July 1, 2025, 8:10 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশ থেকে পাটসহ নয়টি পণ্যের আমদানিতে মোদি সরকারের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, সীমান্ত অঞ্চলের ভারতের ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে মন খারাপের মতো ব্যাপার ঘটেছে। তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষত, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোলে নিষেধাজ্ঞার অভিঘাত সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। স্থানীয় আমদানি-রপ্তানিকারক, কাস্টমস হাউস এজেন্ট, পরিবহন খাত, লোড-আনলোড শ্রমিক—সব মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন এবং সীমান্ত এলাকার অর্থনীতিতে ভয়াবহ ধস নামবে।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “এটা আমাদের জন্য এক ভয়ঙ্কর ধাক্কা। আগে গার্মেন্টস পণ্যে নিষেধাজ্ঞা, এবার পাট। পাট শিল্প পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। এই শিল্পে লাখ লাখ মানুষ কাজ করেন। এখন সেই ভিত্তিই কেঁপে উঠেছে।”
আরেকজন সিএইচএ কর্মী নূর ইসলাম মণ্ডল জানান, “প্রতিদিন বেনাপোল থেকে কমপক্ষে ১০০টি ট্রাক পাটজাত পণ্য পেট্রাপোলে আসত। এখন তার ৮০-৮৫টি ট্রাক সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এটা শুধু ব্যবসা নয়, পুরো অঞ্চলের জীবিকা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।”
পেট্রাপোলের আমদানি-রপ্তানিকারক পরিতোষ সাহা বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা শুধু আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা নয়, গোটা বনগাঁ অঞ্চলের অর্থনীতিকেই খাদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে গার্মেন্টস পণ্য নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলাতে পারিনি, এবার পাট শিল্পে আঘাত। এর প্রভাব সরাসরি হস্তশিল্প ও স্থানীয় পোশাকশিল্পেও পড়বে।”
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৭ মে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, আসবাবপত্রসহ কয়েকটি পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। তারও আগে ৯ এপ্রিল বাতিল করা হয় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা। বর্তমান নিষেধাজ্ঞায় পাটজাত পণ্য যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের পাট শিল্পের জন্য এটি বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পাট, চট, বস্তা, সূতা রপ্তানি ছিল উল্লেখযোগ্য। এতে বিপাকে পড়বেন কাঁচা পাট উৎপাদক কৃষক, শ্রমিক, এবং রপ্তানিকারকেরা।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞার নির্দিষ্ট কারণ না জানানো হলেও, ধারণা করা হচ্ছে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতিকে অগ্রাধিকার দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত, যদিও এর ফলে ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অন্যদিকে, ভিসা নীতিতে কড়াকড়ির কারণে ভারতের মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা, ফল বিক্রেতা, সিএনজি চালকসহ যারা বাংলাদেশি পর্যটক ও যাত্রীদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন তারাও দিশেহারা। ধাপে ধাপে এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে সীমান্ত অর্থনীতি কার্যত শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরতার বন্ধন ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। এখন সময় এসেছে আলোচনার টেবিলে বসে বন্ধুত্বপূর্ণ নীতির মাধ্যমে উত্তরণ খুঁজে বের করার। কারণ সীমান্তে যে আগুন জ্বলছে, তার আঁচ লাগছে উভয় দেশের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকায়।
Leave a Reply