August 3, 2025, 1:00 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৭ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করল বিএসএফ কার্যকর/ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দেশে প্রতি চারজনের একজন বহুমাত্রিক দরিদ্র, শিশুদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বছরে ১০-১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন: মানুষের প্রকৃত আয় এখনো ঋণাত্মক হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স/১ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে যশোরে মামলা গোপন তৎপরতার আশঙ্কা: ১১ দিনের ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করেছে পুলিশ বিনিয়োগে স্থবিরতা, ভোগ কমেছে জুনে এলসি খোলা ৫ বছরে সর্বনিম্নে কুষ্টিয়ায় বিএনপি কর্মী হত্যা মামলায় সাবেক এসপি তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার, চলবে পূর্বের মামলা

মেরামতের প্রাক্কলনই হয়নি, বর্ষায় হরিপুর সেতুর বাঁধের ধস নিয়ে চিন্তিত এলাকাবাসী

জাহিদুজ্জামান/ 
ছয়মাস আগে শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধে বড় ধরণের ধস দেখা দিলেও এখনো মেরামত করা হয়নি। কয়েক দফায় পরিদর্শন এবং চিঠি চালাচালি হলেও এখনো মেরামতের জন্য প্রাথমিক প্রাক্কলনই (ইস্টিমেট) তেরি করা হয়নি। এদিকে সামনে মে-জুন মাসে নদীতে পানি বাড়লে এই ধসের জায়গা থেকে পুরো প্রতিরক্ষা বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তারা চিন্তিত ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষর স্বপ্নের শেখ রাসেল সেতু নিয়েও। সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এলজিইডি বলছে, সার্ভে চলছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক প্রাক্কলন প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হবে।
গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে ধস শুরু হয় গড়াই নদীর ওপর শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর ১০০ মিটার ভাটিতে প্রতিরক্ষা বাঁধে। একে একে আরসিসি ব্লক ধসে যেতে থাকে নদীতে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং এলজিইডি এর কারণ হিসেবে সেসময় ধরেছিল কাছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের ড্রেজার কাজ করায় পানির নিচে ঘুর্ণি (স্কাউরিং) সৃষ্টি হওয়াকে। দিনে দিনে ধস বড় হতে থাকে, উজানে-ভাটিতে দুই পাশেই একের পর এক ব্লক নদীগর্ভে চলে যায়। গড়াই নদীতে পানি নেমে গেলে বিশাল ধস ফুটে ওঠে। সবমিলিয়ে আড়াই হাজারেরও বেশি ব্লক (১ফুট বাই ১ফুট) চলে গেছে নদী গর্ভে। আর শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর আরো কাছে চলে এসেছে। সেতু থেকে এটি এখন ৯০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। বাঁধ থেকে নদীতে নেমে গোছল করার সিঁড়ির পুরোটাই ধসে গেছে।
ধসে যাওয়া জায়গা পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়ার বেসরকারি ফার্ম পারফেক্ট হোম ডিজাইন এন্ড কনসালটেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এম এ হাফিজ অভি। সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে তিনি বলেন, ধসটি এখন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। বড় ধরণের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে স্থানীয়রা ময়লা ফেলা শুরু করেছে। ফাটল বাঁধের ওপর রাস্তায় চলে এসেছে। এটা ক্রমেই শেখ রাসেল সেতুর দিকেও আগাচ্ছে। সেতু থেকে এখন ৯০ মিটার মতো দূরে আছে বলেন প্রকৌশলী অভি। তিনি বলেন, ব্লক একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত। এগুলোর বন্ধন ছুটে গেছে। সামনে ভারি বর্ষণ হলে ধস সেতুর কাছে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। এতে বাঁধ এবং সেতুর বড় ধরণের বিপর্যয় হতে পারে। প্রকৌশলী এম এ হাফিজ অভি মনে করেন, মেরামত কাজ শুরু হতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন- সামনের বর্ষার মধ্যে কর্তৃপক্ষ কাজ করবে কীভাবে? তাই এখনি কাজ শুরু করা উচিৎ বলেন এই প্রকৌশলী।
কুষ্টিয়া পৌরসভা ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলের বাড়ি হরিপুরে। প্রতিদিনই তাকে এই সেতুর ওপর দিয়ে যেতে হয়। জাহিদুজ্জামানকে তিনি বলেন, সরকার শতকোটি টাকা দিয়ে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করেছে। এখন সামান্য কারণে তা নষ্ট হয়ে যাক তা কারোরই কাম্য নয়। এই ধস শুরুতেই মেরামত করতে হবে না হলে বড় আকার ধারণ করবে। আগামী বর্ষায় আধা কিলোমিটার এলাকজুড়ে ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেন। শুরুতে কাজ করলে টাকা খরচও কম হবে, মানুষের ভোগান্তিও কমবে। প্রতিরক্ষা বাধের এই ধস উজানে হলেও সেতুর দিকে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
ঠিক যেখানে ধস হয়ে তার কাছেই গড়াই নদী পাড়ের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, যখন ধস শুরু হয় তখন আমরা এখানে দাঁড়ানো। এই বরাবর নদীতে ড্রেজার মেশিন দাঁড় করিয়ে পাইপ বাধা হচ্ছিল। সেসময় পানির চাপে নিচে ঢুকে প্রথমে ব্লক ফেটে যায়। এরপর দেবে ধসে যেতে থাকে আমরা তখন ওই ড্রেজারকে চিৎকার করে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলি। নাজিম বলেন, আমি নদীপাড়ে বড় হয়েছি, এর গতি প্রকৃতি বুঝি। এই ধস কতো বড় হয়েছে দেখছেন তো। সামনের বর্ষার আগে মজবুত করে মেরামত করা না হলে পানি ঢুকলে এই বাধ ঠেকাতে পারবে না। সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে টেলিফোনে নাজিম আরো বলেন, এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পানি এই ধসের নরম বালির মধ্যে ঢুকে পাক (ঘুর্ণি) দিলেই পুরো বাধই চলে যাবে। সামনে পিছনে দুই দিকেই ভাঙতে পারে। ব্রিজের ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন নাজিম।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ হোসেন সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে হাত দিয়ে দেখিয়ে দেন ধসে যাওয়া ব্লকের নিচে কোন জিও ব্যাগ নেই। শুধু বালুর ওপর একটি সিনথেটিক অ্যাপ্রোন দিয়ে ব্লক বসানো হয়। এ কারণেই কয়েক বছরের মধ্যেই এই বাঁধ ধসে গেছে বলেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. লিটন বলেন, ধস মেরামতের ব্যাপারে এখনো কোন সুরাহা হয়নি। কোন প্রতিশ্রুতিও পাইনি আমরা। দ্রুত মেরামত না করলে সামনের বর্ষায় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা তারও। বাঁধ ভেঙ্গে গেলে হরিপুরের বাড়ি-ঘর সব নদীতে চলে যাবে, জাহিদুজ্জামানকে বলেন লিটন।
এখানকার গুলজার হোসেন বলেন, কিছু লোক কয়েকবার আসছিলো, দেখে, মাপ-জোক করে চলে যায়। মেরামতের কোন উদোগ দেখিনি।
মনু ম-ল জানান, দ্রুত মেরামত করা দরকার। না হলে আগামী মে-জুন মাসে নদীতে পানি ঢুকলেই ¯্রােতে এই বাধ মাথায় করে নিয়ে যাবে।
কুষ্টিয়া শহর লাগোয়া গড়াই নদীর ওপর শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে এই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর- এলজিইডি।

এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যাসোসিয়েট এ সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬০৪ মিটার, প্রস্থ ৬ দশমিক ১ মিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়।

এই সেতু হরিপুর জনপদের সঙ্গে কুষ্টিয়া শহরকে সংযুক্ত করেছে। স্থানীয় সমাজকর্মী ও সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজু বলেন, এই সেতুর সঙ্গে যুক্ত ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষের ভাগ্য। তাই স্বপ্নের এই সেতু রক্ষায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি তোলেন তিনি।
এলজিইডির কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান ম-ল বলেছেন, আমরা কাজ করছি। গত সপ্তাহেও আমাদের সার্ভে দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জাহিদুজ্জামানকে তিনি বলেন, পানি নেমে যাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কারণ এর আগে ঢাকা অফিস থেকে ডিজাইন সেলের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম এর আগে দেখে গেছেন। সেসময় নদীতে পানি থাকায় তিনি বলে যান- পানি একেবারে নেমে গেলে মেরামত প্রকল্পের প্রাক্কলন (ইস্টিমেট) করে পাঠাতে। আমরা এখন সেই সার্ভে করছি। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রাক্কলন পাঠাতে পারবো- সাংবাদিককে বলেন নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান ম-ল। তিনি বলেন, প্রাক্কলন পেলে আবার ডিজাইন সেল থেকে বিশেষজ্ঞ এসে দেখে তা অনুমোদন করবে। এতে দেরী হয়ে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে যবে কি-না? সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানের এ প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান বলেন, বর্ষার আগেই যাতে সব কাজ শেষ করা যায় সেই চেষ্টাই চলছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net