June 1, 2025, 11:29 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
আইনে না থাকলেও অব্যাহত রয়েছে ‘পুশ-ইন’/২৩ দিনে ১১৪৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিল ভারত শেখ হাসিনাকে প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল, রয়েছে ৩২ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের নাম ১ যুগ পর নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী, আলহামদুলিল্লাহ লিখে ফেবু পোস্ট জামাত আমিরের তরুণদের ক্ষমতার মোহ থেকে সরে আসতে হবে : রিজওয়ানা এবারও দেশী পশুতেই মিটবে কোরবানির চাহিদা, উদ্বৃত্ত থাকবে ২০ লাখ ৬৮ হাজার পশু ‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে মনে হচ্ছে আমরা মানুষ চিনতে ভুল করেছি’ শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ-জাপান জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ সুন্দরবনে মৌসুমি প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা ১ জুন থেকে শুরু, সহায়তার আওতা বৃদ্ধির দাবি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

আজ পহেলা আষাঢ়/ বাঙালি মননের রোমান্টিসিজমের বড় উৎস হয়ে উঠুক প্রশান্তির আবাহন

ড. আমানুর আমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া
আজ পহেলা আষাঢ় ; ১৪৩০ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের প্রথম দিন। আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো প্রিয় ঋতু বর্ষার। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় মাস। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে।
এ মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টির মধ্য দিয়েই বাংলার প্রকৃতিতে প্রবেশ করে বর্ষা । গ্রীস্মের দাবদাহ শেষে আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি যেন ফিরে পায় প্রাণ। এক নতুন আনন্দে জেগে উঠে বাংলার অনাচ-কানাচ, সমগ্র প্রকৃতি। বলা হয়ে থাকে এ মাসটি বাঙালী জীবন অঙ্গণে এক অন্যমাত্রার। টিনের চালের অবিরাম বৃষ্টিগান শুনেনি এমন বাঙালী মিলবে না।
আবহমানকালের ইতিহাস সন্দর্শন বলছে, এই বর্ষা বাঙালি মননের রোমান্টিসিজম ও আধ্যাত্মিকতার একটি বড় উৎস। বাংলা সাহিত্যজুড়ে তার প্রতিফলন এসেছে নানা ভাবে। বহুকাল আগে কালিদাস, আরও আগে বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি। তৎপরবর্তী গানে-কবিতায় রবীন্দ্রনাথ, কবি নজরুল ইসলাম কবিতা-গানে-ছন্দে বর্ষা বন্দনা করেছেন। ছোট কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে ; কালিদাস ‘মেঘদূত’-এ বর্ষা বন্দনায় বলেছেন ‘আষাঢ়ষ্য প্রথম দিবসে মেঘমাসৃষ্টসানুং/বপ্রক্রীড়াপরিণতগজ প্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।’ বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি বলেছেন, এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর। /এ ভরা ভাদর/মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোরৃ। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এলেন ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে… আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে…’। তার ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ বাঙাীর মন নিংড়ে দেয় রোমান্টিসিজম। নজরুল বর্ষাকে মনে করেছেন ‘বাদলের পরী’। তার ভাষায়, রিম্ঝিম্ রিম্ঝিম্ ঘন দেয়া বরষে।/কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষেৃ।
সাধারণত এই সময়টিতে থাকে তীব্র তাপদাহ যা প্রকৃতি ও মানুষকে একেবারে তপ্ত-রিক্ত-ক্লান্ত করে দেয়। বর্ষা এই তপ্ত ধরণীর বুকে বৃষ্টি ঢেলে প্রকৃতির রূপই বদলে দেয়। আষাঢ়-শ্রাবণ–দুই মাসজুড়ে এই ঋতুতে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়, নদ-নদীতে আসে নতুন জোয়ার, গাছ-লতাপাতায় অঅসে নতুন প্রাণের সঞ্চার, গাছে গাছে হাজারো ফুল, ঘাস-লতা-পাতা ধুয়েমুছে হয়ে উঠে চির সবুজ। মাটিতে পরে নতুন মাটির আস্তরণ। পুরো প্রকৃতি সেজে উঠে এক অপরূপ সাজে। সমগ্র প্রকৃতিতে বেজে উঠে প্রাণের সঞ্জীবনী গান সকলের, সকল জীবের। সারা বছরের শস্য-বীজের উন্মেষও ঘটে এই সময়টাতে।
বহু আগে থেকেই অনুভবের বিশেষ জায়গায়, সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই বাঙলার রূপ, রস আর গন্ধ বরষায় জীবন্ত হয়ে অঅছে। এখনও গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে বরষায় বিভিন্ন পিঠাপুলির আয়োজন থাকে। ছোট ছোট শিশু কিশোর-কিশোরীরা বাড়ির আঙিনায় বসে বরষায় বৃষ্টি ছড়ায়-গানে-কবিতায় মেতে উঠে। বাংলার নারীরা এ সময়ে হাতের সেলাই করার রেওয়াজও বহু পুরোন।
বর্ষাকে নিয়ে নানা মিথ রয়েছে দেশের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে। কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বর্ষাকে বরণ করে ভিন্ন রকমভাবে। প্রতিবছর তারা কক্সবাজরর সমুদ্র সৈকতে মাসব্যাপী বর্ষাবরণ উৎসবের আয়োজন করে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা এ বর্ষাবরণ উৎসবে যোগ দেন।
এখনকার আধুনিক যুগেও বর্ষা বন্দনা হয়। পত্র-পত্রিকা, ইলেট্রনিকস মিডিয়া নানা আয়োজন করে থাকে।
এই আবেগী ধারার বইিরেও বর্ষার আরেক রুপ আছে। বর্ষা হঠাৎ যেমন যেমন আনন্দের, বর্ষায় বিষাদও রয়েছে। বর্ষার নির্মম অব্যাহত অঝোর ধারা কখনও জনজীবন ছন্দপতন নিয়ে আসে। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষদের পীড়ার কারনও হয়ে দাঁড়ায়। তাদের দিন এনে দিনাতিপাতে যথেষ্ট বিড়ম্বনা এনে দেয় বর্ষা। তাদের কষ্টগুলো কবিতা-গানে-ছন্দে প্রকামযোগ্য গয়ে উঠে না।
তারপরও সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাঙলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সবুজের প্রাচুর্য্য জীবনে নতুনের যে আবাহন তৈরি করে সেটাই নতুন জীবনের বারতা।
আমরাও বন্দনা করি, সকল মলিনতা, ক্লান্তি দুর হয়ে নাগরিক মনগুলো ভিজে উঠুক এই বর্ষায়, দূর হয়ে যাক সকল অশুভ শক্তির প্রতাপ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net