June 19, 2025, 10:46 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
ইরানে এ পর্যন্ত নিহত ৬৩৯, ১ হাজার ৩২০ জনের বেশি আহত ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ চান ট্রাম্প, মর্যাদাবান হায়দারের নামে যুদ্ধ শুরু : আয়াতুল্লাহ খামেনি কুষ্টিয়াসহ ১৭ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস লন্ডন ঘোষনায় অনৈক্য ঃ ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যায়নি জামায়াত কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন/ গণসাক্ষর ও অবস্থান কর্মসূচি, প্ল্যাটফর্ম উন্নয়ন, টিকিট ব্যবস্থার সহজীকরণ ও নিরাপত্তা দাবি অতিসত্বর তেহরান খালি করার আহবান ট্রাম্পের, যুদ্ধ বন্ধে পুতিন-এরদোয়ানের ফোনালাপ যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অস্বীকৃতি ইরানের, কখনো কখনো যুদ্ধ করেই সমস্যার সমাধান করতে হয় : ট্রাম্প ভারতের মাধ্যমে নেপাল থেকে আমদানি বিদ্যুৎ গ্রিডে, এ বছরেই চালু হতে পারে রূপপুরের প্রথম ইউনিট বাংলাদেশ-ভারত পণ্য বাণিজ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের তিনটি প্রধান স্থলবন্দরে আষাঢ়ের প্রথম দিন/টানা বৃষ্টির আভাস জানালো আবহাওয়া অফিস

চুয়াডাঙার ধর্ষণ-হত্যার দুই আসামির ফাঁসি যশোর কারাগারে কার্যকর

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
প্রায় দেড়যুগ পর চুয়াডাঙ্গায় দুই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত পৌনে ১১ টা ও তার কিছু সময় পর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রাতেই তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের মিন্টু ওরফে কালু (৫০) ও একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুল (৫০)।
এদিকে, বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ১৮ বছর পর ন্যায়বিচার পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহত কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমের স্বজনরা।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আলোচিত ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দুজনের ফাঁসি কার্যকরের জন্য বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শনিবার ও রোববার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো তাদের দুজনের স্বজনেরা তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের দুজনের শেষ ইচ্ছা অনুয়ায়ী দুই পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তাদের পছন্দ মতো শনিবার গরুর কলিজা ও ইলিশ মাছ খাওয়ানো হয়েছে। রোববার গ্রিল ও নান রুটি আর সোমবার মুরগির মাংস ও দই মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কারাগারের নিরাপত্তার জন্য সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের নজরদারি বাড়ানো হয়। কারাগারের ১৩ জন অস্ত্রধারী কারারক্ষী দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন কারাগারের প্রধান ফটকে।
জেলার বলেন, রাতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে গোসল করানোর পর তাদের তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম। এরপর তাদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়, আপিল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়। পরে তাদের জমটুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হয়। রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে প্রথমে মিন্টু ওরফে কালু এবং এর ৫ মিনিট পরে আজিজ ওরফে আজিজুলের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসি কার্যকরে কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন ও আজিজুর রহমান, কাদেরসহ ছয় জল্লাদ অংশ নেন। ফাঁসি কার্যকরের পর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসক টিম তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে কালু ও আজিজুলের সাত সদস্য মরদেহ নিতে কারাগারে আসেন। এ সময় তাদের দুজনের জন্য পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্স সঙ্গে ছিল।
চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় কালু ও আজিজুল সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে থাকেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রায় লক্ষ্মীপুর ঈদগাহ মাঠে একসঙ্গে দুজনের জানাজা শেষে তাদের পৃথক পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
কারাগার সূত্র জানায়, আজিজুল এবং কালু আলমডাঙ্গার রায় রায়লক্ষীপুর গ্রামের দুই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। ঘটনায় মামলা হয় ২৭ সেপ্টেম্বর। দীর্ঘ সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই তাদের মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনকেই দুই লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। এরপর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। আসামিপক্ষ মামলাটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও যান। চলতি বছরের ২৬ জুলাই সেখানেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ হয়। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া হলেও তা নামঞ্জুর হয়।
চলতি মাসের ৬ তারিখে কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় সুরক্ষা সেবা বিভাগ। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ৮ সেপ্টেম্বর সেই চিঠি গ্রহণ করে।
জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, ফাঁসি কার্যকর করতে কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন ও আজিজুর রহমানসহ আট জল্লাদকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির অনুরোধে তাদের স্বজনদের সঙ্গে শেষ দেখাও সম্পন্ন হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের ওই দুই নারীকে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায়লক্ষীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাদের দুজনকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলাকাটা হয় ওই দুই নারীকে। এ ঘটনায় নিহতদের একজনের মেয়ে ঘটনার পর দিন আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মহি মারা যান। ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। এরপর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা বহাল রাখেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে বেকসুর খালাস দেন।
এ বছরের ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান সুজন।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর তাদের ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে যশোর কারা কর্তৃপক্ষ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net