October 29, 2025, 3:30 am

শুভব্রত আমান/
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের পর দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের গুদাম ব্যবহারকারীদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গত এক দশকে এ স্থলবন্দরের গুদাম ও খোলা সংগ্রহস্থলে কমপক্ষে আটবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে রেকর্ডে দেখা যায়।
প্রতিটি ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা না পেয়েছেন তদন্ত প্রতিবেদন, না পেয়েছেন কোনো ক্ষতিপূরণ।
ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, স্থলবন্দরের গুদামগুলোতে বহুমুখী ঘাটতি রয়েছে। গুদাম ও খোলা ইয়ার্ডগুলোতে সবসময় ধারণক্ষমতার বাইরে পণ্য রাখা হয়। কোথাও কোথাও অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একই সঙ্গে দাহ্য ও সাধারণ মালামাল পাশাপাশি রাখতে বাধ্য হওয়ায় আগুন লাগার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
তাদের ভাষ্য, সর্বশেষ গত বছরের ২৬ আগস্ট ৩৫ নম্বর শেডে আগুনে কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যায়।
অন্যদিকে, বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা এখন আগের চেয়ে বেশি সতর্ক। কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম গুদামগুলো পরিদর্শন করে বেশ কিছু সুপারিশও দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১০ বছরে আটটি অগ্নিকাণ্ডের প্রতিটির সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভালেও ততক্ষণে মূল্যবান পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বেনাপোল স্থলবন্দরে ৩৮টি গুদাম ও খোলা ইয়ার্ড রয়েছে; মোট ধারণক্ষমতা ৪৭ হাজার ৪৪০ টন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টন পণ্য মজুত রয়েছে। এ অতিরিক্ত চাপেই সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিদর্শনে দেখা গেছে—ডাই, রেইজিং পাউডার, প্রিন্টিং ইঙ্কসহ দাহ্য দ্রব্য সাধারণ মালামালের সঙ্গেই রাখা হচ্ছে। আর পোর্টেবল অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও তা জরুরি পরিস্থিতিতে কার্যকর ব্যবহার সম্ভব নয়।
২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ২৩ নম্বর শেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তৈরি পোশাক, ডাই-কেমিক্যাল, শিল্পযন্ত্রাংশ ও মোটর পার্টসসহ কোটি টাকার পণ্য ধ্বংস হয়। সেসময়ও তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তিন বছরেও ব্যবসায়ীরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।
বেনাপোল স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, “বন্দরের প্রতিটি গুদাম ও ইয়ার্ডই আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নজরদারি বাড়াতে হবে এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সাজ্জাদ বলেন, “সংগ্রহস্থলের পরিধি বাড়াতে হবে এবং অতি দাহ্য পণ্যগুলো আলাদা সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে হবে। প্রতিটি গুদামে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।”
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, “অনেক ব্যবসায়ী পূর্বের অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়েছেন। বারবার সতর্ক করার পরও সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গুদামের পণ্য বীমার আওতায় রাখা হয় না—এটারও কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। আমরা বন্দরের চারপাশে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ও পূর্ণ সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ চাই।”
একটি সূত্র জানায়, বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি টিম সম্প্রতি গুদামগুলোর নিরাপত্তা ঘাটতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক সুপারিশ দিয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, “প্রতিটি গুদামে ফায়ার হাইড্রেন্ট ও পাম্প রয়েছে। তবুও বলা যায় না যে আগুনের ঝুঁকি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছি। সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
অমান/