October 15, 2025, 10:32 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
আওয়ামী আমলের প্রশাসনের বিরুদ্ধে উঠা তিন অভিযোগ নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুদক সব সরকারি কলেজে শিক্ষকদের কর্মবিরতি, পরীক্ষাও স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত স্পিরিট পান করে ৬ জনের মৃত্যু, ৩ জন হাসপাতালে দৌলতদিয়া/ ঘন কুয়াশার কারণে বন্ধ হওয়া ঘাট ৩ ঘন্টা পর স্বাভাবিক অনলাইন জুয়া সম্রাট লিপু সহযোগীসহ সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তার, মেহেরপুরে আনা হবে, এসপি নাম আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন হেফাজতে: সেনাসদর আগামী চার দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বাংলাদেশে ‘বিতর্কিত’ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ দৌলতপুরে আলোচিত শুটার লালন গ্রেপ্তার ১০৭ টনেই শেষ বাংলাদেশ-ভারত ইলিশ রপ্তানি

করনাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য/কিছু নিয়ম অবশ্যই মানুন

ডা. আফিয়া শারমিন/
গোটা বিশ্বজুড়ে আজ করনার আতঙ্ক বিরাজমান। পুরো পৃথিবীই আজ ভীষণ ভাবে অসুস্থ। আচ্ছা, ঠিক কতদিন আগে সবাই একটু বুক ভরে শ্বাস নিয়েছিল ? খোলা জায়গায় বাচ্চারা ছুটোছুটি করেছিল ? বাড়ির বড়রা খবর দেখে আতঙ্কিত হয় নি? ঠিক কতদিন আগে মানুষ একটু স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছিল?
এই ক্রান্তিকালে সবাই ই অধীর আগ্রহে আছে, এই বুঝি একটু আশার আলো দেখতে পাবে, এই বুঝি মৃত্যুর মিছিলে সংখ্যার ঘাটতি হবে।কিন্তু প্রতিবার ই মানুষকে হতাশ হতে হচ্ছে। সাধারন মানুষের মন এখন সবসময় অসংখ্য আশঙ্কায় আচ্ছন্ন। আক্রান্ত হবার আশঙ্কা , প্রিয়জন হারাবার আশঙ্কা, জীবিকা হারাবার আশঙ্কা, কোনদিন ও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারার আশঙ্কা। এই অসহায়ত্ব এর মূলে আছে এই সত্য টা , যে এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এই চরম দুঃসময়ে কোন জিনিসটা এখন আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং কোনটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জানেন?

আপনার মনোবল এবং আপনার মানসিক স্বাস্থ্য।
এই করোনা কালীন সময়ে কিভাবে নিজেকে সামলাতে পারেন চলুন একটু দেখা যাক।

১/ পরিস্থিতি টা কে মেনে নিন ।আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে । এক্ষেত্রে অসাবধানতার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। ‘আমি তো অনেক সাবধান আমার হবে না’ এটা ভাবার সুযোগ নেই। এরকম ধারনা রেখে দিলে যে সমস্যা টা হয় যে ভবিষ্যৎ এ আক্রান্ত হয়ে গেলে সেটা আরউ বেশি মানসিক বিপর্যয় এর কারন হয়ে দাঁড়ায়। কারন তখন আমরা হুট করে এই কঠিন সত্য যেটাকে এতদিন হালকা ভেবে বসেছিলাম সেটাকে মোকাবেলা করার শক্তি টা আমরা পাব না, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ব যার কুফল হচ্ছে সঠিক সময় এ সঠিক কোন সিদ্ধান্ত ই আমরা নিতে পারব না। সুতরাং সত্য কে মেনে নিন। আপনি ঘরে বন্দী নন, আপনি ঘরেই মুক্ত আছেন। বাইরে পুরো পৃথিবী টা ই বন্দী। যে সত্য আপনার নিয়ন্ত্রণ এ নেই সেটাকে মেনে নিন ।

