November 22, 2024, 9:06 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়া-৪ খোকসা-কুমারখালী) আসনে সাধারণ জনগনের রোষে পতন হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী। বিপরীতে জয় পেয়েছেন এলাকার জনপ্রিয় নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফ। জর্জের এই শোচনীয় পরাজয়ে দুই উপজেলা জুড়ে আনন্দ উল্লাস করছে সাধারণ জনগন। সেলিম আলতাফের নোংরা রাজনীতির কবল থেকে মুক্তি পেয়ে খুশী অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীও। বিশেষ করে যারা জর্জের ৫ বছরে নানাভাবে নির্যাতিত।
প্রাথমিকভাবে এই বিজয়ের মূলে জর্জের আত্মঅহমিকা, অপরাজনীতি, মামলা-হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন, সাধারণ জনগনের সাথে সর্ম্পকহীনতা, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়েও নেতা-কর্মীদের নানাভাবে হেনস্থা, জামাত-শিবিরের লোকদের নিয়ে দলের বাইরে আলাদা সিস্টেমবাজী সর্বোপরি এলাকার উন্নয়ন বিরোধী কর্মকান্ডকে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে জর্জই আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রতীক নৌকাকে এবং শেখ হাসিনার পুরো অর্জনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হবার পর থেকেই জর্জ নিজেকে যুক্ত করেন নানা বির্তকিত কর্মকান্ডে। যে দল থেকে তিনি নির্বাচিত হন সেই দলের নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েন। প্রকৃত নেতা-কর্মীদের দুরে তাড়িয়ে দিতে থাকেন। শুধু তাড়িয়ে দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করেছেন। একটি হিসেবে দেখা গেছে, তার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে তার নির্বাচনী এলাকাতে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৯০টির মতো মামলা হয়েছে। যেখানে আসামী হয়েছে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী। সবাই বলে থাকেন মামলার শিকার যারা তারাই ঐ এলাকার প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী। ুবগত কয়েকদিনের তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, দলের নেতা-কর্মীরা তার কাছে গেলে তাদেরকে নানাভাবে বকাঝকা করে তিনি বিদায় করেছেন। অসখ্য নেতা-কর্মী এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন তা রের্কড রয়েছে।
পাঁচ বছরে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় তেমন দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে একেবারেই ব্যর্থ ছিলেন। এসব নিয়ে তার তেমন কোন মাথাব্যাথও ছিল না। জনগনের বিপুল উন্নয়ন চাহিদা থাকলেও তিনি সেদিকে নজর দেননি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের জন্য এক বিপুল বরাদ্দ খোকসা-কুমারখলীর জন্য ছিল অধরা।
ওদিকে নিজে উন্নয়ন করতে না পারলেও অন্যের উন্নয়ন নিজের বলে জাহির করতে দারুণ উস্তাদী দেখাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন এই ব্যক্তি। কুমারখালীর যদুবয়রা বৃজ নিজের উন্নয়ন বলে চালিয়ে দিয়ে বৃজটি নিজের দাদার নামে করে নেন এই সংসদ সদস্য বলে অভিযোগ করেছেন গতকাল নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ। তিনি জানান সকল প্রক্রিয়া তিনি সম্পন্ন করেন তার ২০১৪ থেকে ২০১৮ মেয়াদে।
ওদিকে, খোকসা উপজেলায় গড়াই নদীর উপর ৩০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া বৃজের কাজ শুরু করতে ব্যাপক বাধা প্রদান করেন এই সংসদ সদস্য। এই বৃজের জনক হলেন কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান সদ্য অবসর নেয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। দীর্ঘদিনের সাধারণ মানুষের দাবির এই বৃজ তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে আসেন। এই বৃজের আনুষ্ঠানিক আবেদনকারী প্রধান বিচারপতির ভাই ড. আমানুর আমান জানান, সেলিম আলতাফ এই বৃজের কার্যক্রম থেকে শুরু করে বরাদ্দ পাওয়ার পর পর্যন্ত বৃজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে গেলে এমনভাবে বাধা প্রদান করেন যে বৃজের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়েছে। এই সংসদ সদস্যের সাথে যোগ দেন খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল আখতার। এদের সাথে আরও যোগদেন জেলার আরেক সংসদ সদস্য। অবশ্য পরে যোগ হওয়া এই সংসদ সদস্য ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে সেখান থেকে দ্রæত সড়িয়ে নেন।
ড. আমান জানান, প্রধান বিচারপতির প্রষ্টোয় খোকসাতে মুক্তিযুদ্ধের ভার্স্কয ও মুক্তিযদ্ধের মিউজিয়াম নির্মাণ কাজেও সেলিম আলতাফ ও বাবুল আখতার বাধা প্রদান করে আসছে।
সেলিম আলতাফ নির্বাচিত হবার পর থেকেই ভয়ংকর রকমের আত্মঅহমিকায় ভুগছিলেন। তিনি তার বিজয়ের কারিগর জেলার সিনিয়র রাজনৈতিক নেৃতৃবৃন্দকে নানাভাবে অসম্মানিত করে আসছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা ও নোংরা বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এটাও এসকল সিনিয়র নেতারা ভালভাবে নেননি। এই নির্বাচনে জর্জের প্রধানতম কারন হলো সিনিয়র সকল নেতাই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
খোকসা-কুমারখালী আসনে এই নতুন বিজয়কে সাধারণ মানুষ দারুণভাবে নিয়েছেন। তাদের বক্তব্য তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
খোকসা পৌরসভার মেয়র তারিকুল ইসলাম বলেন জর্জের পরাজয় অনিবার্য ছিল। তারন তিনি মোটেই কোন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। সংসদ সদস্য হবার পরও তিনি রাজনৈতিক নেতা হবার বদলে রাজনীতি নষ্ট করতে শুরু করেছিলেন।
খোকসা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শিমুল আহমেদ খান জানান, সেলিম আলতাফকে আগে রাজনৈতিক ভদ্রতা শেখা উচিত ছিল। তারপর রাজনীতিতে আসা দরকার ছিল। তিনি জনগনের সাথে মোটেই ভাল আচরণ করেন নি। তার পতনের মূল কারন হলো জনগনের রোষ। জনগনের রোষের বলি হয়েছেন তিনি।
Leave a Reply