December 6, 2024, 10:51 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া ডেস্ক/
বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চির প্রস্থান নিলেন ফুটবল মহানায়ক দিয়াগো ম্যারাডোনা। বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক। ফেরাতে পারলেন না চিকিৎসকেরা। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে) এই খবর ব্রেক করে আর্জেন্টাইন গণমাথ্যম ক্লারিন। এরপরই ছড়িয়ে পড়ে আর্জেন্টিনার মিডিয়াগুলোতে। এরপর সারাবিশ্বের মিডিয়ায়।
থেমে গেল যত আলোচনা-সমালোচনা। থেকে গেল শতাব্দীর সেরা গোল, ‘হ্যান্ড অফ গড’, অসংখ্য মন মাতানো ড্রিবল।
মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় অস্ত্রোপচারের পর গত ১১ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। ডাক্তাররা তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন।
শুরুটা হয়েছিল ছেলেবেলা থেকেই মারাদোনার। জন্ম ১৯৬০এ। বুয়েনস আয়ার্সের বস্তি ভিলা ফিয়োরিতোতে খেলার সময় মারাদোনার ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভার প্রথমে নজরে এসেছিল। তখন মারাদোনার বয়স মাত্রা আট। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে খেলে নিজের প্রতিভার লালন-পালন করতেন। ট্রেনার ফ্রান্সিসকো কর্নেজোর নজরে পড়ার পর আর্জেন্তিনোস জুনিয়র ইউথ দলে সুযোগ পান মারাদোনা। তাঁর নেতৃত্বে টানা ১৩৬ টি ম্যাচ অপরাজিত ছিল সেই দল।
সেই উত্থান। ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে ১৬ বছরে পা দেওয়ার ১০ দিন আগে আর্জেন্তিনার শীর্ষ পর্যায়ের লিগে অভিষেক হয়েছিল মারাদোনার। ১৯৭৮ সাল থেকে টানা তিন বছর লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। চারিদিকে তখন মারাদোনা-মারাদোনা রব। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় তাঁকে ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের দলে রাখা হয়নি। ১৯৮১ সালে বোকা জুনিয়র্সে পাড়ি দেন মারাদোনা।
১৯৮২ সাল থেকে টানা ১১ বছর ইউরোগে খেলেন। বার্সেলোনা দিয়ে শুরু করেছিলেন ইউরোপ-যাত্রা। মারাদোনার দেখানো পথে ইউরোপে আসতে থাকেন লাতিন আমেরিকার ফুটবলাররা। সেই সময় রেকর্ড অর্থে বার্সা এবং নাপোলিতে সই করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে জিতেছিলেন ফুটবল বিশ্বকাপ। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে তুলেছিলেন। আট বছর নাপোলিতে কাটানোর সময় সাফল্যের শিখরে উঠেছিলেন মারাদোনা। শিখরে পৌঁছেছিল নাপোলিও। যদিও সেই নাপোলিতে শেষ লগ্নেই কোকেন ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ১৫ মাস নিষেধাজ্ঞার পর ১৯৯২ সালে স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়াতে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে মারাদোনার জীবনে আরও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁকে জেলের সাজাও শোনানো হয়েছিল। যদিও তা সেই জেলে কাটাতে হয়নি তাঁকে। শেষপর্যন্ত ১৯৯৭ সালে বোকায় নিজের পেশাদারি ফুটবল জীবনে ইতি টানেন। ৬৭৯ ম্যাচে ৩৪৬ গোল ক্লাব ও আন্তর্জাতিক গোল করেছিলেন।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। সেবার জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয় তাকে। এছাড়া ইউরোপিয়ান ফুটবল ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির অবিসংবাদিত কিংবদন্তি ছিলেন তিনি।
দুই সপ্তাহ আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হলেও, ডাক্তাররা বলেছিলেন আশাতীত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। যদিও মাদকাসক্তির কারণে তাকে বাড়িতে নয়, পাঠানো হয়েছিল বুয়েন্স আয়ার্সের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে। এরপর তাকে নেয়া হয় নিজের বাড়ি তিগ্রেতে। সেখানেই আজ হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই কিংবদন্তি।
মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই পুরো ফুটবল বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। অগণিত ভক্ত-সমর্থক সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যারাডোনার ছবি দিয়ে শোক প্রকাশ করতে শুরু করেন।
কিংবদন্তীর প্রয়াণে যেন নিজের সেরা প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছেন পেলে। তাঁর সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতেও তা যেন বোঝা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই, আমরা একদিন আকাশে একসঙ্গে ফুটবল খেলব।’ অপর এক বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার জোহান ক্রুয়েফ বলেন, ‘শান্তিতে ঘুমাও দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। তুমি চিরন্তন। মারাদোনার প্রয়াণে ‘বন্ধু’-কে হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। একটি টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘আজ আমি আমার এক বন্ধুকে বিদায় জানাচ্ছি এবং বিশ্ব একজন চিরন্তন প্রতিভাকে বিদায় জানাচ্ছে। সর্বকালের অন্যতম সেরা। অসামান্য জাদুকর। খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেন উনি। কিন্তু রেখে গেলেন সীমাহীন উত্তরাধিকার। এই শূন্যস্থান কখনও পূরণ হবে না। অসামান্য মানুষ, শান্তিতে ঘুমান। আপনাকে কখনও ভালো যাবে না।’ গভীরভাবে শোকপ্রকাশ করেছেন জাতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়া। তিনি বলেন, ‘দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনাৃ আপনি সর্বদা আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’
Leave a Reply