২/ যদি আপনি বা বাসার কেউ আক্রান্ত হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে আপনার করনীয় কি কি থাকতে পারে তার পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখুন। একটি থার্মোমিটার, একটি বিপি মেশিন, একটি পালস অক্সিমিটার বাসায় রাখার ব্যবস্থা করুন। নিকটস্থ কোথায় টেস্ট স্যাম্পল দিতে হবে জেনে রাখুন।হট লাইন নম্বর গুলো গুছিয়ে রাখুন, টেলি মেডিসিন সুবিধা এর প্রক্রিয়া জেনে রাখুন। অবস্থা খারাপ হয়ে গেলেউ একটি এম্বুলেন্স এর নিশ্চয়তা রাখতে পারেন কিনা দেখুন। সব ব্যবস্থা আগে থেকে গুছিয়ে রাখলে দুশ্চিন্তা অনেকটা ই কমাতে পারবেন।

৩/ সত্য কে তো মেনে নিলেন, বাস্তববাদী হিসেবে, সচেতন একজন নাগরিক হিসেবে অনেক অগ্রিম পদক্ষেপ ও নিয়ে রাখলেন। কিন্তু দিন শেষ এ আপনি তো রোবট নন , রক্ত মাংশের একজন মানুষ। নিজের মন কে দুশ্চিন্তা থেকে ভয় থেকে সামলাবেন কিভাবে ?প্রথমেই নিজের মানসিক সুস্থতা যদি বজায় রাখতে চান তবে আপনি এবং আপনার পরিবার এর মানুষদের দিনে একবারের বেশি টেলিভিশন এ খবর দেখতে দিবেন না। সামাজিক যোগাযোগ এর মাধ্যম গুলোতে যেখানে ঘন ঘন করোনা আপডেট পেতে পারেন সেখানে সিমিত সময় এর বেশি অতিবাহিত করবেন না।

৪/ ইতিবাচক সংবাদ এ গুরুত্ব দিন। মৃত এবং আক্রান্তদের চেয়ে ও বহুগুন মানুষ প্রতিদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এদের মধ্যে আপনার পরিচিত কেউ ও থাকতে পারেন। তাদের বিজয়ের গল্প শুনুন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৫/ নিজের মনের এবং শরীরের যতœ নিন। নিজের প্রাত্যহিক জিবনকে যত টা পারবেন স্বাভাবিক রাখুন। নিজের কাজের ক্ষেত্র টা –হোক সেটা ঘরে বা বাইরে বা অনলাইন “ ওয়ার্ক ফ্রম হোম” – নিজের ছাপ রাখুন আগের মত ই উজ্জ্বল ।স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। যাদের ডায়বেটিস, রক্তচাপ বা অন্যান্য হার্ট বা কিডনি জনিত সমস্যা আছে, তারা উপযুক্ত বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন যেহেতু এই রোগী গুলো হাই রিস্ক এ আছেন ।আনপ্ল্যানড ডায়েট করবেন না, এই মুহূর্তে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে আরউ বাড়ানোর সময়, অযথা এটাকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না। আপনি শারীরিক ভাবে সুস্থ এই চিন্তা টাও আপনাকে মানসিক ভাবে আরউ শক্তি দেবে।

৬/. সবার থেকে পিছিয়ে পরছেন এটা ভেবে নিজের সামর্থ্যের বাইরে কাজ এর চাপ নেবেন না।নিজেকে সময় দিন। নিজের দুরবলতা , নিজের সক্ষমতা গুলোকে চিনতে শিখুন। নিজের আবেগ কে সবসময় ধরে রাখার চেষ্টা করবেন না। চিন্তিত হলে শেয়ার করুন বিশ্বস্ত কারও সাথে। মেডিটেশন করুন, মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন, ইয়োগা করুন, ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন।

৭/ নিজের পরিবার পরিজন দের সময় দিন।আত্মীয় স্বজন দের খোজ খবর রাখুন। জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশন এড়িয়ে সবাই ই ঘরের কাজ এ সহায়তা করুন।নিজেদের সৃজনশীলতা কে উদ্ভাবন করুন, অনুধাবন করুন।ধর্মীয় দিক থেকে নিজেকে আরও ভাল জায়গায় নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সময় এটা। যে যেই ধর্মে বিশ্বাসী সে সেই ধর্মের গভীর এ যাওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

