December 12, 2024, 5:36 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির বাংলাদেশ সফরের পর দুই দেশের চলমান চাপান-উতোর কোনদিক যাবে সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর এটি ভারতের কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। এটা ছিল মুলত দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বার্ষিক পরামর্শমূলক সভা (এফওসি)।
দিল্লি থেকে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া, ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচার, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, দুই দেশের ভিসা কমিয়ে দেওয়াসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এ সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অস্থিরতা কাটানোর জন্য এই সফরের কোন বিকল্পও ছিল না।
এফওসিতে অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একযোগে কাজ করা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর বয়ান বন্ধ করতে ভারতকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন।
তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না একই সাথে অন্যদের মন্তব্যও পছন্দ করে না বাংলাদেশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এফওসিতে অংশ নেওয়া ছাড়াও বিক্রম মিশ্রি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বিক্রমকে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে কিছু মেঘ জমে ছায়া তৈরি করেছে। এই ‘কালো মেঘ’ মুছে ফেলতে ভারতের সাহায্য প্রয়োজন।
ওদিকে এ বিষয়ে বিক্রম মিশ্রি কথা বলেছেন। এতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অনুকূল, গঠনমূলক ও পরস্পরের জন্য লাভজনক সম্পর্ক চায় ভারত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত অতীতে এটি চেয়েছে, ভবিষ্যতেও এমনটি চাইতে থাকবে।
একই সঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথাও তিনি জানান।
সবকিছু ছাপিয়ে, সাধারণ মানুষের নজর ছিল শেখ হাসিনা ইস্যূতে। বাংলাদেশ থেকে হাসিনা বিরোধী প্রায় সকল পক্ষই ভারত থেকে শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যবর্তন চাইছেন। চাওয়া হচ্ছে, ভারত হাসিনাকে ফিরিয়ে দিক। দেশে তার বিচার বিচার হবে। তিনি একাধিক মামলার আসামী। ইতোমধ্যে বিচার ট্রাইবুনালে তাকে হাজির হতে নিদের্শ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ভারতের মনোভাব এখনও পরিস্কার নয়। বিক্রম মিশ্রির সফরের পর বিষয়টি কোন পর্যায়ে পৌছালো সেটা যথেষ্ট জানার একটি বিষয়।
এ ইস্যুতে বিক্রমের কুটনৈতিক কৌশল পেশাদারিত্বকে ছাপিয়ে যায়। প্রথমে তিনি, ভারতের বিরুদ্ধে তোলা “একটি বিশেষ দলের প্রতি প্রীতির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, জনগণ দুই দেশের সম্পর্কের মূল শক্তি। বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় এটি প্রতিদিনই প্রতিফলিত হচ্ছে।
অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে ভারতের আগ্রহের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বিক্রম মিশ্রি একই সঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁর সরকারের উদ্বেগের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অগ্রসর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠনে ভারত সরকার সমর্থন দেবে। ভারত পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা ও উভয় দেশের স্পর্শকাতর ও স্বার্থের দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে গঠনমূলক সম্পর্ক নির্মাণ করতে চায়।
সেখানে স্পষ্ট বলা হয়, ভারতে হাসিনার অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পথে প্রভাব ফেলবে না। সচেতন মঞর মনে করছেন, শেখ হাসিনা ভারতে থাকছেন, এটি মেনে নিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্র্নিমাণ করতে চায় ভারত। ভারত মনে করে, দেশটিতে শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পথে প্রভাব ফেলবে না।
Leave a Reply