October 14, 2025, 10:14 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলঅইন/
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশে সদ্য সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নেতাদের গ্রেফতারে ব্যবহার বাড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
সংস্থা জানিয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়কে অবিলম্বে বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানাতে হবে এবং রাজনৈতিক সহিংসতার নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে।
২০২৪ সালের আগস্টে তিন সপ্তাহব্যাপী সহিংস আন্দোলনের পর তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। ওই সময়ে অন্তত এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়। ২০২৫ সালের ১২ মে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের কঠোর সংশোধনী ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর আওতায় দলের সভা, প্রকাশনা ও অনলাইন বক্তব্যও নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে এই আইনের মাধ্যমে দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “বাংলাদেশিরা শেখ হাসিনার অধীনে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ সহ্য করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার যেন সেই একই পথে না হাঁটে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়কে এখনই হস্তক্ষেপ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতার ঠেকাতে হবে।”
এ পর্যন্ত হাজারো মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে হত্যা মামলার আসামি বানানো হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, কিছু গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা শেখ হাসিনার আমলের নির্যাতনের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে।
২৮ আগস্ট ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত এক আলোচনাসভা থেকে সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদসহ ১৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মরণে কাজ করা ওই সভায় হামলা চালানো উগ্রপন্থি গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে অংশগ্রহণকারীদেরই আটক করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে আছেন ঢাবি অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ দাবি করেছে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিচ্ছিলেন, যা প্রত্যক্ষদর্শীরা অস্বীকার করেছেন। জামিন শুনানিতে সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নাকে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরিয়ে আদালতে আনা হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২০২৫ সালের সংশোধনীকে সরকার ন্যায়বিচারের অজুহাতে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদও সতর্ক করেছে যে, আইনটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের পরিসর সীমিত করবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫২ জনকে মব হামলায় হত্যা করা হয়েছে। একজন রাজনৈতিক কর্মী বলেন, “এখন বিকল্প মাত্র দুটি—জেলে যাওয়া বা মানুষের হাতে নিহত হওয়া। ন্যায্য বিচারব্যবস্থা ছাড়া এই পরিস্থিতি চলতে পারে না।”
২০২৫ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার সহযোগিতার জন্য তিন বছরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক বলেন, “এটি বাংলাদেশের মানবাধিকার অঙ্গীকারের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে।”
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গাঙ্গুলি বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে রাজনৈতিক দমননীতির অস্ত্রে পরিণত করা উচিত নয়। অন্তর্বর্তী সরকার বরং নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগ দিক।”