August 19, 2025, 7:09 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
আমদানি শুরুর পর দাম বাড়েনি পেঁয়াজের বেসরকারি পর্যায়ে ১০ লাখ টন ডাল ও চিনি আমদানি অনুমোদন কুষ্টিয়ায় কারাগারে হাজতির মৃত্যু কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াইয়ে পানি কমলেও দৌলতপুরে অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি কুষ্টিয়া শাহিন ক্যাডেট স্কুল/ ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার কুষ্টিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল রেসিং খেলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই কিশোরের মৃত্যু ঝিনাইদহে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে ১৭ জন আটক রাজশাহীতে একই পরিবারের চারজনের রহস্যজনক মৃত্যু র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেপ্তার ইসরায়েলের জন্য লুকিয়ে অস্ত্র আনছিল সৌদি জাহাজ, ইতালিতে আটক

রবীন্দ্রনাথের শৈল্পিক সৃষ্টি বিশ্বজুড়ে মানবতাকে অনুপ্রাণিত ও সমৃদ্ধ করে চলেছে : প্রণয় ভার্মা

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন রবীন্দ্রনাথের শৈল্পিক সৃষ্টি বিশ^জুড়ে মানবতাকে অনুপ্রাণিত ও সমৃদ্ধ করে চলেছে। তার মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গভীর চিন্তা, কাব্যিক প্রতিভা থেকে উৎসারিত সাহিত্য, সঙ্গীত এবং দর্শন বিশ্বে এক অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছে।
শনিবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার শিলাইদহের রবীন্দ্রকুঠিবাড়ি অ্যাম্ফিথিয়েটারে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় ড. চঞ্চল খান পরিচালিত ডকুমেন্টারি ফিল্ম “ছিন্নপত্র: পদ্মের পারে রবীন্দ্রনাথ” প্রদর্শনী উদ্বোধনকালে তিনি একথ বলেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন স্বপ্নদর্শী, যার প্রভাব সীমানা এবং প্রজন্ম অতিক্রম করে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব সাহিত্যে সগৌরবে পৌঁছে দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সমাজ সংস্কারক, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। রবীন্দ্রনাথ অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে বিশ্বে দারুনভাবে নন্দিত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রচেষ্টা আমাদের দুই দেশের যৌথ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। এটি আমাদের অংশীদারিত্বের বৈশিষ্ট্য যা সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং শক্তিশালী জন-মানুষের বিনিময়েরও প্রতিফলন।
ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পী যারা ছবিটি তৈরিতে অংশ নিয়েছেন তাদের প্রশংসাও করেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
ডকুমেন্টারি ফিল্মটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিস্তৃত কর্মের একটি অংশ উল্লেখ করে আয়োজকেরা জানান, এতে কুঠিবাড়িতে থাকার সময় তার ভাগ্নি ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠির সংগ্রহ অন্তর্ভুক্ত আছে।
অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত গায়ক ও সুরকার সাদী মোহাম্মদ রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রণয় ভার্মার স্ত্রী মানু ভার্মা, কুষ্টিয়ার ডেপুটি কমিশনার এহেতেশাম রেজা, পুলিম সুপার এইচএম আব্দুর রাকিব ও ডকুমেন্টারীর পরিচালক ডা. ড. চঞ্চল খান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান।
বিশেসজ্ঞরা বলছেন কলকাতা হয়তো কবির শিল্পিসত্তাকে অনুভব-আবিষ্কার করতে দিয়েছিল, কিন্তু সেই বৈভবপূর্ণ প্রাসাদের বাইরে শিলাইদহের গ্রামীণ নৈসর্গিক জনপদে জগত ও জীবনকে নবরূপে অন্তরঙ্গভাবে উপলব্ধি করেছিলেন কবি। তার কাব্যের স্বকীয়তা আর অভিনবত্ব বেশি ধরা দিয়েছিল ‘সোনার তরী’র মতো বহমানতা থেকে।
শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথের আবেগের উপর তাৎপর্যপূর্ণ রেখাপাত করেছিল। ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের সূচনায় তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি শীত গ্রীষ্ম বর্ষা মানিনি, কতবার সমস্ত বৎসর ধরে পদ্মার আতিথ্য নিয়েছি, বৈশাখের খররৌদ্রতাপে, শ্রাবণের মুষলধারাবর্ষণে। পরপারে ছিল ছায়াঘন পল্লীর শ্যামশ্রী, এ পারে ছিল বালুচরের পান্ডুবর্ণ জনহীনতা, মাঝখানে পদ্মার চলমান স্রোতের পটে বুলিয়ে চলেছে দ্যুলোকের শিল্পী প্রহরে প্রহরে নানাবর্ণের আলোছায়ার তুলি। এইখানে নির্জনসজনের নিত্যসংগম চলছিল আমার জীবনে। অহরহ সুখদুঃখের বাণী নিয়ে মানুষের জীবনের বিচিত্র কলরব এসে পৌঁছচ্ছিল আমার হৃদয়ে। মানুষের পরিচয় খুব কাছে এসে আমার মনকে জাগিয়ে রেখেছিল। তাদের জন্য চিন্তা করেছি, কাজ করেছি, কর্তব্যের নানা সংকল্প বেঁধে তুলেছি, সেই সংকল্পের সূত্র আজও বিচ্ছিন্ন হয়নি আমার চিন্তায়। সেই মানুষের সংস্পর্শেই সাহিত্যের পথ এবং কর্মের পথ পাশাপাশি প্রসারিত হতে আরম্ভ হলো আমার জীবনে। আমার বুদ্ধি এবং কল্পনা এবং ইচ্ছাকে উন্মুখ করে তুলেছিল এই সময়কার প্রবর্তনা।’
১৮৮৯ সালে ত্রিশ বছর বয়সে কবি-জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি পরিদর্শনের দায়িত্ব নিয়ে আসেন শিলাইদহের নতুন কর্মতীর্থে। তিনি কুঠিবাড়িতে বসবাসের পাশাপাশি পদ্মায় বোটে বসবাস করতেন। দীর্ঘ দশ বছর পর ১৮৯৯ সালে তিনি স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা নিয়ে বর্তমান কুঠিবাড়িতে সংসার পাতেন এবং একাদিক্রমে দুই বছর এখানে অবস্থান করেন। কর্মজীবনে রবীন্দ্রনাথ ২ দশকেরও বেশি সময় শিলাইদহে ছিলেন। অবশ্য তার এই বসবাস একটানা ছিল না। তার বসবাস ও সাহিত্য-সাধনার অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে শিলাইদহ ইতিহাসখ্যাত হয়েছে। এখানে দীর্ঘ জমিদারি জীবনের পাশপাশি তার কাব্য ও সাহিত্য জীবনের কর্মকাণ্ড চলেছে সমান্তরাল গতিতে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহকে তার ‘যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্য-রস-সাধনার তীর্থস্থান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
শিলাইদহে বসবাস ও জমিদারি পরিচালনাকালে তিনি তার বিপুল সৃষ্টির দ্বারা বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেন।
‘সোনার তরী’ থেকে ‘চিত্রা’, ‘ক্ষণিকা’, ‘খেয়া’, ‘বলাকা’ ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’, ‘গীতালী’ কিংবা ‘গীতাঞ্জলী’ রচনা ও অনুবাদ- এসব বাদ দিলে কোন রবীন্দ্রনাথ অবশিষ্ট থাকে? পূর্বে থাকে বয়ঃসন্ধির চঞ্চলময় চিত্তের অভিব্যক্তি, পরে থাকে স্মৃতিকাতরতা আর আসন্ন জীবনাবসানের অভিজ্ঞান-উপলব্ধি। সম্পূর্ণ রবীন্দ্রনাথই আমাদের শ্রদ্ধেয়, তবে যৌবন-প্রৌঢ়ের রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রিয়, বিশ্ববাসীর সম্মানিত।
শুধু কাব্যরসের ধারাতেই তিনি মশগুল ছিলেন তা নয়, এই শিলাইদহে তিনি ছিলেন একজন কর্মযোগী পুরুষও। আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ, নতুন নতুন ফল-ফসলের চাষাবাদ, দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন, স্বেচ্ছাসেবী ‘কিশোর ব্রতী-বালক দল’ ও ‘কর্মীসঙ্ঘ’ গঠন, পল্লীসমাজের সার্বিক উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, স্কুল-ক্লাব-চিকিৎসালয় নির্মাণ সাপেক্ষে আদর্শ গ্রাম তৈরি, জমিদারি শাসন সংস্কার করে মণ্ডলী প্রথা প্রবর্তন, রায়ত-চাষাদের নিয়ে সমবায় আন্দোলন, গ্রামীণ মেলার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, তাঁতশিল্প প্রসারে বিদ্যালয় ও কারখানা স্থাপন, লোকসাহিত্য সংগ্রহ, লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণসহ অনেক কিছুই তিনি এখানে বসে করেছেন। এই কর্মযোগের ধারাবাহিকতাই ছিল শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা। শিল্পী যে কেবল শিল্পীই হবেন না, তারও যে সামাজিক দায়িত্ব আছে তা বহুমাত্রিকভাবে কালোত্তীর্ণ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে।
তাই বলা যায়, শিল্পের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কর্মযোগের এই মেলবন্ধনও ঘটেছিল শিলাদহ থেকেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net