৮/ নিয়ম মাফিক ঘুমান। করোনা কালীন সময় এ এখন সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা টা তে মানুষ ভুগছে তা হল নিদ্রাহীনতা ।দিনের বেলা ঘুমানর অভ্যাস কোন ভাবেই বাদ দিতে না পারলে দিনের বেলা ২০ মি এর বেশি ঘুমাবেন না। ধূমপান এর অভ্যাস পুরোপুরি বাদ দিন। সন্ধ্যার পর কোন চা, কফি খাবেন না। বিশেষ কোন শারীরিক সমস্যা না থাকলে বাসার মধ্যে ই হাল্কা ব্যায়াম বা এমন কি হাঁটার মত সুযোগ করে নিন। রাত এ ঘুম না আসলে বিছানা থেকে উঠে যাবেন , হালকা হাঁটাহাঁটি করবেন এবং শুধুমাত্র আবার ঘুম আসলেই বিছানায় যাবেন। সকালের বা দুপুরের কোন এক সময় বারান্দা বা কিছু না হলে ও জানালার পাশে খোলা আলো বাতাস এ কিছু সময় কাটাবেন। কোন অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ সেবন করবেন না।

৯/ এখন আসি পরিবার এ যাদের সামলাতে সবচেয়ে বেশি হিমশিম খাবেন তাদের ব্যাপারে – বাচ্চা ভয়ঙ্কর , কাচ্চা ভয়ঙ্কর। অনেক শিক্ষিত বয়স্ক মানুষেরাও যেখানে নিজেদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে বাচ্চাদের টা আন্দাজ করা ই যায়। বাচ্চাদের কে তাদের বয়স অনুযায়ী পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করুন। নেগেটিভ টুকু ও তুলে ধরুন, পজিটিভ টুকু ও হাইলাইট করুন।শিশুরা তাদের দৈনন্দিন রুটিনে না থাকতে পারলে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ এ পড়ে যায় যেটার বহিঃ প্রকাশ হয় তাদের খিটখিটে হওয়া , কান্নাকাটি করা, জেদ দেখানো ইত্যাদির মাধ্যমে।বাচ্চা

যদি স্কুল এ যেত তাহলে বাড়িতেই তাঁকে স্কুলের আদলে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করুন। বাচ্চা যেন সারাদিন শুধুমাত্র মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ এ আসক্ত না থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক কসরত করে থাকে সেদিকে খেয়াল করুন। বয়স অনুযায়ী ঘরের বিভিন্ন কাজ এ ব্যস্ত রাখতে পারেন ।ঘরোয়া বিভিন্ন খলায় তাদের সাথে থাকুন। সৃজনশীল কাজ এ সাহায্য করুন। ধর্মীয় ভিত তৈরি তে সময় দিন। আপনার বাচ্চাদের সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটান।

এই পৃথিবী এর আগেও অনেক ভয়াবহ দিন পাড় করে আসছে। সামনে ও এইদিনগুলি একদিন কেটে যাবে।আমি বেঁচে থাকবো তো? আমি চিকিৎসা পাব তো? এই ভয় এ দিন পাড় না করে বরং জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কে মূল্যবান এবং স্মরণীয় করে রাখা টা ই কি কাম্য নয়। জীবন টা যাপন তো করবেন ই , কিন্তু যত টা সময় পাবেন, পুরোটা উপভোগ ও কি করবেন না? সূর্য উদয় ই হয়, এক সময় অস্ত যাবে বলে। ঘন মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় ই আপনাকে একটা সুন্দর উজ্জ্বল দিন উপহার দেবে বলে। এ ক্রান্তিকাল ও কেটে যাবে। দরকার শুধু শক্ত মনোবল এর। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ডা. আফিয়া শারমিন
এম.বি.বি.এস (ঢাবি)
এফ.সি.পি.এস ওও (শিক্ষানবিশ) (মনোরোগবিদ্যা)
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net