September 9, 2025, 2:37 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলােইন/
মাত্র দুই বছরের পরিকল্পনা ও ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বরাদ্দে শুরু হলেও দেশের একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং লিমিটেডের আধুনিকায়ন প্রকল্প শেষ হয়নি ১৩ বছরেও। ব্যয় meanwhile বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ কোটিরও বেশি।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর একটি হিসেবে “কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেডের বিএমআর (দ্বিতীয় সংশোধিত)” শিরোনামে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। উদ্দেশ্য—৮৭ বছর বয়সী কোম্পানিকে আধুনিকীকরণ।
২০১২ সালের ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত। প্রাথমিক বাজেট ছিল ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ আগস্টে অষ্টমবারের মতো মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রায় সব কাজ শেষ হলেও ২০২৪–২৫ আখ মাড়াই মৌসুমের আগে উৎপাদন ট্রায়াল রান করা যায়নি। সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারায় এই বিলম্ব হয়েছে। ফলে সময় বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
এখন পর্যন্ত ৭৮.৩২ শতাংশ অর্থ ছাড় হলেও কার্যক্রমগত অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। একটি “ওয়াটার ট্রায়াল রান” ছাড়া কার্যকর চিনি উৎপাদন শুরু হয়নি। তবে কেরু কর্তৃপক্ষের দাবি, অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই বর্ধিত সময়ের মধ্যে আখ মাড়াই ও চিনি প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রপাতি পুরোপুরি আধুনিকায়ন সম্ভব হবে। এতে প্রক্রিয়াগত ক্ষতি কমবে, উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষি ও কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, ভূ-রাজনৈতিক জটিলতাও প্রকল্প বিলম্বের অন্যতম কারণ। সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহযোগিতায় প্রকল্পটি তদারকি করছে। এতে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের দেশে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে চূড়ান্ত ট্রায়াল রান আটকে যায়।
পরিকল্পনা কমিশন ও বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সুপারিশে এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—অতিরিক্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে না।
প্রকল্প পরিচালক ফিদা হাসান বাদশা জানান, কেরু চারটি পণ্য উৎপাদন করে। প্রধান দুটি হলো—আখ থেকে চিনি এবং উপজাত থেকে তৈরি দেশি–বিদেশি মদ। তিনি বলেন, ধীরগতির কাজ উৎপাদনে প্রভাব ফেলেনি। “কেরুর জন্য এটি একটি অগ্রসর উন্নয়ন প্রকল্প। প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, বর্ধিত সময়ের মধ্যে বাকি কাজও শেষ হবে।”
প্রকল্প সূত্র জানায়, আধুনিকায়ন শেষ হলে আখ মাড়াই ও চিনি প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রপাতির দক্ষতা বাড়বে, প্রক্রিয়াগত ক্ষতি কমবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং স্থানীয় কৃষি ও কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান (এফসিএমএ) দৈনিক সানকে বলেন, “কেরু লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরেই সরকারকে ১৪১ কোটি টাকা রাজস্ব জমা দেবে এবং প্রায় ১২০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করবে।” তিনি আরও জানান, স্থানীয় মদ উৎপাদন ও বিপণনে আগে যে বিশৃঙ্খলা ছিল তা এখন সমাধান হয়েছে।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরু অ্যান্ড কোং দেশের একমাত্র সরকারি মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। মূল পণ্য চিনি হলেও উপজাত মোলাসেস থেকে তৈরি হয় ভিনেগার, দেশি–বিদেশি মদ ও জৈব সার। পুরো কমপ্লেক্সে রয়েছে চারটি ইউনিট—চিনিকল, ডিস্টিলারি, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সার কারখানা।
একসময় মিলটির দৈনিক আখ মাড়াই সক্ষমতা ছিল ১,০১৬ টন। সময়ের সঙ্গে উৎপাদন কমতে থাকায় ২০১২ সালে আধুনিকায়ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। আখ সরবরাহ কম থাকায় চিনিশাখায় সামান্য ক্ষতি হলেও অন্যান্য ইউনিট গত ১৫ বছর ধরে লাভজনক।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, প্রকল্পে ৪০ টন বাষ্পক্ষমতাসম্পন্ন বয়লার, দুটি ২ মেগাওয়াট পাওয়ার টারবাইন, চারটি মাল্টিপল-ইফেক্ট ইভাপোরেটর, একটি রোটারি ভ্যাকুয়াম ফিল্টার, একটি প্যান ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হচ্ছে। সম্প্রসারিত কাজের মধ্যে রয়েছে একটি পূর্ণ মিল হাউস, আরও দুটি প্যান ও বয়লিং হাউস যন্ত্রপাতি, একটি ক্ল্যারিফায়ার ও একটি সুগার ড্রায়ার।
গত রবিবার বিকেলে অগ্রগতি পর্যালোচনায় সেনাবাহিনীর ২৯ সদস্যের একটি দল কেরু সফর করে। এ দলে ছিলেন মেজর জেনারেল নাহিদ আজগার, ব্রিগেডিয়ার সাজ্জাদ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আল-আমিন হোসেন।
প্রকল্প পরিচালক জানান, সেনা দলটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছে এবং দ্রুত কাজ শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছে। তারা চলতি সপ্তাহে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আমান/