July 28, 2025, 11:56 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
যদিও এ অভিযোগ নতুন নয়, তারপরও বাংলাদেশে এবার বোরো মৌসুমে ইতিহাসের সর্বোচ্চ চাল উৎপাদন এবং বিপুল চাল আমদানি সত্ত্বেও গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ১১% থেকে ১৬% পর্যন্ত।
এই মূল্যবৃদ্ধি সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে আরও দুর্ভোগ ডেকে আনছে, যাদের আগে থেকেই চলমান জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ভালো মানের চালের দাম বেড়েছে ১৫.৯৪%, মাঝারি মানের চাল ১৬.০৭% এবং মোটা চালের দাম ১০.৫৮% বেড়েছে।
শুধু গত দুই মাসেই চালের দাম ধাপে ধাপে বেড়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত “জুলাই ২০২৫ ইকোনমিক আপডেট” অনুযায়ী, মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান যেখানে ছিল ৪০%, জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০%-এ। শুধু মাঝারি মানের চালই একা ২৫% অবদান রেখেছে।
এত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে রেকর্ড পরিমাণ বোরো উৎপাদন ও চাল আমদানির পরেও, ফলে বাজার কাঠামো ও সরবরাহ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রেকর্ড উৎপাদন—তবুও দাম বাড়ছে/
চলতি বছরে বাংলাদেশ বোরো ধানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানায়, ৫০.৪৬৫ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে এবং চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২২৬.০০২ লাখ টন।
কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ১৫ লাখ টন বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। তবুও কৃষক বা ভোক্তা কেউই উপকৃত হচ্ছে না। কৃষক ধান বিক্রি করে ফেলেছেন, এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা—ফলে দাম বাড়ছে।”
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “কৃষকের কাছে এখন ধান নেই। চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের হাতেই অধিকাংশ ধান চলে গেছে। তারা দাম আরও বাড়বে এমন ধারণায় ধান মজুত করে ধীরে ধীরে বাজারে ছাড়ছেন।”
তিনি সতর্ক করেন, “সরকারের মজুত মাত্র ১৪ লাখ টন চাল ও ধান মিলিয়ে। অথচ ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে ১ কোটির বেশি টন। এ জন্যই তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।”
দাম নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সরকার/
সরকার বলছে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, তবে এখনো পর্যন্ত চালের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৩.০৫ লাখ টন চাল আমদানি করেছে, যা ঋণ১৮ সালের ৯৭.৭৪ লাখ টনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি।
গত কয়েক অর্থবছরের আমদানি চিত্র বিচিত্র:
২০২৪: কোনো আমদানি হয়নি
২০২৩: ৬.৩৩ লাখ টন
২০২২: ৬.৮৩ লাখ টন
২০২১: ৫.৭২ লাখ টন
২০২০: কোনো আমদানি হয়নি
২০১৯: মাত্র ৬৫,৩৮৩ টন
তবুও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। “জুলাই ২০২৫ ইকোনমিক আপডেট” অনুযায়ী, চালের উৎপাদন খরচ যেমন সার, বীজ, সেচ, শ্রম ইত্যাদি বেড়েছে; ফসল তোলার পর ২৬% পর্যন্ত ক্ষতি হয়; পরিবহন খরচ বেশি; আর বাজার অস্থির থাকায় ব্যবসায়ীরা চাল মজুত করে রাখছে—এসবই মূল্যবৃদ্ধির কারণ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আসলেই চালের ঘাটতি আছে কিনা, নাকি সরবরাহব্যবস্থায় গড়বড় হচ্ছে—তা তদন্ত করা জরুরি।
একে অন্যকে দায় দিচ্ছে সবাই/
খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীরাও চালের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করছেন।
মিরপুর ১৩ নম্বরের মতলব ট্রেডার্সের মো. পলাশ বলেন, ৫০ কেজির মোজাম্মেল মিনিকেট চালের বস্তা ১ জুনে ছিল ৩৭০০ টাকা, ২১ জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০২০ টাকায়। রশিদ ব্র্যান্ডের দাম বেড়েছে ৩৩০০ থেকে ৩৪৮০ টাকা, ইজ-২৮ চাল ২৬৮০ থেকে ২৮৫০ টাকা, পাইজাম চাল ২৭৫০ থেকে ২৯৮০ টাকায় পৌঁছেছে।
নওগাঁ রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারহাদ হোসেন চাকদার বলেন, “পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে গঠিত একটি কর্পোরেট সিন্ডিকেটই এর জন্য দায়ী। ধানের বাজারদর বাড়ায় চালের দামও বেড়েছে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে আউশ ও আমন মিলিয়ে ৩ লাখ ২১ হাজার টন কম উৎপাদন হয়েছে আগের বছরের তুলনায়। শুধু আউশ ধানের উৎপাদনই কমেছে ৬%।
তবে চূড়ান্ত বোরো উৎপাদনের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি বিবিএস, যদিও প্রাথমিক হিসাব বলছে এবার রেকর্ড হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিনের উচ্চ মূল্যস্তর প্রমাণ করে যে বাজারে সরকারি হস্তক্ষেপ কার্যকর নয়।
ড. খান বলেন, “সরকারের যথেষ্ট মজুত থাকলে বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারত। কিন্তু তা না থাকায় ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং অতি মুনাফা করছে।”
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান থেকে অনুদিত/
Leave a Reply