August 5, 2025, 1:17 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর/ অন্তর্নিহিত বার্তাটি আগামী দিনের জন্যও বলবৎ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার তালিকার শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আবদুল কাদের/‘নিজেদের ছাত্রলীগ প্রমাণ করতে নির্যাতনে অংশ নিতেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা’ জাতীয় নাগরিক পার্টির ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা জাতিসংঘের প্রতিবেদনের মূল্য দেয় না কেউ, ভেসে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা : খোদ জাতিসংঘ হাজার কোটি টাকার গড়াই নদী খনন/ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতার অভাবে ব্যর্থতা ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৭ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করল বিএসএফ কার্যকর/ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক

জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর/ অন্তর্নিহিত বার্তাটি আগামী দিনের জন্যও বলবৎ

ড. আমানুর আমান, সম্পাদক, প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া, দি কুষ্টিয়া টাইমস/
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাধারণ একটি প্রতিবাদ হিসেবেই শুরু হয়েছিল জুলাইয়ের আন্দোলন। কিন্তু তা ধীরে ধীরে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছায় এবং শেষ পর্যন্ত দেশের রাজনীতির গতিপথই বদলে দেয়। সে সময়কার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এটিকে একটি সাধারণ আন্দোলন বলেই বিবেচনা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের ফল ছিল দলটির পতন। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে সাদামাটা মনে হলেও আন্দোলনের শেষদিকে যেভাবে ঘটনাবলি ঘটেছে তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়—আওয়ামী লীগ আন্দোলনের শক্তি ও সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে কোটাব্যবস্থার মতো ‘সাধারণ’ একটি দাবিকে ঘিরে এমন গণআন্দোলনের নজির আর পাওয়া যায় না। কয়েক দিনের ব্যবধানে অনেক মানুষ নিহত হন। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত প্রাণহানি ছিল দেশের জন্য এক চরম ধাক্কা। এই ঘটনাই দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক চরিত্রকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
আমরা জানি, একটি দেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব কতখানি। রাজনীতি একটি দার্শনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, এবং সেই ভিত্তি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, আচরণ ও রাজনৈতিক জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে আমরা স্পষ্টভাবে দেখি—দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অনিয়ম, অসততা ও দৃষ্টিভঙ্গির অভাবই এই বিপর্যয়ের জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের স্পন্দন ও দাবিদাওয়াকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার চাইলেই পরিস্থিতি বুঝে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারত। কিন্তু তারা বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারেনি। বরং, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সরকারি সম্পদের ক্ষতির হিসাব কষেছেন মানুষের প্রাণের মূল্য নয়। এটাই ছিল বড় ভুল।
একটি রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক অনেক শক্তি সক্রিয় থাকে। এদের উদ্দেশ্য আলাদা হতে পারে। কিন্তু সবার জন্য যদি একই রাজনৈতিক নীতিমালা কার্যকর না হয়, তবে যেকোনো আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে—যে দলটি এ দেশকে স্বাধীন করেছিল, সেই দলটি এমন একটি সাধারণ দাবিকে কেন যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারল না? তখন দলটির নেতারা কী করছিলেন? এখানে একটা গভীর বার্তা নিহিত রয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো টানা ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ আত্মতৃপ্তিতে ভুগছিল। তারা বারবার জনগণের মতামতকে অবজ্ঞা করেছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অবমূল্যায়ন করেছে এবং ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকে উপেক্ষা করেছে।
অন্যদিকে, দলটি তখন প্রকৃত নেতা-কর্মীর সংকটে ভুগছিল। দল যখন চূড়ায় ছিল, তখন দলে ভিড়েছিল বিপুলসংখ্যক সুবিধাবাদী, যারা আদর্শ নয়—চেয়েছিল সুযোগ। এর ফলে তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সত্যিকারের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এই ‘হাইব্রিড’ নেতৃত্বই দলটির পতনের অন্যতম কারণ।
আবার যখন আন্দোলন জোরদার হতে থাকে, তখন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা একে একে তাদের নির্বাচনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ধারণা করা হয়, তারা মাঠে থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।
আওয়ামী লীগের আরেকটি বড় ভুল ছিল, তারা এই ছাত্র-আন্দোলনকে বিরোধী দলের সাধারণ রাজনৈতিক আন্দোলনের চোখে দেখেছে। তারা বুঝতে পারেনি, এটি একেবারেই ভিন্ন ধরনের আন্দোলন। ফলে, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেন—যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে।
তবে এখন পেছনে তাকিয়ে লাভ নেই। আমাদের ভাবতে হবে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা। শেখ হাসিনার পতন ইতিহাসে একটি লজ্জাজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। ইতিহাস বারবার শিক্ষা দেয়। কিন্তু আমরা শিখি না। হয়তো, বার্টোল্ট ব্রেশটের নাটক গ্যালিলিও থেকে আমরা কিছু শিখতে পারি।
যখন গ্যালিলিও ক্ষমতাশালী শাসকের কাছে ফিরে যান, তখন তাঁর শিষ্যরা হতাশ হয়ে বলেন, “ধিক সেই জাতিকে যার বীরসন্তান নেই।” গ্যালিলিও জবাব দেন, “ধিক সেই জাতিকে, যাকে বাঁচাতে একজন বীরসন্তান লাগে।” সত্যিই, আমাদের দেশ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। এই সমস্যাগুলো দূর করতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূস ও তাঁর দক্ষ দল এই রাষ্ট্র সংস্কারের কঠিন কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সফল হবেন।
ইতোমধ্যে. নির্বাচানের ডামাডোলও সমাসন্ন। যে কোন একটি দল নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গঠন করবে। সে দলটির জন্যও এই একই মেসেজ বলবৎ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net