June 12, 2025, 5:29 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
দৌলতদিয়া ঘাট/২৪ ঘণ্টায় পারাপার ২৭৫২ যানবাহন, ভোগান্তি নেই ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত ২৬ বাংলাদেশীকে চুয়াডাঙ্গায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার চুরির অপবাদ দিয়ে নারীকে চুল কেটে নির্যাতন/ মামলায় গ্রেফতার আসামি ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও সিডিউল বিপর্যয়/ আড়াই ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার, রাজশাহীতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক দেশের হাসপাতালগুলোতে ফের শুরু হচ্ছে করোনা পরীক্ষা কুষ্টিয়ায় ফ্রিজ থেকে মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, কেটে দেওয়া হয়েছে চুল রাজশাহীতে অবরোধ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল রেল যোগাযোগ বন্ধ মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে আরও ১২ জনকে পুশ-ইন বিএসএফের জেনুইন লিফ কোম্পানির মালিক লিটন এমপি আনারের গাড়ি কুষ্টিয়ায় আনেন, চট্রগ্রামে রয়েছে তার প্রচুর অপকর্ম

গগণ হরকরা ঃ —–মনের মানুষ যেরে

ড. আমানুর আমান, সম্পাদক ও প্রকাশ, দৈনিক কুষ্টিয়া/
ছবিতে যে ব্যক্তির আবক্ষটি দেখানো হয়েছে তার নাম গগণচন্দ্র দাস। তবে এই গগণচন্দ্র দাস নামে আবক্ষের ব্যক্তিটির পরিচয় উদ্ধার করা কঠিন। কারন তিনি প্রকৃত নামের চেয়ে গগন হরকরা নামেই ইতিহাসে ঠাঁয় করে নিয়েছেন। পথ চলতি মানুষ বা সাধারন যে কোন মানুষই “আমি কোথায় পাব তারে, আমার মানের মানুষ যেরে”—এই গানটির ¯্রষ্ঠা এই গগণচন্দ্র দাসকে গগণ হরকরা নামেই চিনে থাকেন। গানটি আর নামটি সমার্থক হয়ে উঠেছে ইতিহাসের এক পর্যায়ে এসে।
আবক্ষটির সামনে দাঁড়িয়ে পথ চলতি মানুষকে জিজ্ঞেস করে এই ব্যাপারটি এভাবেই ধরা পড়েছে। এই আবক্ষটি নির্মিত হয়েছে কুষ্টিয়া শহরের নিশান মোড় এলাকায়। কাজটি হয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভার তত্বাবধানে। সবাই খুশী গগনের এই আবক্ষ নির্মাণে ; বলেছেন তিনি তো ‘তাদেরই লোক’।
‘ডাকহরকরা’ শব্দটি শুনলে প্রথমেই যে কারোর মনে পড়তে পারে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘রানার’ রানার’ গানটি। কবি সুকান্তের ‘রানার’ কবিতাটি সলিল চৌধুরীর সুরে গেয়েছিলেন হেমন্ত। বেশ আগের কথা। তবে রানার ব্যব¯’ার ইতিবৃত্ত আরো আগের। খৃষ্টপূর্বে চীনারা কবুতর দিয়ে একধরনের ডাক ব্যব¯’া প্রবর্তন করেছিলেন। ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে ইউরোপ আমেরিকা ও এশিয়াতে চিঠিপত্র চলাচলের বহু কেন্দ্র ¯’াপিত হয়। এই পাক ভারত উপমহাদেশে সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের আমলেই (খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ সাল) চালু হয় পায়রা দিয়ে সংবাদ পরিবহন। ইতিহাসবিদদের মতে, রেকর্ড অনুযায়ী ডাকপিয়নরা দিনে-রাতে একটানা ঘোড়া চালিয়ে মোটামুটি ৭০ মাইল পথ পাড়ি দিতেন। সাধারণের জন্যও এই ব্যব¯’া উন্মুক্ত ছিল। লোকজন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতো ছুটন্ত ডাকপিয়নের হাতে চিঠি ধরিয়ে দেয়ার জন্য।
‘ডাকহরকরা’ শব্দটি বলতে মুলত বোঝায় কোন চিঠি-পত্রাদি জাতিয় কিছু বহন করা। ডাক অর্থ চিঠি-পত্রাদি জাতিয় কিছু আর হরকরা বলতে যে এগুলো বহন করে। অনেক যুগ থেকেই বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ব্যব¯’ার প্রর্বতন ছিল। এই উপমহাদেশেও ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত চিঠিপত্রাদি আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে গুর“ত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই ডাকহরকরার। আরো পরে ডাকহরকরা শব্দটি ‘পিওন’ বা পোস্ট পিওন’ নামেও অবহিত হতে দেখা যায়। সত্যি বলতে কি, আজকের আমাদের দেশের ডাক বিভাগের যে প্রতীক- একজন রানার বা ডাক পিয়ন খালি পায়ে ঘুঙুর পরে হাতে বর্ষা ও হারিকেন আর পিঠে চিঠিপত্রের ঝুলি নিয়ে দৌড়া”েছ- সেটা দেখে বুঝার উপায় নেই এক সময় কত বিপদসঙ্কুল বনপথ দিয়ে এদের রাস্তা অতিক্রম করতে হতো একজনের চিঠি আরেকজনের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে।
