November 23, 2024, 1:03 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদন/
বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের এক উজ্জলতম নক্ষত্রের নাম আজাদ রহমান। দীর্ঘ এক পথচলা সঙ্গীতের ভুবনে। অনেক কাজ করেছেন। অনেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন এ জগৎটাকে। তাকে বলা হয় বাংলাদেশের খেয়াল গানের গুরু। এ ধারাটিকে জনপ্রিয় করার পেছনে আজাদ রহমানের অবদান সবচেয়ে বেশি।
একটি গানই তাকে অমরতা দেবে। এ বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিনই সেই গানটির প্রাসঙ্গিকতা রয়ে যাবে। গানটি হলোজন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’।
চলচ্চিত্রে সংগীত শিল্পী হিসেবে তিনি একবার, সংগীত পরিচালক হিসেবে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
আজাদ রহমানের জন্ম ১৯৪৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায়। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি কীর্তন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের পাশাপাশি খেয়াল, টপ্পার চর্চা করেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন আজাদ রহমান।
১৯৬৩ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে কলকাতার জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা ‘মিস প্রিয়ংবদা’র সংগীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে চল”িচত্রের গানে তার পথচলা শুর“। সেই ছবিতে তার সুরে কণ্ঠ দেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখার্জি ও প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৬৪ সালে কলকাতা দাঙ্গার পর আজাদ রহমান ঢাকায় চলে আসেন। তখনকার রেডিও পাকিস্তানে গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি ছায়ানটে উ”চাঙ্গ সংগীত শেখাতে শুরু করেন।
১৯৭০ সালে গীতিকার নয়ীম গহর রচিত ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’-এর মত কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানেরও সুর করেছেন আজাদ রহমান। মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণাদায়ী জাগরণী গানগুলির মধ্যে এই সঙ্গীতটি অন্যতম।
১৯৭৭ সালে ‘যাদুর বাঁশি’ চল”িচত্রের জন্য এবং ১৯৯৩ সালে ‘চাঁদাবাজ’ চল”িচত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চল”িচত্র পুরস্কার পান। ‘চাঁদাবাজ’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী যুগের জনপ্রিয় অসংখ্য গানের সুরকার ও রচয়িতা তিনি। ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি’সহ বহু গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। এসব গানের কোনটির সুরকার তিনি, কোনটির সঙ্গীত পরিচালক।
রাজ্জাক পরিচালিত প্রথম ছবি ‘অনন্ত প্রেম’-এ ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’ বিখ্যাত গানটি বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা এই গানে আজাদ রহমানের সুরে গেয়েছেন খুরশিদ আলম ও সাবিনা ইয়াসমিন।
আজাদ রহমান সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান। পাশাপাশি তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও খেয়াল গানের চর্চা করতেন। তাকে বাংলাদেশের খেয়াল গানের জনকও বলা হয়।
বাংলা একাডেমি থেকে দুই খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা সঙ্গীত বিষয়ক বই ‘বাংলা খেয়াল’। দেশের চল”িচত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্যও ছিলেন। ১৯৭৭ সালে ‘যাদুর বাঁশি’ চলচ্চিত্রের জন্য এবং ১৯৯৩ সালে ‘চাঁদাবাজ’চল”িচত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চল”িচত্র পুরস্কার পান। ‘চাঁদাবাজ’চল”িচত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবেও জাতীয় চল”িচত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
Leave a Reply