September 9, 2025, 8:03 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
পাশাপাশি দেশ ভারতীয় বাজারে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ টন।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১৩ হাজার ৭৪২ টন দেশি মাছ রপ্তানি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৪৭০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে মিঠাপানির মাছ ছিল ১৩ হাজার ২১০ টন এবং ইলিশ ৫৩২ টন।
বন্দর সূত্র অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে মোট ৮ হাজার ২৯২ টন মাছ রপ্তানি হয়েছিল, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩১২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪৫০ টন এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় বেড়েছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা।
বিশ্বে মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের ভোগের জন্য বার্ষিক চাহিদা ৪৮ লাখ টন হলেও, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ লাখ ১৮ হাজার টন উৎপাদিত হয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় বেশি। এই উদ্বৃত্ত মাছ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
বেনাপোল বন্দরের ফিশ কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তা সজীব সাহা জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে মাছ রপ্তানি প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, মাছ ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে উৎপাদন থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ই-ট্রেসেবিলিটি ব্যবস্থা চালু, অ্যাকোয়াকালচার সার্টিফিকেশন ও ব্র্যান্ডিং, মাছের মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা।
এছাড়া মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ফিশ এক্সপো আয়োজন করা হচ্ছে, যাতে আমদানিকারকদের আকৃষ্ট করা যায়। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতকে রপ্তানিমুখী উৎপাদন ও বিপণনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “রপ্তানিকারকদের উন্নত সুবিধা দিতে এবং এই গতি বজায় রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে মোট ৯১ হাজার টন মাছ ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল বেনাপোল বন্দর দিয়েই রপ্তানি হয়েছে ১৩ হাজার ৭৪২ টন।
তবে বেনাপোল দিয়ে মাছ রপ্তানি বেড়েছে বটে, কিন্তু রপ্তানিকারকরা কিছু সমস্যার কথাও জানিয়েছেন। বিশেষ করে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করাই প্রধান বাধা। কারণ, এসব সার্টিফিকেট খুলনা থেকে সংগ্রহ করতে হয়, যা বেনাপোল থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এতে সময় নষ্ট হয় এবং দ্রুত পচনশীল পণ্য পরিবহনে জটিলতা তৈরি হয়।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ভারতে মাছ পাঠাতে হলে রপ্তানিকারকদের খুলনা গিয়ে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিতে হয়। যদি এ সেবা বেনাপোলেই দেওয়া হতো, তবে বিলম্ব কমত এবং রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় আরও বাড়ত।
যশোরভিত্তিক এমইউসিআইই ফুডস বিশ্বের ২০টি দেশে মাছ রপ্তানি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, বেনাপোল দিয়ে ভারতে মাছ রপ্তানি বাড়াতে হলে ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।
তিনি আরও জানান, বেনাপোল ও যশোরে সংশ্লিষ্ট দপ্তর স্থাপন করা গেলে রপ্তানিকারকরা উৎসাহিত হবেন এবং এ খাতের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।