June 9, 2025, 1:38 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার নিষিদ্ধ ঘোষিত শীর্ষ চরমপন্থি দল গণমুক্তিফৌজের নেতা জাহাঙ্গীর কবির লিপটন গ্রফতার হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি দল রাতভর তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া সদরের দূর্বাচারা গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকেসহ আরও তিন সহযোগীকে আটক করে। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার সাড়ে আটটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় উদ্ধার করা হয় বিপুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৬টি বিদেশি পিস্তল, একটি শর্টগান, ম্যাগজিন, গুলি ও দেশি ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, হত্যা, গোলাগুলি, চাঁদাবাজির প্রায় ৫০টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে আরও শতাধিক। পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ চরমপন্থিদের একজন। র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) অস্ত্র ব্যবসায়ীদের যে তালিকা প্রকাশ করে সেখানে লিপটনের নাম রয়েছে।
বাংলাদেশ ও পার্শ^বর্তী দেশ ভারতে বসে দীর্ঘ প্রায় তিনদশক ধরে নানা অপকর্ম করে আসছিল এই লিপটন।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, তার উপরের ও নিচের সাড়ির অনেক চরমপন্থী বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অথবা প্রতিপক্ষ অথবা নিজ দলের অপরপক্ষের হাতে নিহত হলেও দীর্ঘদিন বেঁচে রয়েছে এই চরমপন্থী লিপটন। বলা হয়ে থাকে, রাজনৈতিক আর্শীবাদ ও প্রশাসনে কর্মরত নিজ আত্মীয়স্বজনদের বিশেষ তদবির ও প্রশ্রয়েই সে এতদিন বেঁচে থেকে চালিয়ে গেছে তার অপকর্ম।
সন্ত্রাসের হাতেখড়ি কৈশরেই
জেলা পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ও কুখ্যাত চরমপন্থি নেতা লিপটনের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্বাচারা গ্রামে। তার বাবার নাম আজিজুর রহমান ওরফে মিনা। জামায়াত-বিএনপি আদর্শের পরিবারে বড় হওয়া লিপটন নব্বইয়ের দশকের পর কলেজে ভর্তির পর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যোগ দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে লিপটন ধীরে ধীরে চরমপন্থি দলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এসময় কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে ছাত্র সংসদেও নির্বাচনেও নাম নাম লেখায় লিপটন। এসময়ই নে নাম লেখায় গণমুক্তিফৌজ নামের চরমপন্থী দলে।
এরপর ক্ষমতার পালাবদল হলে আবার বিএনপি-জামাতের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে। বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে জেলা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা, তৎকালীন সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় টেন্ডারবাজি ও খুন-খারাবিতে মেতে ওঠে সে। সে সময় নিজে হাতে একের পর এক হত্যা মিশন চালিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে শুটার হিসেবে পরিচিতি পায়। ঐ সময়ে চরমপন্থিদের হাতে নিহত হয় কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার একটি বাসায় জামাই বাবু, কুষ্টিয়া বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলাল, জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মুন্সী রশিদুর রহমান। পালিয়ে থাকা শীর্ষ দুই চরমপন্থি এ হত্যা মিশনে নেতৃত্ব দেয়। তাদের হত্যা মিশনে লিপটন অংশ নেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এক পর্যায়ে নিজেই বাহিনী গড়ে তোলে। এসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরদার অভিযান শুরু করলে লিপটন ভারতে পালিয়ে যায়। সেখান থেকেই এসময় দেশে গড়ে তোলা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতে থাকে। এরপর অর্থের জোরে সবকিছু ম্যানেজ করে ২০১৩ সালে লিপটন দেশে ফিরে দীঘ এক যুগ ধরে আবারও চরমপন্থি সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, লিপটন একটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যকে হাত করে নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স পরিচয় দিয়ে থাকে।
এরপর সে আবার ভারতে পালায়। ভারতে অবস্থানরত কুষ্টিয়া অনচলের একাধিক সন্ত্রাসীদের কারো সাথে সখ্যতা, কারো সাথে গোলমাল চলতে থাকে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সূত্র মতে, কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকজন শীর্ষ চরমপন্থি নেতা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে কুষ্টিয়া পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ চরমপন্থি নেতা আনোয়ার হোসেন আনু, আজিবর মেম্বার, ওবাইদুল ইসলাম ওরফে লালসহ আরও কয়েকজন নেতা কয়েক বছরে নিহত হয়। এসব ঘটনায় লিপটনের গভীর যোগসূত্র থাকলেও সে থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সূত্রটি জানায়, এদের মৃত্যুর পর ভারত ও দেশে অবস্থান করে কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখে লিপটন। এ অবস্থায়, ২০১৫ সালের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কলকাতা সিআইডি পুলিশের একটি বিশেষ টিম লিপটনকে গ্রেফতার করে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। কলকাতার একাধিক সূত্র মতে, বাংলাদেশি সন্ত্রাসী লিপটন দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করে এদেশে সন্ত্রাসী নের্টওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছিল।
সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে আবার দেশে চলে আসে সে। সূত্র বলছে, এর মধ্যে কুষ্টিয়ার লিপটন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে দলকে সংগঠতি করে আসছিল। শহরে প্রকাশ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাকে গল্প করতে দেখা গেছে বলে অনেকেই দাবি করেছে। এ ছাড়া ঐ সময়ের সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে।
এরপর থেকে লিপটন এলাকাতেই অবস্থান করছিল। এলাকার বিভিন্ন গোলমালেও সে সক্রিয় ভুমিকা রাখছিল। ২০২৩ সালে ঐ এলাকায় সংঘটিত কয়েকটি গোলমাওে সক্রিয় ভুমিকা ছিল তার। গোলমালগুলোর পর এলাকায় একচ্ছত্র অধিপত্য বিস্তার করে লিপটন।
৫ আগস্টেও পর থেকে নতুন মেরুকরণেও সে সক্রিয় ছিল এবং একটি দলের পক্ষ নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন কর্মকান্ড করে আসছিল সে।
Leave a Reply