June 20, 2025, 10:12 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
চার দিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টিপাতে বেনাপোল স্থলবন্দরের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ওপেন ইয়ার্ড, গুদামের প্রবেশপথ এবং আশপাশের আরও অনেক জায়গা হাঁটুসমান পানিতে ডুবে থাকায় গত তিন দিন ধরে পণ্য খালাস ও পরিবহন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টির কারণে বন্দরের অনেক গুদাম ও ইয়ার্ডে পানি জমে গেছে। ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, পণ্য পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ কয়েকটি প্রবেশদ্বার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রমিকদের স্বাভাবিক কাজকর্মও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি-আমদানি কেন্দ্র বেনাপোল বন্দরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে একই ধরনের জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দেয়। এর প্রধান কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ও সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরো ঘটনার দায় নিচ্ছে না। তাদের দাবি, রেল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বন্দরের পাশে নতুন রেললাইন নির্মাণ করেছে। সেখানে ড্রেন বা কালভার্ট না রেখে মাটি ফেলে দেওয়ায় স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
তারা আরও জানান, বন্দরের রাস্তাগুলো তুলনামূলক উঁচু হলেও গুদামগুলো নিচু জায়গায় হওয়ায় সেখান থেকে পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই।
বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, এ ধরনের অপারেশনাল বিপর্যয়ের ফলে তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, “এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে সামান্য বৃষ্টিতেই বন্দরের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়।”
সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট মতিয়ার রহমান অভিযোগ করে বলেন, “অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে আজ এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
শ্রমিক নেতা মাকসুদুর রহমান রিন্টু জানান, শ্রমিকদের প্রতিদিন হাঁটু পানি ভেঙে কাজ করতে হচ্ছে। এই দূষিত পানিতে দীর্ঘ সময় থাকায় চর্মরোগসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোহসিন মিলন বলেন, “বেনাপোল দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর, এখান থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। অথচ বন্দর উন্নয়নে গুরুত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। বৃষ্টির পানি যদি গুদামে ঢুকে পড়ে, তখন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হয় আমাদেরই।”
আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে ২২ থেকে ২৪ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়। “কিন্তু ৩৩টি শেড ও কয়েকটি ইয়ার্ড ছাড়া ঠিকঠাক কোনো সংরক্ষণাগার নেই। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া অবকাঠামো তৈরি হওয়ায় বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা যেন নিয়মিত দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানিকারক।
এদিকে, বন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, পানি নিষ্কাশনে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। “আমরা বেনাপোল পৌরসভার সহায়তায় পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্প বসিয়েছি। আশা করছি, রোববারের মধ্যেই পানি সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।”
— আমান/
Leave a Reply