May 9, 2025, 11:20 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মারা গেলেন একাত্তরে কুষ্টিয়ার রণাঙ্গণের সেই বীর সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী মারা গেছেন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি আবু ওসমান চৌধুরী চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার মদনেরগাঁও গ্রামের চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আবু ওসমান চৌধুরী পাকিস্থান সেনাবাহিনীর একজন মেজর পদে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। অপারেশন সার্চলাইট-এর সংবাদ পেয়ে ২৬শে মার্চ সকালে বেলা ১১টায় তিনি চয়াডাঙ্গার ঘাঁটিতে পৌঁছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সসৈন্য যোগ দেন। এর আগে ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ আবু ওসমান চৌধুরী কুষ্টিয়া থেকে বরিশাল জেলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাকে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গণ নামকরণ করে সে রণাঙ্গণের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন। পরে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার তাকে দক্ষিণ পশ্চিমাংসের আঞ্চলিক কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেন। মে মাসের শেষার্ধে প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনকে দুই ভাগ করে ৮নং ও ৯নং সেক্টর গঠন করেন এবং ৮ নং সেক্টরের দায়িত্বে আবু ওসমানকে নিয়োগ করা হয়। প্রাথমিকভাবে সে সময় ওই সেক্টরের অপারেশন এলাকা ছিল কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর ও পটুয়াখালী জেলা। মে মাসের শেষে অপারেশন এলাকা সংকুচিত করে কুষ্টিয়া ও যশোর, খুলনা জেলা সদর, সাতক্ষীরা মহকুমা এবং ফরিদপুরের উত্তরাংশ নিয়ে এই এলাকা পুনর্গঠন করা হয়৷ এই সেক্টরের প্রধান ছিলেন আবু ওসমান চৌধুরী এবং পরে মেজর এম এ মঞ্জুর।
পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ৩০ আগস্ট দুপুরে তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা শেষে তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
তিনি ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম সদস্য।
স্বাধীনতার পর একাধিকবার তিনি কুষ্টিয়াসহ আশেপাশের জেলায় এসেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি কুষ্টিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের নিকট পরিচিত ছিলেন।
বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদকে ভূষিত মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আবু ওসমান চৌধুরীর অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
রাষ্ট্রপতি মরহুম আবু ওসমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায় আবু ওসমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আবু ওসমানের বীরত্বপূর্ণ অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা বাস্তবায়ন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে এ বীর সেনানীর অনবদ্য ভূমিকা সবসময় আমাদের প্রেরণা যোগাবে।
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
Leave a Reply