February 5, 2025, 3:58 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি। পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। গতবছর একই সময়ে এবং পুরো অর্থ বছরেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশী ছিল এ বন্দরে।
বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরে এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। ওই ছয় মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৩৩৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ হাজার ২২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
সাধারণত নিয়মে, যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতিমাসে নিদিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সুতারাং, রাজস্ব আদায় নির্ভর করে পণ্যের আমাদনির পরিমাণের উপর।
কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে। এ কয় মাসে আট হাজার ৪২৩ মেট্রিকটন পণ্য কম এসেছে। গেল বছরের প্রথম ছয়মাসে আট লাখ ২৪ হাজার ৬০৬ মেট্রিকটন পণ্য আমদানি হরেও এবার আমদানি হয়েছে আট লাখ ১৬ হাজার ১৮৩ মেট্রিক টন।
অন্যদিকে, আকস্মিক সরকার পরিবর্তন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা, ডলার সংকট ও বিনিময় হার জটিলতা, কাস্টমস হয়রানি, কাস্টমস কর্মকর্তাদের উৎকোচ বাণিজ্য প্রভৃতি কারন জানিয়েছেন বন্দরে আমদানি-রপ্তানীতে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
দেশের ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৬টির সঙ্গে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। এ বন্দর দিয়ে বছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য এবং ৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয়ে থাকে।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪১৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪০১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আদায় করা হয় ৪৮৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯৮ কোটি এক লাখ টাকা। এ মাসে আদায় হয় ৫২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৯ কোটি টাকা আর আদায় হয় ৬১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এবং ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯৭ কোটি টাকা সেখানে আদায় হয়েছিল ৭৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
তবে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়েছিল। ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। সেখানে তারা আয় করেছিল ছয় হাজার ১৬৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ সময় আমদানি হয়েছিল ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭৮০ টন পণ্য।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত জানান, এখনও দেশের বেশীরভাগ আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তিনি জানান, এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পরও দ্রুত পণ্য খালাস নানান প্রতিবন্ধকতার হয়রানি দুর হয়নি। তিনি বলেন, বন্দরে এখনও প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জাম নেই। এতে করে পণ্য খালাসে গতি পাচ্ছে না।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান ডেইলি সানকে জানানা, আকস্মিক সরকার পরিবর্তনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে। এখনও ব্যবসায়ীরা দেশের পরিস্থিতি কোথায় যায় সেটি দেখছেন।
তার মতে, ডলার সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। আবার কিছু এলসি করা গেলেও ডলারের বিনিময় হার বেশি লাগছে। এতে করে পণ্যের দাম বেশি লাগছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কাস্টমসের নানা হয়রানির অভিযোগ আসছে। হয়রানি ও উৎকোচের পরিমাণটা কমালে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে বলে আশা করছি।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, গত দুই মাস আগে বেনাপোল বন্দরের শূন্য রেখায় চালু হয়েছে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল। দ্রুত পণ্য খালাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের উদ্যোগে কমিটি গঠন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুরো বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আশা করেন, সব কাজ শেষ হলে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসান জানান, জুলাই-আগস্ট এই দুই মাস উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি থেকে বিরত ছিলেন। ঐ সময় আমদানি কমে যায়।
তিনি বলেন, এখন ডলারের পরিস্থিতিও স্থিতিশীল। দুই মাস (নভেম্বর-ডিসেম্বর) আমাদের আমদানি ও রাজস্ব আদায়ের হার ভালো। আশা করছি সামনের মাসগুলোতে আমাদের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।
Leave a Reply