July 31, 2025, 3:29 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ভিসা পেতে জটিলতার কারণে দেশের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচলে বড় ধস নেমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই পথে যাত্রী সংখ্যা কমেছে ১০ লাখেরও বেশি। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে প্রায় ৯০ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে।
উপলব্ধ তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে যাতায়াত করেছেন মোট ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন যাত্রী। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৬ লাখ ৬ হাজার ৪১০ জন, আর ফিরেছেন ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন। এ থেকে সরকার আয় করেছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। অথচ আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এ এই সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৭৮ জন—যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তুলনামূলকভাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে যাত্রী সংখ্যা কমেছে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭ এবং রাজস্ব কমেছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ইনচার্জ ইলিয়াস হোসেন মুনশি বলেন, “এক সময় প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতেন। এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০-তে।”
এই পতনের প্রধান কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভারতের ভিসা নীতিতে পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একতরফাভাবে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দেয়। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
বেনাপোল থেকে মাত্র ৮৪ কিলোমিটার দূরে কলকাতা হওয়ায় চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা ও পর্যটনের জন্য এই পথটি দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ভিসা জটিলতার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, ভিসা ছাড়া আরও অনেক সমস্যায় তারা নাজেহাল হচ্ছেন—ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের ধীরগতি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, দালাল চক্রের হয়রানি, শৌচাগারের অভাব, বিশ্রাম ও ছায়াযুক্ত আশ্রয়কেন্দ্রের ঘাটতি, এমনকি কখনও কখনও চুরির ঘটনাও ঘটছে—এমন অসংখ্য অভিযোগ বহু বছর ধরে থাকলেও কার্যত কোনো সমাধান হয়নি।
কুষ্টিয়ার যাত্রী পিকুল হোসেন বলেন, “ভ্রমণ কর বাবদ খরচ বাড়ছে, কিন্তু যাত্রীসেবার মান একটুও বাড়েনি। রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।”
আরেক যাত্রী হোসেন আল আমিন বলেন, “ঢাকা থেকে বেনাপোল আসতে মাত্র ৫ ঘণ্টা লাগে, অথচ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের পর। সেই পুরনো ভোগান্তিই চলছেই।”
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, “ব্যবসায়ীদের জন্য এটা বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকরা সহজেই বাংলাদেশি ভিসা পেলেও বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।”
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক কাজী রতন বলেন, “চলমান ভিসা সংকট এখন একটি সাধারণ বাস্তবতা। কতদিন চলবে তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।”
তিনি আরও জানান, যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের জন্য নতুন প্যাসেঞ্জার শেড নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে, তবে পুরোপুরি সমাধানে সময় লাগবে।
Leave a Reply