August 2, 2025, 6:56 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলইন/
দেশের বহুমুখী উৎপাদন শিল্পের মালিক কুষ্টিয়ার নাসির উদ্দিনের মালিকানাধীন নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে প্রায় ১৪ দশমিক ৬৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নাসির গøাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দেশের ান্যতম বৃহৎ গ্লাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের কারখানা নগর হাওলা (জৈনাবাজার), শ্রীপুর, গাজীপুর এ অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি ৮৫ সোহরাওয়ার্দী এভিনিউ, বারিধারা, ঢাকা-১২১২ এ নিবন্ধিত। এর ভ্যাট নিবন্ধন নং-০০১২২৫১৬৪-০১০৩।
ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মাহিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি দল ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত তদন্তটি পরিচালনা করে।
প্রতিষ্ঠানটির দাখিলকৃত সি.এ ফার্ম কর্তৃক প্রদত্ত বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিল থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের যাচাই ও পর্যালোচনা করে মামলার প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তকালীন প্রতিষ্ঠানের আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন তথ্যাদি ও বক্তব্য আমলে নেয়া হয়েছে।
ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সিএ ফার্ম কর্তৃক প্রণীত অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে ভ্যাট এর হিসাব অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি ২,০৯,০৯,৮৩৩ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় মূসকের পরিমাণ ছিল ৫,২৯,১২,৯৩৮ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৩,২০,০৩,১০৫ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে এক কোটি ৫২ লাখ দুই হাজার আটশ’ ৩৪ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে দেখা যায়, নাসির গ্লাস প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকিতে জড়িত হয়েছে।
তাছাড়া তদন্ত মেয়াদে প্রদেয় ও চলতি হিসাবের পার্থক্য, সোডিয়াম সালফেট অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, প্রাকৃতিক গ্যাস অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, বিজ্ঞাপন অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, মিক্সার গ্যাস অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, উপকরণ মূল্য সাড়ে সাত শতাংশ এর অধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় রেয়াত কর্তন, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে রেয়াত কর্তন, ঘোষণায় করযোগ্য মূল্যভিত্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় রেয়াত কর্তন এর কারণে প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। অধিকন্তু, আমদানি পণ্য (স্পেয়ার পার্টস) ক্রয় রেজিস্টারে এন্ট্রি না করে খোলা বাজারে বিক্রি করায় রাজস্ব বাবদ প্রতিষ্ঠানটি কোন ভ্যাট পরিশোধ করেনি।
এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত মূসক বাবদ আট কোটি এক লাখ ৭৯ হাজার ১৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির উপর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে এক কোটি ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ২২০ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য।
তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট অপরিশোধিত মূসক এর পরিমাণ ১১ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার একশ’ ১৯ টাকা এবং সুদ বাবদ ৩ কোটি ৪৪ লাখ ২ হাজার ৫৪ টাকাসহ ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৪ হাজার একশ’ ৭৩ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।
তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত মূসক আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণসহ মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। একইসাথে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরো মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
Leave a Reply