এই আবক্ষটি ঐ স্মৃতিকেই কাতর করে। মাথায় পাগড়ি, পরনে ধ্যুতি। বাঁ হাতে হারিকেন, ডান হাতে একটি বল্লম ও একটি ছোট্ট ঘণ্টি। সাথে একটি ছোট বস্তা ; সাধারনভাবে পরিচিত চিঠির বস্তা হিসেবে। এসব নিয়ে একটি ছুটে চলার ভঙ্গি। ঠিক সেই রানার। সুকান্তের কবিতায় যেমনটি।
এখন সময় পাল্টেছে। উন্নত প্রযুক্তির এই বিশ্বে চিঠির বস্তা কাঁধে ডাক বহন এখন এক লুপ্ত পেশার নাম। শুধুই ইতিহাস। বড়জ্ােড় স্মৃতি হযে থাকতে পারে। সময়ের সেই স্মৃতি ধরে রাখতে কুষ্টিয়া পৌরসভার হাউজিং এলাকায় নিশান মোড়ে ডাকহরকরার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে এই ভাস্কর্যটির মধ্য দিয়ে একটি প্রতীকী ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করা হয়েছে কুষ্টিয়া পৌরবাসীর জন্যে। সেটি হলো হাজারো দু:খ-কষ্ট প্রভৃতি পেরিয়ে পৌরবাসীর কাছে সবসময় যাবতীয় সুখবর পৌঁছাক। এছাড়া নতুন প্রজন্মের কাছে সেই সময়ের ডাকহরকরাকে চিনিয়ে দেয়াও একটি উদ্যোগ। কারন গগগনের সাথে কুষ্টিয়ার রয়েছে নিবিড় সর্ম্পক । এই জেলাতেই ছিল তার জন্ম।
কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে এই আবক্ষটি। পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বর্তমান পৌর মেয়র আনোয়ার আলী প্রথম এই ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর পৌরসভার মাসিক সভায় এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পাস হয়। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শুর“ করেন শিল্পী ফয়সাল মাহমুদ। দুই মাস সময় নিয়ে ঐ বছরের ২৬ মে কাজ শেষ করেন তিনি।
গগন হরকরা : জন্ম ও কর্মকান্ড//
গগণের জন্ম ও মৃত্যুর কোন তারিখই নির্ভরযোগ্য নয়। বলা হয়ে থাকে তিনি ১৮৪৫ সালে জেলার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি শিলাইদহ পোস্ট অফিসে ডাকপিয়নের (ডাকহরকরা) কাজ করতেন। এই কাজের ফাঁকেই তিনি গান রচনা করতেন ও গান গাইতেন। তিনি বাইল সম্্রাট ফকির লালনের অনুসারী ছিলেন। ভক্ত ছিলেন বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। রবীন্দ্রনাথই আবিস্কার করেন এই গগণ হরকরাকে। জমিদারী কাজে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে এসে চিঠিপত্র দিতে জমিদার কাচারীতে আসা গগণের সন্ধান পান। রবীন্দ্রনাথ গগণের গান রচনা ও গায়কী গুনাবলীর খবর পান। গগণের “আমি কোথায় পাব তারে, আমার মানের মানুষ যেরে” গানটি নাড়া দেয় রবীন্দ্রনাথের কবি চিত্তকে। রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে বা নৌকায় জলসাতে গগণ আসতেন ও গান শোনাতেন। রবীন্দ্রনাথ গগণের লেখা এই গানটি তার ‘প্রবাসী পত্র’ (১৩২২) ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেন। পরে এটি পূনরায় প্রকাশ পায় পাতওকার জাতিস্বর সংখ্যায়। তার পূর্বে রবীন্দ্রনাথের ভাগিনেয়ী সরলা দেবী লালন ফকির ও গগণ হরকরা কে নিয়ে একটি রচনা প্রকাশ করেন। যেখানে গগণের “আমি কোথায় পাব তারে, আমার মানের মানুষ যেরে” ও “আশার মায়ায় ভুলে রবে” –এ দুটি গান প্রকাশিত হয়। বলেন্দ্রনাথ গগণের গান সংগ্রহ করেছিলেন ১৮৮৯ সালে। রবীন্দ্রনাথ গগণের নাম ও তার গানের বিষয়ে তার একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।
ইতিহাস সন্দর্শনে পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং গগণের “আমি কোথায় পাব তারে, আমার মানের মানুষ যেরে” গান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি রচনা করেন।
ভাস্কর্যটির বিষয়ে কথা বলেন কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলি রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলীর পরিকল্পনাতেই এই মাটির এক সন্তানের স্মৃতিকে ধরে রাখতেই এই উদ্যোগ।
কথা হয় মেয়র আনোয়ার আলীর সাথে। বাঙালীর শিল্প-সাহিত্যের এক নিষ্ঠ ধারক-বাহক ও সমঝদার তিনি জানান বাঙালী সংস্কৃতির সৃষ্টি ও সমৃদ্ধি এইসকল মানুষদের হাত দিয়েই। এসকল মানুষদের এই প্রজন্মের কাছে নিয়ে আসতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net