November 7, 2025, 2:58 pm

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ১২০০ টনের অনুমতির বিপরীতে মাত্র ১০৭ টন ২২৬ কেজি ইলিশ রপ্তানির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বহুল আলোচিত ভারতে বাংলাদেশের ইলিম রপ্তানী। এরমধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গেছে ১০৬ টন ৩৪ কেজি এবং আখাউড়া বন্দর দিয়ে গেছে ১ টন ১৯২ কেজি ইলিশ।
রপ্তনীতে অংশ নেন দেশের ১৬ জন রপ্তানিকারক। অনুমোদন ছিল ৩৭ জনের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, ইলিশ উৎপাদনে ঘাটতি, দেশে অতিরিক্ত জাহিদা ও দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি।
চলতি বছর ১৬ সেপ্টেম্বর অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার ৩৭ জন রপ্তানিকারককে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। ১৭ সেপ্টেম্বর রপ্তানি শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর শেষ হয়।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় থাকলেও উৎপাদন ঘাটতির কারণ দেখিয়ে ২০১২ সালে সরকার ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। পরে ২০১৯ সালে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পুনরায় চালু করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরই পূজার আগে ভারতে সীমিত পরিমাণে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়।
এর আগে ২০২৪ সালে ৪৯ জন রপ্তানিকারককে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলেও রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। ২০২৩ সালে ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৫০০ টন রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়, কিন্তু রপ্তানি হয় মাত্র ৬৩১ দশমিক ২৪ টন। ২০২২ সালে ৫৯ প্রতিষ্ঠান ২ হাজার ৯০০ টনের অনুমতি পেয়ে রপ্তানি করেছিল ১ হাজার ৩০০ টন, আর ২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ৪ হাজার ৬০০ টনের বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৯৯ টন।
সক্ষমতা যাচাই ছাড়াই অনুমতি, ব্যর্থতা প্রতি বছরই/
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা যাচাই না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমতি দেওয়ায় ইলিশ রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের লক্ষ্য বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক মেহেরুল্লাহ বলেন, “রপ্তানির আগে অনুমতি নিতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে, কিন্তু পরে অনেকেই একটি মাছও রপ্তানি করতে পারেন না। তারাও আবার পরের বছর অনুমতি পান—এতে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে।”
দেশে দাম বাড়ছে, রপ্তানিতে আগ্রহ কমছে/
স্থানীয় বাজারে ইলিশের দামের ঊর্ধ্বগতিও রপ্তানিতে অনীহা তৈরি করেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোলের রপ্তানিকারক বিশ্বাস ট্রেডার্সের মালিক নুরুল আমিন বিশ্বাস বলেন, “রপ্তানির দরের চেয়ে দেশের বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি। ভারতের বাজারেও নিজেদের ইলিশ থাকায় তারা তেমন আগ্রহ দেখায়নি। এছাড়া রপ্তানির সময়সীমা কম থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি।”
মৎস্য ক্রেতা আজিজুর রহমানের ভাষায়, “ভারতে রপ্তানির সময় দেশে ইলিশের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। রপ্তানি বন্ধ থাকলে দেশের বাজারে দাম কমতে পারে।”
বেনাপোল বন্দরের মৎস্য নিয়ন্ত্রণ ও মান নির্ণয় কেন্দ্রের পরিদর্শক আসাওয়াদুল ইসলাম জানান, “৫ অক্টোবর ছিল ইলিশ রপ্তানির শেষদিন। এবার বেনাপোল দিয়ে ১০৬ টন ৩৪ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল এক কেজি বা তার বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিকেজির সর্বনিম্ন রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২ ডলার ৫০ সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৫৩৫ টাকা।”