August 17, 2025, 10:22 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
কুষ্টিয়া শাহিন ক্যাডেট স্কুল/ ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার কুষ্টিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল রেসিং খেলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই কিশোরের মৃত্যু ঝিনাইদহে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে ১৭ জন আটক রাজশাহীতে একই পরিবারের চারজনের রহস্যজনক মৃত্যু র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেপ্তার ইসরায়েলের জন্য লুকিয়ে অস্ত্র আনছিল সৌদি জাহাজ, ইতালিতে আটক ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানিতে বড় ধাক্কা ধানসহ কয়েকটি খাদ্যশস্য উৎপাদনে রেকর্ডের পথে বিশ্ব ঢাকার চেয়ে কম দামে কলকাতায় ইলিশ, যাচ্ছে কোথা থেকে ? লুট হওয়া ১,৩৬৬ পুলিশি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি, নির্বাচনের আগে বাড়ছে শঙ্কা

এবারও নিরব কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ও টেগরলজ

দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
প্রতিবছর এই দিনে সরব হয়ে উঠে কুষ্টিয়ার সংস্কৃতি অঙ্গন ; ভোরের আলো ফুটতেই রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য কুঠিবাড়ি, টেগরলজ মুখরিত হয়ে ওঠে রবীন্দ্রভক্ত মানুষদের আনাগোনায়। রবীন্দ্র সুরের মূর্ছনায়, কবিতা, গানে নাটকে দিনভর বা তারও বেশী কয়েকদিন ভরপুর থাকে এ দুটি জায়গা। এই রবীন্দ্র চর্চা এই জেলার মানুষকেও দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতা ; এক অনন্য রুচিবোধ; এক অনন্য সাংস্কৃতিক মমন-মাত্রা। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত এই কুষ্টিয়া এজন্য সবার কাছে অন্যরকম মর্যাদার আসনে সমাদৃত।
কিন্তু গত বছরের মতো এবারও সবই বয়ে যাচ্ছে এক নির্মম শুনশান নিরবতার মধ্য দিয়ে। সকাল থেকে শিলাইদহের কুঠিবাড়ি বা শহরের কোলে টেগরলজে কোন কলরব নেই; নেই মানুষের পদচারনা, নেই সুরের মূর্ছনা। বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধী করোনার করাল গ্রাস যে বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে তারই প্রভাবে এই বিচ্ছিন্নতা। অথচ এই রবীন্দ্রনাথই মানুষে মানুষে মিলনের কথা বলেছেন, বলেছেন মিলিত প্রাণের কথা ; মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতার কথা নয়।
রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে সরকারী অনুষ্ঠান হয়। অন্যদিকে শহরের টেগরলজে আয়োজন থাকে কুষ্টিয়া পৌরসভার।
কুঠিবাড়ি/
কুষ্টিয়ার শিলাইদহের এই কুঠিবাড়ি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে অশেষ প্রভাব ফেলে আছে। এই বাড়িতে বসেই রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলি’র একটি বড় অংশসহ বহু কালজয়ী লেখা লিখেছিলেন। ১৮০৭ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অনচলের জমিদারী লাভ করেন। ১৮৮৯ থেকে ১৯১৬ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ অনিয়মিত বিরতিতে এই বাড়িতে আসতেন। কখনো একা। কখনো পরিবার নিয়ে এবং জমিদারীর কাজ পরিচালনা করতেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত ঐতিহাসিক বাড়িটিই রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি বা শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি নামে পরিচিত। কুষ্টিয়া শহর থেকে দুরত্ব ১৫ কিমি। প্রায় ৩৩ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত কুঠিবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে আড়াই বিঘা জমির উপর। ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে ১৮৬২ সালে নির্মিত এই বাড়িটির নিচতলায় ৯টি, দোতলায় ৭টি, তিনতলায় ২টি কক্ষসহ মোট ১৮টি কক্ষে ৮৩টি জানালা ও ১৮টি দরজা রয়েছে। কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত আসবাবপত্র আছে। আছে সেই সময়ের দুর্লভ ছবি, পালকি, পালঙ্ক। রয়েছে একটি পুকুর, কবি যে পুকুরপাড়ে বসে কবিতা লিখতেন, সেখানে আছে সেই সময়ের লাগানো বকুলগাছ। এ পুকুরেই রয়েছে রবিঠাকুর যে নৌকায় চড়ে পদ্মায় ঘুরতেন, সেই নৌকার একটি রেপ্লিকা।
বাড়িটি ১৯৬১ সাল থেকে সরকারের প্রতœতাত্বিক বিভাগের অধীনে সংরক্ষিত।
সম্প্রতি ভারত সরকারের সহায়তায় ১ একর বাগানের মাঝে দুটি ভবন নির্মাণ হয়েছে যেখানে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, একটি গ্রন্থাগার, একটি সংগ্রহশালা, পর্যটকদের জন্য একটি ৪০ কক্ষের থাকার ব্যবস্থা এবং একটি দ্বিতল ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। ভারতের প্রধানমস্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গতমাসে বাংলাদেশে এসে এগুলো উদ্ধোধন করেন।
গবেষকরা আরো বলছেন ‘গীতাঞ্জলি’র বড় অংশ অনুবাদ ছাড়াও এখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, ক্ষণিকা ও চৈতালির অসংখ্য কবিতা। এই এলাকায় রবীন্দ্রনাথই প্রথম প্রজাদের কল্যাণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কৃষি সেচ, দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রও স্থাপন তার অন্যতম।
টেগর লজ/
কুষ্টিয়া শহরের পূর্বপ্রান্তে বড় রেলস্টশনের বিপরীত দিকে রয়েছে এই ঐতিহাসিক ‘টেগোর লজ’ ভবন। ঠাকুর জমিদারদের শহরের কাজকর্ম দেখাশুনা, ব্যবসা পরিচালনা ইত্যাদির জন্য দ্বিতলবিশিষ্ট বাড়িটি নির্মিত হয়েছিল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ অনেকবার এই বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে অবস্থান করেছেন। কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে ভবনটি সংস্কার ও সজ্জিত করে দর্শনীয় করে তোলা হয়েছে। রয়েছে বন্ধুরাষ্ট্র ভারত কর্তৃক প্রদত্ত রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ ভাস্কর্য। এখানে বিভিন্ন রবীন্দ্রতিথিকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে।
রবী›ন্দ্রতিথি তথা জন্ম ও প্রয়াণ দিবসকে কেন্দ্র করে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বড় অংশের কারিগরের ভুমিকা থাকে রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ,কুষ্টিয়ার কলাকূশলীরা। তারাও বিগত বছরের মতো নিরব মনোকষ্টে এই দিনটি বাহিত করছেন।
রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ,কুষ্টিয়ার সভাপতি অশোক সাহা জানালেন করোনার কারনে বড় আয়োজন থমকে গেলেও তারা নিরব থাকেননি। তাদের কিছু আয়োজন রয়েছে। সকালেই রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ,কুষ্টিয়ার কর্মীরা টেগরলজে যেয়ে রবীন্দ্র আবক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, কবিতা পাঠ করেছেন, সমবেত গান গেয়ে কবিগুরুকে সম্মান জানিয়ে এসেছেন।
কুষ্টিয়া জেলা কারচারাল অফিসার সুজন রহমান জানান জেলা শিল্পকলার উদ্যোগে তারা ডিজিটাল যুগের সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাদের শিল্পীদের নিয়ে অনলাইনে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান করছেন।  শিল্পীরা ঘরে বসেই গান করছেন।
সারাদেশে ও বিদেশে অসংখ্য রবীন্দ্র অনুরাগীরা তা শুনছেন।

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net