October 31, 2025, 8:42 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
ঝিনাইদহে মাঠ থেকে কৃষকের মরদেহ উদ্ধার বাংলাদেশ আবারও ভারতকে চিঠি দিচ্ছে ট্রেন চালু করার জন্য কুষ্টিয়ায় ছয় হত্যা মামলা/ হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের তারিখ ২ নভেম্বর নির্বাচনের দিন বা তার আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের যশোরে তরুণদের মধ্যে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা সন্ধ্যা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: স্বাভাবিক হয়েছে বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য আন্দোলনের মুখে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত দশ বছরে আটটি গুদাম আগুনের ঘটনা/ বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারীদের উদ্বেগ কুষ্টিয়ায় ভাইয়ের হাতে সৎ ভাই হত্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২৭ মার্চ

আজ মুক্ত দিবস/মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়াই ছিল স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয়ের জেলা

ড. আমানুর আমান (কুষ্টিয়া, দ্য টুরিজম হাব, গ্রন্থ থেকে অনুদিত)/
দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়ার নামটি বারবার উচ্চারিত হবে এই জেলার অগ্রগণ্য ভুমিকার কারনে। এই জেলাকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার, স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয়ের জেলা।
কুষ্টিয়ার মাটিতেই ১৯৭১ সালের ০৩ মার্চ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ঐ দিন কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় লাল সবুজের ছয়টি তারা খচিত একটি পতাকা স্বাধীন বাংলার পতাকা হিসাবে উড়িয়ে দেয়া হয় ; পাঠ করা হয় স্বাধীন বাংলারইশতেহার। ২৩শে মার্চ কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে পূনরায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
২৫ মার্চ পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরু হওয়ার পর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শুরু হওয়া প্রতিরোধ যুদ্ধেও কুষ্টিয়ার ভুমিকা ছিল অনন্য। ২৫শে মার্চ রাতে যশোর সেনানিবাস থেকে ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানী পাকি সৈন্য কুষ্টিয়ায় প্রবেশ করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। থেমে থাকেনি সেদিন কুষ্টিয়ার স্বাধীনতাকামী মানুষ। প্রতিরোধ যুদ্ধের অংশ হিসেবে সড়কে সড়কে বেড়িকেড দিয়ে লাঠি-সড়কি, ঢাল- তলোয়ার নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল কুষ্টিয়া শহরে।২৭শে মার্চ কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের সামনে পাক বাহিনীর গাড়ি বহরে হাত বোমা নিক্ষেপের প্রাক্কালে পাকিস্থানী সৈন্যের গুলিতে শহীদ হন রনি রহমান। তিনিই ছিলেন কুষ্টিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ।
মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়া ছিল ৮ নং সেক্টরের অধীনে। যশোর, কুষ্টিয়া জেলা, দৌলতপুর, সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা এবং ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে এই সেক্টর গঠিত। সাতটি সাব-সেক্টর নিয়ে গঠিত এই সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল কল্যাণীতে। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (পরবর্তীকালে লে. কর্নেল ) এবং পরে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এম.এ মঞ্জুর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।আবু ওসমান চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর পদে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। পাকি সরকারের অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে ২৬ মার্চ তিনি কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙার ঘাঁটিতে পৌঁছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে সসৈন্য যোগ দেন এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। সেখানে পৌঁছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, পদ্মা-মেঘনার পশ্চিমাঞ্চলকে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গন নামকরণ করে নিজেকে অধিনায়ক ঘোষণা করেন। ৪র্থ ইপিআর সদর দফতরে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে লাল সূর্যের মাঝে মানচিত্রখচিত বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সালাম প্রদান করেন।
কুষ্টিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দেয়া নকশার উপর ভিত্তি মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরী কুষ্টিয়ার মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত জয় বাংলা বাহিনী নিয়ে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সাথে প্রথম সন্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন ৩০ মার্চ।
১ এপ্রিল বাংলাদেশের মধ্যে কুষ্টিয়া প্রথম শক্রমুক্ত হয়।বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র কুষ্টিয়া জেলা ১৬ দিন শত্রুমুক্ত থাকে। আর এই ১৬াট দিনই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের রক্ত¯œাত পথে এক সনজীবনির মতো। স্বাধীনতার মহানায়ক বাঙালীর সকল ত্যাগের প্রধান অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্থানের অন্ধকার কারাগারে বন্দী, যখন পাকিস্থান বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিশে^র কাছে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে দেখাতে মরিয়া তখন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অন্য মহান নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশ ভারত থেকে একটি স্বাধীনতার ইশতেহার তৈরি করেন। সেই ইশতেহার ঘোষণার জন্য বাংলাদেশের ভুমিতে খুব প্রয়োজন ছিল একটি মুক্তাঞ্চল। প্রতিরোধ যুদ্ধে ‘স্বাধীন’ হওয়া সেদিনের কুষ্টিয়াঞ্চল ছিল সেই ভুমি ; কুষ্টিয়ার অন্যতম মহকুমা মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা)। সেখানে দাঁড়িয়েই সেদিন ঘোষিত হয় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। যে সরকারের অধীনে পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।
বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা ৮ নং সেকটরের অধীন ছিল। মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ৮ নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সবর্শেষ ১০ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে চৌড়হাস বি টি সি তামাক ক্রয় কেন্দ্রের কাছে জিকে ক্যানেলের ব্রীজের উত্তর পাশে মেইন রাস্তার পাক সৈন্যের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী-মিত্র বাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এখানেও মিত্র বাহিনীর ৭০ জন শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার সমস্ত এলাকা স্বাধীন ও শত্রু মুক্ত হয়। ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহর, পোড়াদহ, মিরপুর, ভেড়ামারা এলাকা স্বাধীন শত্রুমুক্ত হয়। সেদিনের ধবংসলীলা কুষ্টিয়া শহরে আজও স্মৃতি বহন করে। এপ্রিল মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যমত্ম সর্বমোট ২২ টি ছোটবড় যুদ্ধ শেষে কুষ্টিয়া ১১ ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয়েছিল।
জীবিত থাকাকালীন সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী একটি পত্রিকা সাক্ষাতকারে বলেন কুষ্টিয়াই একমাত্র জেলা যেটা শত্রুমুক্ত হয় যুদ্ধের প্রথম এক সপ্তাহের মধ্যেই। এর ধারাবাহিকতায় আমরা মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের জন্য মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলতে এবং সেই এলাকা প্রস্তুত করতে পেরেছিলাম।”
এই ঘটনার পর পাকিস্থান সৈন্যরা কুষ্টিয়া অঞ্চলে আক্রমণ তীব্র করে এবং ফের কুষ্টিয়া দখল করে নেয়। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসে ছোট বড় প্রায় ২২টি যুদ্ধ এই অঞ্চলে সংঘটিত হয় এবং ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া চুড়ান্তভাবে মুক্ত হয়। তার পুর্বে ১ ডিসেম্বর মেহেরপুর ও ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল মুক্ত হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়াতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিহত হন বলে উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন তথ্যসুত্রে।
কুষ্টিয়ায় ১০ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তাঁদের মধ্যে বীর উত্তম ২ জন, বীর বিক্রম ১ জন ও বীর প্রতীক ৭ জন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

MonTueWedThuFriSatSun
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031 
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net