসের শুভ উদ্বোধন হয়েছে।
সকল প্রকার দূর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান বর্তমান প্রশাসনের। ইতোমধ্যে দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিকে সামনে রেখে দূর্নীতিরোধে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ ও এ বিষয়ে কর্মশালা করা হয়েছে। একই সাথে যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষাক্ষেত্র ও কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে যৌন নিপীড়ন বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে হলে-হলে যৌন নিপীড়ন বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনাসভা, তথ্য অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ, মনের স্বাস্থ বিষয়ে কর্মশালা, র‌্যাগিং বিরোধী সভা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, আন্তর্জাতিক সেমিনার, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি ইত্যাদি কার্যক্রম নিয়মিতভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন ধর্মতত্ব ও ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি যুগোপযোগী আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার একটি অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবেও এর বৃহৎ প্রেক্ষাপট রয়েছে। এটি এই মুহুর্তে এই বিশ^বিদ্যালয় দক্ষিণ-পশ্চিম জেলাগুলোর সবথেকে বড় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমাদের স্বপ্নও তাই অনেক বড়। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আগামী দিনগুলোতে আরো বেশী বেশী অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষার আরো বেশী আধুনিকায়ন, শিক্ষা-প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তন আমাদের লক্ষ্য। যার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সুদক্ষ কারিগর হিসেবে মানবিক গুণাবলীসমৃদ্ধ মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরির মহান ব্রত নিয়ে আমারা এগিয়ে চলছি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net