August 1, 2025, 3:50 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের প্রকৃত আয় এখনো নেতিবাচক রয়েছে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মজুরি ও মূল্যবৃদ্ধির ব্যবধান কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ‘বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির গতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, যা আগের চেয়ে কিছুটা কম হলেও এখনো স্বস্তিদায়ক নয় বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ, অর্থাৎ আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান থেকে গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মজুরি হার সূচক অনুযায়ী, জুন মাসেও প্রকৃত মজুরি ঋণাত্মক ছিল। টানা ৪১ মাস ধরে এই নেতিবাচক প্রবণতা চলছে। জুনে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, কিন্তু মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ফলে মজুরি বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির তুলনায় ০.৩০ শতাংশ পয়েন্ট কম।
মে মাসেও একই চিত্র দেখা গেছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের ৬৩টি পেশায় গড় মজুরি বৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, যা ওই সময়কার মূল্যস্ফীতির তুলনায় ০.৮৪ শতাংশ কম।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি যা অর্থবছরের প্রথমার্ধজুড়ে ছিল দুই অঙ্কে, তা জুন শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে। চাল, গমসহ কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির পেছনে ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ অবদান ছিল, যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ছিল আরও বেশি—গড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে পোশাক, জুতা ও গৃহস্থালি জ্বালানির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
‘কোর ইনফ্লেশন’ অর্থাৎ খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দিয়ে হিসাব করা মূলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। এর মানে হলো, খাদ্যপণ্যের দামে স্বস্তি এলেও অন্যান্য খাতে মূল্যচাপ থেকে গেছে।
প্রান্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির অবদান ছিল ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যা জুনে কমে হয় ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ। জ্বালানি খাতে অবদান উভয় প্রান্তিকেই গড়ে ৯ শতাংশে স্থির ছিল।
পচনশীল পণ্যের মূল্যস্ফীতির অবদানও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে—৩০ দশমিক ৮ শতাংশ, আগের প্রান্তিকে যা ছিল ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ। শাকসবজি ও মাছের দাম কমায় এ পরিবর্তন এসেছে। তবে অপচনশীল পণ্যের অবদান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ, আগের প্রান্তিকে যা ছিল ৫০ শতাংশ। সেবা খাতেও মূল্যস্ফীতির অবদান বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগের ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
মাসওয়ারি দিক থেকে দেখা যায়, জুনে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে মে মাসে তা ০ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছিল। খাদ্যপণ্যে জুনে মাসিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১ শতাংশ, যা মে মাসে ছিল ঋণাত্মক ১ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত খাতে মে ও জুন—উভয় মাসেই মূল্যস্ফীতি ইতিবাচক ছিল ০ দশমিক ৩ শতাংশ।
এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাসও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকতে পারে। তবে অনুকূল আবহাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য হ্রাস এবং কঠোর মুদ্রানীতির ফলে পরবর্তী অর্থবছরে তা কিছুটা কমতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পূর্বাভাস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার তুলনায় ধীরগতিতে কমবে। তবে স্বল্পআয় ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই গতি তুলনামূলক দ্রুত হতে পারে। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি থাকবে প্রায় ১০ শতাংশ, যা ক্রমান্বয়ে কমে ৫ শতাংশে নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply