December 5, 2024, 10:57 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
অবশেষে সপ্তম দিনে প্রত্যাহার হয়েছে বেনাপোলের বাস ধর্মঘট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার সব বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
বেলাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, যে ইস্যূতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছির সেটা আপাতত সমাধান হয়েছে। বেনাপোল চেকপোস্ট স্থলবন্দর বাস টার্মিনাল থেকে এখন দুরপাল্লার সব পরিবহণের এসি বাস চলাচল করবে।
এদিকে, দেশের প্রধানতম স্থলবন্দর নিয়ে এ ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি অনাকাঙ্খিত। তাই এর একটি স্থায়ী সমাধান দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে এখন প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করছেন। এসব যাত্রী পরিবহনে প্রতিদিন অন্তত ১০০টি দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পূর্বে এই যাতায়াত ছিল ৮ হাজারের উপরে।
সূত্র জানায়, স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনালে এসি বাস প্রবেশ নিষিদ্ধ করায় ২২ নভেম্বর থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখে পরিবহন ব্যবসায়ী সমিতি। পরে ধর্মঘটে যোগ দেয় অন্য পরিবহণ মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনসহ কয়েকটি সংগঠন।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, বাংলাদেশ স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান তাকে বেনাপোল বন্দরের চেকপোস্ট পরিবহন টার্মিনাল খুলে দেয়ার জন্য জানিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এখান থেকে পুনরায় দুরপাল্লার সব পরিবহগুলো বন্দরের চেকপোস্ট টার্মিনাল থেকে চলাচল করবে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসন এবং বেনাপোল টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে ২২ নভেম্বর গভীর রাতে যাত্রীসহ দূরপাল্লার বাসগুলোকে কাগজপুকুর টার্মিনালে জোর করে নামিয়ে দেয়। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে কাগজপুরের দুরত্ব প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। এ ঘটনায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। বিশেষত: ভারতগামী যাত্রীদের কাছে টাকাপয়সা, পাসপোর্ট ও দামি জিনিসপত্র থাকে। ইজিবাইক বা ভ্যানে বন্দরে যাতায়াতে যাত্রীরা অনীহা প্রকাশ করে। এতে করে বাস যাত্রী পরিসেবা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এ নিয়ে মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় দূরপাল্লার সব বাস চলাচল।
সূত্র জানায়, এক দীর্ঘসময় ধরেই স্থলবন্দর ঘেঁষেই রয়েছে গড়ে উঠেছে টার্মিনাল। সারাদেশ থেকে পাসপোর্ট যাত্রীদের নিয়ে দুরপাল্লার গাড়ীগুলো এই টার্মিনাল ব্যবহার করে আসছে। তাদের যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দেড় শতাধিক বাস বেনাপোলে আসা যাওয়া করে।
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন ধীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল বন্দর এলাকা নিয়ে সীমাহিন দূর্ভোগ সহ্য করে আসছে।
জানা গেছে, দূরপাল্লার এই বাসগুলো যাত্রী নিয়ে সরাসরি বেনাপোল চেকপোস্ট আসে। চালকরা বাসগুলো চেকপোস্ট থেকে বাজার পর্যন্ত ঢাকা-কলকাতা মহাসড়কের দুধারে ৩-৪ লাইনে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা নামা করিয়ে থাকে।
অপরদিকে স্থলবন্দরে রপ্তানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক, বন্দর থেকে আমদানি পণ্য নিতে আসা খালি ট্রাক ও পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলোও মহাসড়কের দুপাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ কারনে পুরো বন্দর এলাকায় তীব্র যানজট নিত্যদিনের সমস্য। অন্যদিকে, বিপুল সংখ্যক যাত্রী পারাপার করতে বন্দর কতৃপক্ষের প্রতিদিনই হিমশিম খেতে হয়।
দীর্ঘ পরিকল্পনার পর বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে চার কিলোমিটার দূরে কাগজপুকুর নামক স্থানে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন টার্মিনালের নির্মাণ করে বেনাপোল পৌর কর্তৃপক্ষ, যা ২০২৩ সালের ৪ মার্চ উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু বাস টার্মিনাল নির্মাণের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও চালু করা যায়নি বাস টার্মিনালটি।
এই পরিস্থিতিতে গত ৭ নভেম্বর যশোর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসনের তত্বাবধানে পৌর বাস টার্মিনালের কার্যক্রম চালু করা হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বাড়ানো হয় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জনবল। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে আগত বাস ও মিনিবাস সমূহকে বাধ্যতামূলকভাবে বেনাপোল পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাজী নাজিব হাসান জানান, বেনাপোল পৌর এলাকায় যানজট নিরসনকল্পে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত ও শার্শা উপজেলার অক্টোবর মাসের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সে অনুযায়ী, বেনাপোল বাস টার্মিনাল অতিক্রম করে কোনো বাস বেনাপোল পৌর এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না (আন্তঃদেশীয় তিনটি বাস ব্যতীত)।
তিনি আরও বলেন, নতুন পৌর বাস টার্মিনালের নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন, নারী-পুরুষের জন্যে পৃথক নামাজের স্থান, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্যে কর্নার সবকিছুই রয়েছে। তাছাড়া, অপশনও দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। পাসপোর্টযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা চেকপোস্টে যাত্রী নামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাস টার্মিনাল চালু করার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় বন্দর সংশ্লিষ্ট অনেক সংগঠন।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, উদ্যোগটি শুভ ছিল। কারন যানজটের কারণে সকালে পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো লোড হলেও বেনাপোল বন্দর ছাড়তে ছাড়তে রাত হচ্ছিল। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।
যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু বলেন, ‘ চেকপোস্টে ভেহিক্যাল টার্মিনাল চালু হওয়ার কমে গেছে গাড়ির জট। তার দাবি, বাস চলাচলে কোনো যানজট হয় না। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী খালি ট্রাক একলাইনে না রেখে পাশাপাশি ৩-৪টি করে রেখে রাস্তার একপাশ পুরোটা দখল করে রাখার কারনে যানজটের সৃষ্টি হয়। তিনি প্রশাসনকে এটা দেখতে বলেন।
বিভিন্ন মহল মনে করেন এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। তারা বলছেন একসময় এটি একটি পুরো সিস্টেমকেই বিপদে ফেলে দেবে।
বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা ব্যবস্থাকে কেউ ভাঙতে চাইছে না। বন্দরের পরিসেবা বাড়াতে হলে টার্মিণালকে সেখান থেকে আজ হোক কাল হোক সড়াতেই হবে।
বেনাপোল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান জানান, আমরা উন্নয়ন চাইছি, কিন্তু উন্নয়নের শর্তগুলো মানতে চাইছি না। তিনি বলেন, সরকার যে উদ্দেশ্যে অনেক টাকা ব্যয় করে একটি সুন্দর টার্মিনাল তৈরি করল অথচ তার উপযোগীতা তৈরি হলো না। এটা উন্নয়ন নয়, উন্নয়নে বাধা। তিনি প্রশাসনকে সব পক্ষের সাথে বসে ভাল ও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আহবান জানান।
Leave a Reply