November 14, 2024, 12:00 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক: একমাত্র রাষ্টীয়্র-পতাকাবাহী এ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কো (বাংলাদেশ) লিমিটেড দেশের এই চলমান ক্রান্তিকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করে উপার্জনের আরও একটি নতুন জানালা খুলে দিয়েছে। আর এটা ঘটেছে এমনই সময়ে যখন দেশ অচল ; সকল কলকারকানা বন্ধ ; বন্ধ প্রায় সকল আয়-রোজগার।
হিসেব মতে ২৪ মার্চ থেকে পুরোদমে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত “কেরু ২৪ হাজার লিটার স্যানিটাইজার উৎপাদন করেছে যা থেকে কোম্পানীটি আয় করেছে ৬০ লাখ টাকা।
এটি চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থিত একটি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি চিনি কল। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি গতানুগতিকভাবে চিনি ও ডিষ্টিলারী উৎপাদনকেই এটি মুখ্য হিসেবে নিয়ে আসে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়াত্ত¡ করে। বৃহদায়তন শিল্প-কমপ্লেক্সটি এছাড়াও বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সারকারখানার সমন্বয়ে গঠিত। এর ভুমির পরিমান ৩ হাজার ৫৭২ একর। যার ২ হাজার ৪৫০ একর কৃষিজমি।
আখ থেকে চিনি বের করে নেয়ার পর যে উপজাত-দ্রব্য (চিটাগুড়, ব্যাগাস ও প্রেসমাড) পাওয়া যায় তা থেকেও বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়। উপজাত-দ্রব্য হতে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছে দেশি মদ, বিদেশি মদ, ভিনেগার , স্পিরিট ও জৈব সার।
কেরু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এটি সাধারনত বিলেতি প্রযুক্তিতে দেশী-বিদেশী উপকরণ ব্যবহার করে ৮ ধরনের এ্যালকোহল উৎপাদন করে থাকে।
এটিই দেশের ১৪টি চিনি কারখানার মধ্যে একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরা প্রাণ-ঘাতি কভিড-১৯ বাংলাদেশেও আঘাত করার পর কারখানা কতৃপক্ষ তার আরেকটি নতুন সক্ষমতা দেখানোর জায়গা পায়। সেটি হলো তার উৎপাদিত ইথানল থেকে হ্যান্ড স্যানটাইজার উৎপাদন।
আর এই চিন্তার নির্মাতা হলেন কারখানার বর্তমান এমডি জাহিদ আলী আনসারী।
তিনি বলেন যখন দেশে হ্যান্ড স্যানটাইজার, যেটি করোনা রোগ প্রতিরোধের অতি সাধারন একটি উপদান দেশে সরবরাহ কঠিন হয়ে উঠছিল তখন তিনি এটি চিন্তা করেন ঠিক দেশের প্রয়োজনে।
তিনি বলেন তার বিশ্বাস ছিল যে উচ্চমান এবং কম দামের কারণে জনগণ হ্যান্ড স্যানটাইজারটি গ্রহন করবে।
তিনি পরীক্ষামুলক উৎপাদনে যান ২৩ শে মার্চ এবং পুরোদমে উৎপাদনে যান ২৪ মার্চ থেকে।
এমডির তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন গড়ে ১০০০-১৫০০ লিটার তরল উৎপাদিত হচ্ছে। এটি দুটি ধরণের লেবেলে তৈরি হচ্ছে — ছোট আকারের বোতল হ্যান্ড স্যানটাইজারএবং বাল্কস।
ছোট বোতলগুলিতে ১০০ মিলি দামের পাইকারি দাম হিসাবে স্থির করা হয়েছে ৫০ টাকা খুচরা বিক্রেতারা এটি ৬০ টাকায় বিক্রি করছে।
“এটি বাজারের যে কোনও স্যানিটাইজারের তুলনায় কম দাম।” এমডি আনসারী জানান।
বাল্কস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্রয় করে সেখান থেকে স্যানিটাইজার বোতল তৈরি করছে এবং তাদের মতো করে সরবরাহ করছে।
কোম্পানীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে সংস্থা কর্তৃক হ্যান্ড স্যানিটাইজার উত্পাদন করার তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে স্যানিটাইজারের চলমান চাহিদা ও সরবরাহ সঙ্কট অনেকটাই নাগালে এসছে। এদিকে, এ স্যানিটাইজারটি ভাল মানের এবং কম দামের কারণে বিভিন্ন মহল দ্বারা মূল্যায়িত হচ্ছে।
“আমরা দেশজুড়ে প্রতিদিনই বিপুল অর্ডার তালিকাভুক্ত করেছি,” বলেছেন কোম্পানীর সহকারী পরিচালক সাহাবুদ্দিন।
বিভিন্ন মন্ত্রক, আইসিসিডিআরবি, রেড ক্রিসেন্ট, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী অফিস, হাসপাতাল, সেনানিবাস ইত্যাদি এর ক্রেতা ।
চুয়াডাঙ্গা এবং সংলগ্ন জেলাগুলির মেডিকেল স্টোরগুলি এই স্যানিটাইজার বিক্রি করছে।
কথা বললে এমডি জাহিদ আলী আনসারী এই সংবাদদাতাকে ফোনে জানান যে সারাদেশে স্যানিটাইজারটি ছড়িয়ে দেয়ার বিস্তৃত পরিকল্পনা তার রয়েছে। ধীরে ধীরে তিনি সেটি করছেন।
কুষ্টিয় জেলা প্রশাসন বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনে এবং কয়েকটি হাসপাতালে স্যানিটাইজারের ৩০০ বিতরণ করেছে।
কুষ্টিয়ার নেজারাত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, “এটি মানের দিক থেকে ভাল।
“কেরু কোম্পানীর এমডি জাহিদ আলী আনসারী বলেছেন, তাঁর পরিকল্পনা পণ্য বিক্রয় বাড়াানো।
“কেরুর অধীনে ১৩ টি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে, আমরা এগুলিকে স্যানিটাইজার বিক্রি করতে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করি,” তিনি বলেছিলেন।
এই সংবাদদাতা টেলিফোনে শিল্প মন্ত্রনালয়ের সচিব মো: আবদুল হালিমের সাথে কথা বলেন। তিনি এই উদ্যোগের যথাযথ প্রশংসা করেন।
কেরু আনসারী বলেন, “তিনি সরকারকে জনগণের কাছে এই এই পণ্য বিতরণের জন্য পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।
Leave a Reply